শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘হরিমতির বাগান’ গল্পটা মনে পড়ে? হরিমতির কয়েকশো বর্গফুটের ফ্ল্যাটেও সবুজের সমারোহ। সেখানে ঘরের মাঝে গাছেদের সাম্রাজ্য। মন ভাল রাখতে আর পরিবেশ সু্স্থ রাখতে গাছের যে জুড়ি নেই, তা সকলেরই জানা। তাই ডিজিটাল জীবনে কাজে লাগাতে পারেন এই গ্রিন থেরাপি। এতে মনও ভাল থাকবে, সুন্দর দেখাবে নিজের দিনযাপনের আস্তানাও। তবে ঘরে গাছ রাখার কিছু নিয়ম মেনে চললে সবুজের ভারে ভারাক্রান্ত লাগবে না বাড়িটা, বরং রূপ খোলতাই হবে।
সদরসজ্জায়
সদর দরজার পাশে অনেকেরই জুতো রাখার র্যাক বা কাবার্ড থাকে। তার উপরে গাছ রাখতে পারেন কয়েকটা। দরজার দু’পাশেও জায়গা করে দিতে পারেন কয়েকটা পাতাবাহারকে। জায়গা বেশি থাকলে একপাশে একটা গুল্মজাতীয় গাছও রাখতে পারেন। দেখতে ভাল লাগবে।
লিভিং এরিয়ায়
সোফার দু’পাশে ইনডোর পাম রাখতে পারেন। তবে এর উচ্চতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সোফার পাশে যেহেতু থাকবে, তাই ৪-৫ ফুট উচ্চতা হলেই ভাল। না হলে তা ঢাকা পড়ে যাবে সোফার পিছনে। বসার ঘরের জানালায় বুগেনভিলিয়া বা মালতীলতাও রাখতে পারেন। গাছ বেড়ে উঠলে ডালপালা ছড়িয়ে দিন গ্রিলের মধ্য দিয়ে। ঘর আলো করে ফুটে থাকবে রঙিন ফুল। ফিগ বা স্প্লিট-লিফ ফাইলোডেনড্রন দিয়েও সাজিয়ে ফেলতে পারেন বৈঠকখানা। বৈচিত্র চাইলে পিস লিলিও রাখতে পারেন এক কোণে।
পড়া বা কাজের টেবিলে কেজো জগতেও একটু সবুজ বেশ মুক্তি দেয়। পড়ার টেবিলে বা ওয়র্কস্পেসে জায়গা করে দিন একটু সবুজের। ওয়র্কস্পেসে সাকিউলেন্টস রাখাই শ্রেয়। এতে জল বেশি দিতে হয় না। ঝোপ তৈরি করে পড়ায় বা কাজে মনোযোগ নষ্ট করে না। মাঝেমাঝে সবুজের দিকে তাকালে চোখের শান্তি, মনের বিশ্রামও হয়। বনসাইয়ের শখ থাকলে, তা রাখতে পারেন কাজের জায়গায়। দেখতে সুন্দর জিনিস সব সময়েই মন ভাল করে, পজ়িটিভ এনার্জির জোগান দেয়। মানি প্ল্যান্টও রাখতে পারেন কাচের বোতলে। তবে মানি প্ল্যান্ট বাড়তে শুরু করলে তার ডালপালা সরিয়ে দিতে হবে জানালার দিকে। পড়ার জায়গায় তা শাখাপ্রশাখা বিস্তার করলে অগোছালো দেখাবে।
ডাইনিংয়ে
খাবার টেবিলে ছোট গাছ রাখতে পারেন। লাকি ব্যাম্বু রাখাই যায়। একে ছোট, তায় যত্নেরও প্রয়োজন পড়ে না। একটু জল দিলেই সে তুষ্ট। ডাইনিং টেবলের পাশে রাখতে চাইলে উচ্চতায় বড় আকারে পাম বা লাকি ব্যাম্বুই রাখুন। ডাইনিং রুমে পর্যাপ্ত পরিসর থাকলে বেগোনিয়া, বার্ড অব প্যারাডাইস ইত্যাদি সুদৃশ্য গাছ রাখতে পারেন। তবে তাতে যেন একটু আলো পড়ে। সাকিউলেন্টসও রাখতে পারেন ডাইনিং রুমে।
কিচেন
হার্ব জাতীয় গাছ রাখার জন্য রান্নাঘরের জুড়ি নেই। রাঁধার সময়ে দরকার মতো তা ব্যবহারও করতে পারবেন। অ্যালো ভেরা গাছ রাখতে পারেন জানালায়। সকালে অ্যালো জুসেরও জোগান দেবে। ঘরোয়া উপকরণ দিয়ে রূপচর্চার সময়েও হাতের কাছে পাবেন। ছোট ট্রে বা পাত্রে লাগিয়ে ফেলুন মাইক্রোগ্রিনস। একটু বাড়লে তা নিয়ে আসতে পারেন ডাইনিং টেবলে। সবুজের ছোঁয়া তো থাকবেই। কাজেও লাগবে।
বেডরুম
এখানে সবুজ থাকবে এক পোচ রঙের মতো। শয়নকক্ষ যত হালকা থাকে, ততই ভাল। তবে শোয়ার ঘরে জানালায় একটা জুঁই বা বেল ফুল গাছ রাখতেই পারেন। হালকা সুবাসে ঘর তো ভরে উঠবেই। মনকেও শান্ত করবে। অবসাদ, ক্লান্তি কাটবে। বেডরুমে গাছ রাখতে চাইলে পিস লিলি বা অ্যালো ভেরা বাছতে পারেন। তবে খুব বেশি নয়। রুমের আয়তন অনুযায়ী ক’টা গাছ রাখবেন, তা স্থির করতে হবে। ১০ বাই ১০ ঘরে দুটো গাছই যথেষ্ট।
স্নানঘরে
এখানে আর্দ্রতা বারোমাস। তাই এমন গাছ রাখুন যা আর্দ্র পরিবেশে বাঁচবে। রাফল ফার্ন লাগাতে পারেন। অন্য দিকে এয়ার পিউরিফায়িং প্ল্যান্টস ও রাখতে পারেন। তার জন্য বেছে নিন ড্রাকেনা, স্নেক প্ল্যান্ট।
আর রইল বারান্দা। এই চৌহদ্দিতে তো গাছেদের মৌরসিপাট্টা। বারান্দায় কোনও গাছেই কোনও বাধা নেই। টম্যাটো, বেগুন থেকে শুরু করে বুগেনভিলিয়া, স্ট্রিং অব পার্লসও ঝুলিয়ে দিতে পারেন।
আলো, হাওয়া, আহ্লাদে সবুজে ভরে উঠবে অন্দর।