ইরা বসুকে কি মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা? প্রশ্ন তুললেন রত্নাবলী রায়। তাঁকে হোমে নিয়ে যাওয়ার কথা বললেন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়।
না হয় তিনি ভবঘুরে। তার মানেই কি মনোরোগী? ভবঘুরে মানেই গরিব হতে হবে? এ সব কে বলেছে? এই সমীকরণ কেন? রিকশাচালকেরা রাস্তায় ঘুমান না? তাঁরাও কি তার মানে মনোরোগী? রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শ্যালিকা ইরা বসুকে বৃহস্পতিবার খড়দহের ফুটপাত থেকে তুলে লুম্বিনী পার্ক মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করার সিদ্ধান্তে এ সব প্রশ্নই তুলছেন মনো-সমাজকর্মী রত্নাবলী রায়।
খড়দহ প্রিয়নাথ বালিকা বিদ্যালয়ের এক সময়ের শিক্ষিকা কেন এখন সে এলাকার সকলের ‘ভবঘুরে মাসিমা’, সে প্রসঙ্গে কথা বলতে চাননি ইরা। তাঁর দিদি, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য শুক্রবার একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, ইরা স্বেচ্ছায় ফুটপাতে থাকেন। ইরার সেই ইচ্ছাকে সম্মান জানানোর পক্ষে সরব রত্নাবলী। তিনি বলেন, ‘‘রাস্তায় থাকেন মানেই কি তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া যায় নাকি? তিনি নিজে বলছেন, কোথাও যেতে চান না। তাঁর চিকিৎসার আদৌ কোনও প্রয়োজন আছে কি না, কেউ জানেই না। কাউকে জোর করে অপরাধীর মতো তুলে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো যায় কি? এত ভবঘুরে রয়েছেন, কোই তাঁদের প্রতি তো প্রশাসনের এত উৎসাহ দেখি না?’’
নতুন মানসিক স্বাস্থ্য আইনের ১০০ নম্বর ধারায় বলা আছে যে, কোনও ভবঘুরেকে পেলে পুলিশের প্রথম কাজ হল তাঁর বাড়ি খুঁজে বার করা। মনে করাচ্ছেন রত্নাবলী। তার আগেই তাঁকে টানতে টানতে মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার অধিকার নেই কারও। তিনি বলেন, ‘‘কেউ নিজের জীবন নির্ধারণ করতেই পারেন। তার মানে এমন নয় যে, তাঁকে মানসিক হাসপাতালে আটকে রাখার অধিকার কারও আছে।’’ কারও চেহারা, পোশাক বা থাকার জায়গা দেখে মোটেও ধরে নেওয়া যায় না যে তিনি মনোরোগী। যে কোনও ভবঘুরেকে কোথাও নিয়ে যাওয়ার আগে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে হবে। তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোথাও নিয়ে যাওয়া যায় না। মানসিক হাসপাতালে তো কোনও ভাবেই নয়, স্পষ্ট বক্তব্য রত্নাবলীর।
বিষয়টি নজরে এসেছে রাজ্যের মহিলা কমিশনেরও। মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ইরাকে হোমে রাখার বন্দোবস্ত করতে হবে। কোভিডবিধি মেনেই হোমে নিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, ‘‘আজ নয়, মহিলা কমিশন এমন বহু গৃহহারা মানুষকে আগেও হোমের বন্দোবস্ত করে দিয়েছে।’’