রানি ক্লিয়োপেত্রা গুবরে পোকা থেঁতো করে তার রক্তরসে ঠোঁট রাঙাতেন। এ যুগে অবশ্য এত কষ্ট করার প্রয়োজন নেই। বরং একটু কষ্ট করে মনের মতো লিপস্টিক বেছে নিলেই হবে। মনের মতো লিপস্টিক মানে তার শেড নয় কিন্তু! লাল, কমলা, গোলাপি যে রংই কিনুন না কেন, ঠোঁটে যেন থাকে কমফর্ট।
ম্যাট: এই লিপস্টিকে ওয়াক্স বেশি, তৈলাক্ত ভাব বা শাইন কম। তবে অনেকক্ষণ স্থায়ী হয়। এই লিপস্টিকে ঠোঁটের শেপও স্পষ্ট থাকে। সাধারণত ফর্মাল ইভেন্ট বা দীর্ঘস্থায়ী মিটিং অথবা অনুষ্ঠানের জন্য ম্যাট ভাল। তবে ফাটা ঠোঁটে ম্যাট লাগাবেন না। ঠোঁট তো ফাটবেই, আর সেই ফাটল বেরিয়ে পড়বে ঠোঁটের উপরে।
ক্রিম: এতে ওয়াক্স ও অয়েল প্রায় সমান ভাগে থাকে। ফলে ঠোঁট বেশি শুকিয়েও যায় না, আবার অতিরিক্ত চকচকও করে না। অফিসে বা বন্ধুদের সঙ্গে ছিমছাম ঘরোয়া আড্ডায় এই ধরনের লিপস্টিক বেছে নিতে পারেন। বিশেষত ঠান্ডার জায়গায় বেড়ানোর সময়ে ক্রিম লিপস্টিক কিন্তু ঠোঁটের বর্ম হিসেবে কাজ করে। ঠোঁটের প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা জোগান দেয়, আবার দীর্ঘস্থায়ীও হয়। তাই সারা দিন ঘুরলেও লুক ঠিক থাকে।
স্যাটিন বা শিয়ার
ঠিক স্যাটিনের মতোই এর ফিল। তবে এতে রং একটু কম এবং ঔজ্জ্বল্য বেশি। সারা দিন স্যাটিন শেড রাখতে চাইলে টাচআপ জরুরি। এই ধরনের লিপস্টিক ঠোঁটে ভারীও লাগে না।
গ্লসি: সাধারণত নুড, শিয়ার বা ফ্লেশ টোনেই এই গ্লসি লিপস্টিকের আবেদন বেশি। তবে এই লিপস্টিক পুরু ঠোঁটে বিশেষ ভাল লাগে না। আর এই লিপস্টিক বেশ হেভি হয়। তাই সারা দিনের জন্য গ্লসি লিপস্টিক না বাছাই ভাল। অনুষ্ঠানে ডার্ক আই মেকআপ করলে হালকা গ্লসি লিপস্টিক লাগাতে পারেন।
ময়শ্চারাইজ়িং: ঠোঁটের যত্ন নিয়ে সাজতে চাইলে এই লিপস্টিকের জুড়ি মেলা ভার। গ্লিসারিন, অ্যালো জেল ও ভিটামিন ই সমৃদ্ধ হওয়ায় এই লিপস্টিক ঠোঁটের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। অন্য দিকে ময়শ্চারাইজ়িং লিপস্টিকের শেডও অনেক। হালকা থেকে শুরু করে গাঢ় প্রায় সব ধরনের শেডই পাওয়া যায় ময়শ্চারাইজ়িং লিপস্টিকের ক্যাটালগে। রোজকার জন্য বন্ধুত্ব করতে পারেন এর সঙ্গে।
ফ্রস্টি: নামের মতোই এর লুক। ঠান্ডায় শার্সির উপরে যেমন গুঁড়ি গুঁড়ি জল জমে থাকে, আবার তাতে আলো পড়লে চকচক করে, এই লিপস্টিকও ঠোঁটে ঠিক তেমনই লুক তুলে ধরে। তবে ফ্রস্টি লিপস্টিক ঠোঁট খুব শুষ্ক করে দেয়। তাই ময়শ্চারাইজ়িং ফর্মুলা-সহ ফ্রস্টি লিপস্টিক বাছতে হবে। অথবা ময়শ্চারাইজ়ার লাগিয়ে এই লিপস্টিক লাগাতে পারেন।
লিকুইড: স্টিকের বদলে তুলি থাকায় এই লিপস্টিক লাগানো খুব সহজ। অন্য দিকে এর পিগমেন্ট খুব ঘন হওয়ায় একটা স্ট্রোকেই পুরো ঠোঁট কভার হয়ে যায়। ফলে খুব বেশি পরিমাণে লাগেও না। আবার অনেকক্ষণ স্থায়ীও হয়। তবে এই ধরনের লিপস্টিক শুকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে। খুব বেশিক্ষণ এর মুখ খুলে রাখবেন না।
প্লাম্পার: একে ঠিক লিপস্টিক বলা চলে না। তবে ঠোঁটের গড়ন সুন্দর করতে মেকআপ কিটে রাখতেই পারেন। এতে মেন্থল জাতীয় উপাদান ব্যবহার করা হয়। ফলে ঠোঁটে লাগানো মাত্র সামান্য ইরিটেশন হয়, ঠোঁট একটু ফোলা দেখায়। পাতলা ঠোঁট হলে তা ভরাট দেখাতে ব্যবহার করা যায় প্লাম্পার। তবে উপাদান দেখে তবেই কিনুন। এতে এমন অনেক উপাদানই ব্যবহার করা হয়, যাতে আপনার অ্যালার্জি থাকতে পারে।
তবে লিপস্টিক যা-ই বাছুন না কেন, ঠোঁটের যত্নও জরুরি। অ্যালো ভেরা জেল, মধু, মাখন, অলিভ অয়েল... সবই ঠোঁটের জন্য খুব ভাল।
মডেল: হিয়া মুখোপাধ্যায়, নয়নিকা সরকার, বনশ্রী চক্রবর্তী
ছবি: জয়দীপ মণ্ডল
মেকআপ: উজ্জ্বল দত্ত, সুমন গঙ্গোপাধ্যায় (হিয়া), লোকেশন: ফার্ন রেসিডেন্সি, চিনার পার্ক