পরচুলায় গাদা গাদা কীটনাশক! ছবি: ফ্রিপিক।
মাথা জোড়া টাক ঢাকতে পরচুলা ব্যবহার করেন অনেকেই। মহিলারা আবার তাঁদের রূপটানে চমক দিতে অনেক সময়েই আসল চুলের উপরে পরচুলা পরে নেন।
অকালেই চুল ঝরছে যাঁদের, তাঁদের অনেকেই চুল প্রতিস্থাপনের ঝক্কি নিতে চাইছেন না। তাতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয় আছে। কাজেই সহজ সমাধান হল পরচুলা, কিন্তু এই পরচুলা ব্যবহার করা কতটা স্বাস্থ্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে চিকিৎসক মহলে।
নাইজিরিয়ায় কয়েকটি নামী ব্র্যান্ডের পরচুলায় ক্ষতিকর কীটনাশক পাওয়া গিয়েছে। শুধু তাই নয়, নকল চুল পরীক্ষা করে এমন সব রাসায়নিক ও ভারী ধাতু পাওয়া গিয়েছে, যা ক্যানসারের মতো মারণ রোগের কারণও হতে পারে।
নাইজিরিয়া ছাড়াও চিন, আমেরিকা, ঘানায় তৈরি কয়েকটি নামী প্রসাধনী ব্র্যান্ডের পরচুলা পরীক্ষা করার পর হইচই পড়ে গিয়েছে। নাইজিরিয়ার স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, অনেক মহিলা ও পুরুষই মাথার ত্বকে অ্যালার্জি, বিভিন্ন রকম সংক্রমণ নিয়ে চিকিৎসকেদের কাছে গিয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, পরচুলা ব্যবহারের পরই তাঁদের শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। তার পরেই ল্যাবরেটরিতে সেই সব পরচুলা পরীক্ষা করে চমকে গিয়েছেন গবেষকেরা।
পরচুলায় কী কী পাওয়া গিয়েছে? নাইজিরিয়ার স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, নকল চুল তৈরি হয় প্লাস্টিক থেকে। সেই সব আদতে জৈব প্লাস্টিক নয়। নকল চুলের স্থায়িত্ব বাড়াতে পলিভিনাইল ক্লোরাইড (পিভিসি) ব্যবহার করা হয়। সেই প্লাস্টিক আবার বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যায়। ফলে যে পরচুলা তৈরি হয়, তাতে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক, ভারী ধাতু থেকে যায়। নাইজিরিয়ার ‘ন্যাশনাল এজেন্সি ফর ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’-এর আধিকারিকেরা দেখেছেন, কয়েকটি ব্র্যান্ডের পরচুলায় ক্যাডমিয়াম, লেড, ক্রোমিয়াম, নিকেলের মতো ভারী ধাতু রয়েছে। তা ছাড়াও ১১ রকম কীটনাশক পাওয়া গিয়েছে। এই সব কীটনাশক মানুষের জন্য বিষ।
পরচুলায় এত পরিমাণ লেড, ক্যাডমিয়াম রয়েছে, যা শরীরে গেলে কিডনির দফারফা হতে বাধ্য। পাশাপাশি লিভার ও ফুসফুসেরও ক্ষতি করে এগুলি। প্রভাব পড়ে স্নায়ুতন্ত্রেও। ত্বকের র্যাশ, অ্যালার্জি এমনকি ক্যানসারও হতে পারে তাতে। পরচুলার নাইট্রেট থেকে থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের ক্যানসার হতে পারে। রক্তের ক্যানসারের ঝুঁকিও রয়েছে।
স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, অনেক মহিলাই ফ্যাশনের জন্য বিভিন্ন রঙের পরচুলা মাথায় পরছেন। দীর্ঘ দিন ধরে এমন নকল চুল ব্যবহার করলে শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। কারণ নকল চুলের রাসায়নিক মাথার স্নায়ুগুলির উপরেও প্রভাব ফেলে। ফলে শুধু শারীরিক নয়, জটিল মানসিক ব্যধিও দেখা দিতে পারে।