বিমার পোর্টফোলিও তৈরি করতে হলে নিখুঁত পরিকল্পনা এবং নিজের প্রয়োজন সম্পর্কে সার্বিক বোধ থাকা দরকার। সবার জীবনের ঝুঁকি এক নয়, কারণ আমাদের প্রত্যেকের সম্পদ এবং দায়-দায়িত্ব আলাদা।
এমনভাবে বিমা পোর্টফোলিও তৈরি করা উচিত যেন কোনও অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটলে আপনার আর্থিক অবস্থার ফাঁক-ফোকর বিমা দিয়ে ভরাট করা যায় এবং লক্ষ্যগুলো বদলাতে না হয়। কী করে করা যায় সেটা? আসুন দেখে নেওয়া যাক।
নিজের প্রয়োজনগুলো জানুন
বিমা পোর্টফোলিও নির্মাণ করার প্রথম ধাপ হল নিজের প্রয়োজন সম্বন্ধে ৩৬০ ডিগ্রি বা সার্বিক ধারণা তৈরি করা। এটা অনেকটা মুদির দোকানের বাজেট তৈরি করার মত। আপনার কী কী প্রয়োজন সেগুলো জানতে পারলে তবেই না আপনি বারে বারে বাজারে যাওয়া এড়াতে পারেন। একই কথা কিন্তু বিমা কেনার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
অধিকাংশ মানুষের প্রয়োজনগুলো মোটামুটি দু রকমের- জীবন বিমা আর সাধারণ বিমা। যদি জীবন বিমার প্রয়োজনে হয় আপনি একটা বিশুদ্ধ টার্ম প্ল্যান কিনতে পারেন, যা পলিসির মেয়াদের মধ্যে আপনার মৃত্যু হলে আপনার নমিনিকে থোক টাকা দেবে; নয়ত এমন বিমা প্রোডাক্ট কিনতে পারেন যা একইসঙ্গে সুরক্ষা এবং লগ্নির সুযোগ দেয়। অন্য দিকে সাধারণ বিমা আপনাকে বাড়ি, মোটরগাড়ি, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য সম্পদ-জনিত ক্ষতি পূরণ করার ব্যবস্থা করতে পারে। সহজ করে বললে, আপনার বিমা পোর্টফোলিও জীবন বিমা আর সাধারণ বিমা প্ল্যানের মিলিয়ে তৈরি হওয়া উচিত।
প্রয়োজনের পরিমাণ ঠিক করুন
একবার প্রয়োজনগুলো সম্পর্কে সার্বিক ধারণা তৈরি হয়ে গেলে পরের ধাপ হল প্রয়োজনের পরিমাণ ঠিক করা। মানে আপনি কভারেজ হিসাবে কতটা বিমা চান, সে জীবন বিমাই হোক আর সাধারণ বিমাই হোক। জীবন বিমার কভারেজ ঠিক করার সময় আর সব কিছুর সঙ্গে আপনার পরিবারের এখনকার খরচাপাতি এবং ভবিষ্যতের লক্ষ্যগুলোর হিসাব করতে হবে। সাধারণ বিমার ক্ষেত্রে হিসাব করে দেখুন কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে সম্পদগুলোর জন্য আপনাকে নিজের পকেট থেকে কত টাকা দিতে হতে পারে।
যেমন ধরুন, যদি কোনও শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়, তা হলে হাসপাতাল ভর্তি করার খরচ কত হতে পারে সেটা খুঁজে বের করুন এবং সেই অনুযায়ী কভারেজ নিন। চিকিতসার খরচ যেভাবে বাড়ছে তাতে কভারেজটার সঙ্গে এমন একটা টপ-আপ প্ল্যান নেওয়া উচিৎ যেটা মূল পলিসির সঙ্গে আরও কিছুটা বিমা কভারেজ যোগ করে।
একইভাবে আপনার যদি একটা সুপারবাইক বা দামি চার চাকার গাড়ি থাকে, তাহলে তা সারানোর খরচ বেশি হবে। সুতরাং আপনার বেশি কভারেজের পলিসি দরকার হবে, যাতে নিজের পকেট থেকে যে টাকা দিতে হবে তার পরিমাণ কম হয়।
বিমা প্রকল্পগুলো বুঝুন
বাজারে অনেক বিমা প্রকল্প রয়েছে। প্রত্যেকটার গঠন আলাদা এবং প্রত্যেকটাই আলাদা আলাদা প্রয়োজন মেটায়। একটা শক্তিশালী পোর্টফোলিও নির্মাণ করার জন্য প্রোডাক্টগুলোর উদ্দেশ্য এবং কীভাবে কাজ করে সে ব্যাপারে সম্যক ধারণা থাকা জরুরি।
যেমন একটা স্বাস্থ্য বিমা প্ল্যানের প্রাথমিক লক্ষ্য হাসপাতালে চিকিতসার সময় টাকার জোগান দেওয়া, আর বাড়ির বিমা বাড়ির ক্ষতি হলে যে আর্থিক লোকসান হয়, তা পূরণ করে। যদিও শেষ পর্যন্ত দুটোরই লক্ষ্য আর্থিক সাহায্য দেওয়া, যে পরিস্থিতিতে এই পলিসিগুলোর সুবিধা পাওয়া তা দুটোর ক্ষেত্রে একেবারে আলাদা। অতএব পলিসি কেনার আগে জেনে নিন কোন পরিস্থিতিতে আপনাকে পলিসিটার সুবিধা আপনি পাবেন।
কিছুদিন অন্তর পর্যালোচনা
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজন বদলে যায়। যেমন বিয়ের পর নিজের পরিবার হলে আপনার বিমার প্রয়োজন অবিবাহিত অবস্থার চেয়ে একেবারে আলাদা হবে। সুতরাং কিছুদিন অন্তর বিমার প্রয়োজন পর্যালোচনা করা এবং প্রয়োজন মতো বদল করা জরুরি।
কিছুদিন অন্তর পর্যালোচনা করলে আপনার বর্তমান পোর্টফোলিওর ফাঁক-ফোকর ভরাট করাও সম্ভব হবে। আপনি হয় পোর্টফোলিওতে নতুন প্রোডাক্ট যোগ করতে পারেন অথবা যেগুলোর আর দরকার নেই সেগুলো বাতিল করে দিতে পারেন। এই জরুরি অভ্যাসটা কিন্তু আপনার সত্যিকারের বিমার প্রয়োজন আর অভাবের মধ্যে সেতুবন্ধন করতে পারে। আর ঝুঁকি সামলানোর খরচও সামলাতে পারে।
উপসংহার
আপনার আর্থিক অবস্থা বা পার্সোনাল ফিন্যান্স-এর অপরিহার্য অঙ্গ বিমা হল দুঃসময়ের বিশ্বাসী সঙ্গী। সঠিক প্রকল্প বাছাই করলে এবং পর্যাপ্ত কভারেজ থাকলে আপনি যে কোনও সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারেন অনায়াসে।
লেখক আই সি আই সি আই লোম্বার্ড জেনারেল ইনশিওরেন্সের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (কর্পোরেট)