দৃশ্য ১: আয়নার সামনে দাঁড়ালেই বারবার গালের দাগের দিকে নজর চলে যাচ্ছে কোয়েলের। লকডাউন পর্ব শেষে অফিস যাওয়া-আসা শুরু হতেই ফের মাথাচাড়া দিয়েছিল তাঁর অ্যাকনের সমস্যা। কিন্তু দিন-দিন যে তা এ ভাবে মাত্রাছাড়া হয়ে দাঁড়াবে বুঝতেই পারেননি তিনি!
দৃশ্য ২: আগে মেয়ের টিউশন সেন্টারের বাইরের আড্ডাপর্ব ছিল মণিকার প্রাণ। খোলা হাওয়ার মতো। কিন্তু এখন মেয়েকে একাই পড়তে পাঠিয়ে দেন তিনি। কারণ, দেখা হলেই নাকি বান্ধবীরা মিলে মজা করে তাঁর রোদে পোড়া চেহারার, চোখের কোনে বলিরেখার। খুব রাগ হয় মণিকার। কিন্তু সারাদিন ঘরে-বাইরের তাল সামলে এ-সব এড়ানোর উপায় কী?
দৃশ্য ৩: মনের বয়স একফোঁটাও বাড়েনি ৬৮-র রিনার। কিন্তু মুখমণ্ডল যেন আরশি হয়ে গাইছে বিরূপ সুর। তিনি চান বা না-চান, চোখের ডার্ক সার্কল, কপালের বলিরেখা বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে, নয় নয় করে অনেক বসন্ত পেরিয়ে এসেছেন তিনি।
এই তিন প্রেক্ষাপটই খুব চেনা। কিন্তু সমাধান? অনেকেই হয়তো বলবেন, এ আর এমন কী! এখন প্রসাধনীর জাদুতে অ্যাকনের দাগ থেকে বলিরেখা, সবই চোখের পলকে গায়েব করে দেওয়া যায়। কিন্তু সে তো সাময়িক! মেকআপ তুলে আয়নার সামনের দাঁড়ালেই আবার তো সেই চেনা তিমিরে। ফলে ক্ষণস্থায়ী নয়, চিরতরে রুক্ষ-শুষ্ক ত্বক ও তার যাবতীয় সমস্যাকে তালাবন্দি করে ফেলার কোনও মন্ত্রই এ সমস্যাগুলির অব্যর্থ দাওয়াই। কিন্তু এমন পথ কি আছে? রূপবিশেষজ্ঞ ব্রিজেট জোনস জানালেন, আলবাত রয়েছে! ট্রিটমেন্টটির নাম মাইক্রোপিলিং।
কী এই মাইক্রোপিলিং?
উত্তরে ব্রিজেট বললেন, ‘‘সাধারণ ভাবে বলতে গেলে এই চিকিৎসায় ত্বকের সবচেয়ে উপরের স্তরটিকে বিশেষ কেমিক্যাল পরিচর্যার মাধ্যমে সরিয়ে দেওয়া হয়। সুযোগ করে দেওয়া হয় ক্ষতিগ্রস্ত স্তরটির ঠিক নীচে থাকা নবীন ত্বককে বাইরে বেরোনোর। অন্যান্য স্কিন ট্রিটমেন্টের মতো এর পরিণাম চোখে দেখতে বেশি অপেক্ষা করতে হয় না। নিমেষেই মসৃণ, জেল্লাদার, বলিরেখাহীন ত্বকের অধিকারী হওয়া যায়। তা বজায় রাখাও সহজ। যে কারণে এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই মাইক্রোপিলিং।
মৃত কোষ এবং শুষ্ক ত্বক চিরতরে দূরে ঠেলে দেয় এই মাইক্রোপিলস। সঙ্গে ‘স্কিন টাইট’ হয়। যে কারণে অ্যান্টি এজিং ট্রিটমেন্টগুলির তালিকাতেও উপরের দিকেই জায়গা দখল করেছে এই পদ্ধতি। যদিও এই চিকিৎসা করাতে চাইলে বয়সের বাধ্যবাধকতা নেই বলেই জানাচ্ছেন ব্রিজেট। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও অষ্টাদশীরও যদি মাত্রাতিরিক্ত অ্যাকনের সমস্যা থাকে তিনিও এই ট্রিটমেন্ট করাতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে তাঁর জন্য মাইক্রোপিলস-এর মাত্রা কম ব্যবহার করতে হবে অবশ্যই। এমনিতে তিরিশের পর থেকে সকলেই অনায়াসে এই ট্রিটমেন্ট করাতে পারেন নিশ্চিন্তে।’’
ত্বকের উপরিস্তর সরিয়ে নেওয়ার কথা শুনে অনেকের বুক দুরুদুরু করে উঠতেই পারে। তবে ব্রিজেটের আশ্বাস, ‘‘এই চিকিৎসা খুব সহজ। কোনও ছুরি-কাঁচির ব্যবহার নেই এখানে! গ্লাইকোলিক অ্যাসিডের সঙ্গে মিশিয়ে মাইক্রোপিলস লোশন ত্বকে মাখানো হয়। প্রতিটি সেশনের মেয়াদ ৩০ থেকে ৬০ মিনিট মতো। মূলত মৃত কোষের সূক্ষ্ম স্তর সরিয়ে নেওয়ার কাজ করে এই লোশন। ট্রিটমেন্টের সেরা ফলাফল পেতে চার-পাঁচ সপ্তাহের ব্যবধানে পাঁচ-ছ’টি সেশনের প্রয়োজন হয়।’’
যদিও নিজে থেকে এই ট্রিটমেন্টটি করানোর সিদ্ধান্ত না-নিয়ে ফেলাই ভাল। আগে অবশ্যই একজন ভাল অ্যাসথেটিশিয়ান (স্কিন কেয়ার থেরাপিস্ট) বা ডার্মাটোলজিস্টের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিচ্ছেন ব্রিজেট।
তবে প্রশ্ন হল, এই ট্রিটমেন্টের কি কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে? আশ্বস্ত করলেন ব্রিজেট, ‘‘তেমন উপক্রম খুব একটা হয় না। বেশি স্পর্শকাতর ত্বকের ক্ষেত্রে লালচে ভাব ফুটে উঠতে পারে। যদিও তা ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই মিলিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে।’’ তবে তিনি জানালেন, মাইক্রোপিলিংয়ের পরে ত্বকের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। তাঁর কথায়, ‘‘মাইক্রোপিলিং চলাকালীন সরাসরি সূর্যের রশ্মি যাতে ত্বকে এসে না-পড়ে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। মেকআপও এড়িয়ে চলা ভাল। ট্রিটমেন্টের শেষেও সানস্ক্রিনের ব্যবহার নিয়ম করে চালিয়ে যেতে হবে। ময়শ্চারাইজ়ারও জরুরি। সঙ্গে প্রচুর জল খেতে হবে।’’
এই চিকিৎসার খরচ ও সময়সীমা
এই ট্রিটমেন্ট শুরু করলে কি বারবার চালিয়ে যেতে হবে? উত্তরে ব্রিজেট জানালেন, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে বছরে এক বার এই ট্রিটমেন্ট করানো যেতে পারে। যদিও সকলের ক্ষেত্রে এমনটা না-ও হতে পারে। ত্বকে বলিরেখা বেশি থাকলে বা ত্বক ফের জেল্লা হারানোর ইঙ্গিত দিতে শুরু করলে সে ক্ষেত্রে মাইক্রোপিলিংয়ের সেশন করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। তা এড়ানোর উপায়ও আছে বলে জানালেন ব্রিজেট। বললেন, ‘‘মদ্যপান ও ধূমপান চলবে না, কারণ তা ত্বককে ফের শুষ্ক করে তুলবে।’’ প্রডাক্টের ব্র্যান্ড, যিনি ট্রিটমেন্ট দেবেন, তাঁর দক্ষতা ও ত্বকের অবস্থার উপরে নির্ভর করে খরচ। প্রতি সেশনে প্রায় ২৫০০-৫০০০ টাকা লাগে। এ রকম ৫-৬টি সেশন লাগতে পারে।
ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সেলেব জগতে এই ট্রিটমেন্টের দর বেশ বেশি। আস্তে-আস্তে মধ্যবিত্তের কাছেও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে মাইক্রোপিলিং।