OCD

অ্যাংজ়াইটি বাড়তে দেবেন না

ওসিডি এবং ইলনেস অ্যাংজ়াইটি করোনার কারণে বাড়তে পারে। কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণের ভার আপনার হাতেইব্যক্তি যখন কোনও একটি ভাবনার বৃত্ত থেকে নিজেকে বার করতে পারেন না, সেটা অবসেশন।

Advertisement

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২০ ০১:২৬
Share:

অতিমারি। শব্দটির সঙ্গে কয়েক প্রজন্ম পরিচিতই ছিল না। আসলে বইয়ে পড়া আর সেই বাস্তবকে সঙ্গে নিয়ে বাঁচার মধ্যে ব্যবধান কয়েক হাজার যোজনের। এই অস্থির সময়ে স্বাভাবিক আর অতিরঞ্জনের মধ্যকার ভেদাভেদ ঘুচে গিয়েছে। যে ব্যক্তির আচরণে কোনও রকম অস্বাভাবিকতা ছিল না, করোনাভাইরাস ও তা থেকে উদ্ভূত দুশ্চিন্তার কারণে তিনিও অন্য রকম আচরণ করতে পারেন। তবে সেটা অসুখের পর্যায়ে তখনই পৌঁছবে, যখন ব্যক্তির দৈনন্দিন কাজে তা ব্যাঘাত ঘটাবে।

Advertisement

অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজ়অর্ডার কী?

Advertisement

অবচেতন মন বা আনকনশাস মাইন্ডের অ্যাংজ়াইটি বা স্ট্রেস থেকেই এই রোগের উৎপত্তি। ব্যক্তি যখন কোনও একটি ভাবনার বৃত্ত থেকে নিজেকে বার করতে পারেন না, সেটা অবসেশন। আর সেই ভাবনাকে যখন তিনি কাজে রূপান্তরিত করেন, তখন সেটা কমপালশন। অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তি নিজের সমস্যার কথা বুঝতে পারেন। কিন্তু সেই সমস্যাকে কাটিয়ে উঠতে পারেন না।

এই ধরনের রোগীদের বারবার হাত ধোয়া, অতিরিক্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার আচরণগত সমস্যা থাকে। করোনার কারণে তাদের সেই প্রবণতা কি আরও বেড়েছে?

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘ওসিডি রোগীদের সমস্যা বেড়েছে সেটা কিন্তু ঠিক নয়। বরং তাঁরা কিছুটা হলেও স্বস্তির জায়গায় রয়েছেন। কারণ অন্য সময়ে তাঁদের এই সমস্যার প্রতি আঙুল তুলে আরও বেশি করে যেন বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এখন সকলকেই কম-বেশি হাইজিন বজায় রাখতে হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হচ্ছে। তাই স্বাভাবিক ও ওসিডি আচরণের মধ্যে ব্যবধানও কমে এসেছে।’’

ইলনেস অ্যাংজ়াইটি কী?

করোনা প্যানডেমিকের মতোই মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অতিমারির আকার ধারণ করেছে ইলনেস অ্যাংজ়াইটি। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আবির মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘করোনার যে উপসর্গগুলোর কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো খুবই সাধারণ। জ্বর, সর্দিকাশি, গলা ব্যথা ইত্যাদি। এই সাধারণ উপসর্গগুলো একটুআধটু দেখা দিলেই অনেকে ভেবে ফেলছেন, তাঁদের করোনা হয়েছে।’’ পরীক্ষা করার আগেই সেটা নিয়ে তাঁরা বিশদে পড়াশোনা করে ফেলছেন। কিছু ক্ষেত্রে অনেক বেশি ভেবে সমস্যা তৈরি করছেন। এই ‘ইলনেস অ্যাংজ়াইটি’ করোনার কারণে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে।

ওসিডির সঙ্গে ইলনেস অ্যাংজ়াইটির তফাত কোথায়?

সাধারণত ইলনেস অ্যাংজ়াইটি একটি বিশেষ রোগকে ঘিরে হয়। এ ক্ষেত্রে করোনা মুখ্য। তবে মাথাব্যথা হলেই যাঁরা ক্যানসার অবধি ভেবে ফেলেন, সেটাও ইলনেস অ্যাংজ়াইটিরই একটি রূপ। করোনার কারণে অন্য রোগের অ্যাংজ়াইটি যে চলে গিয়েছে, তা কিন্তু নয়। আবার জ্বর, সর্দিকাশি যে করোনা ছাড়া অন্য রোগেরও উপসর্গ হতে পারে, সেটাও অনেকে ভাবতে পারছেন না বা চাইছেন না।

সাধারণত ব্যক্তির নিজের শরীর নিয়েই আতঙ্ক বাড়ে। তবে করোনার মতো ছোঁয়াচে রোগের কারণে ব্যক্তির ভাবনায় চলে আসছে পরিবারও। তাই তাঁর দুশ্চিন্তাও বহুমুখী ও বহুগুণ বেড়ে যাচ্ছে।

ওসিডি রোগীদের ক্ষেত্রে ভাবনা কিন্তু সব সময়ে রোগকেন্দ্রিক নয়। যে কোনও বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অসুবিধে

যে ব্যক্তির ওসিডি বা অ্যাংজ়াইটির হিস্ট্রি রয়েছে, তাঁর ক্ষেত্রে আচরণগত সমস্যা বাড়লে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পক্ষে তা নির্ধারণ করা সম্ভব। কিন্তু যে ব্যক্তির এ ধরনের কোনও রেকর্ডই ছিল না, তাঁর ক্ষেত্রে অ্যাংজ়াইটি রোগের পর্যায়ে পৌঁছেছে কি না, তা নির্ধারণ করা অনেক ক্ষেত্রেই অসুবিধেজনক হয়ে পড়ছে। কারণ করোনা মোকাবিলার জন্য স্বাস্থ্যবিধির কড়াকড়ি সকলকেই মানতে হচ্ছে। তাই কোন আচরণ স্বাভাবিকের সীমা লঙ্ঘন করছে, তা সব সময়ে স্পষ্ট নয়।

পরিস্থিতি মোকাবিলার উপায়

সমস্যা বেশি বাড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে অ্যাংজ়াইটি কমানোর ওষুধও দেওয়া যেতে পারে। অনুত্তমা এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় দু’টি পথ অবলম্বনের কথা বলছেন,

• নিজের শরীর ও তার অসুস্থতা নিয়ে নিজেই উপসংহার টানবেন না। উপসর্গ যেমনই হোক, চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

• ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। তাই বেশি দূরের ভাবনার দরকার নেই। যতটুকু করা প্রয়োজন, ততটুকুই করুন। ‘হিয়ার অ্যান্ড নাও’-এর মন্ত্র মাথায় রাখুন।

আবিরের কথায়, এ ক্ষেত্রে কাউন্সেলিং করাই প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসা। সমস্যা বাড়লে ওষুধের সাহায্যও নেওয়া হতে পারে।

অ্যাংজ়াইটি কোনও সমস্যার সমাধান করতে পারে না। তাই যতটা সম্ভব, তা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement