ছবি: শাটারস্টক।
করোনাভাইরাস বা এই ধরনের সংক্রমণে ‘হাই রিস্ক’ কারা? এককথায় বয়স্ক মানুষজন, যাঁদের বিপদের আশঙ্কা বেশি৷ কমবয়সি টগবগে ছেলেমেয়েদের বা সুস্থসবল মাঝবয়সিদের যেমন সংক্রমণের আশঙ্কা কম বা সংক্রমণ হলেও বিপদের আশঙ্কা তেমন নেই, এঁদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সে রকম নয়৷ একটু এদিক থেকে সেদিক হলে তাঁরা ঝট করে রোগে পড়ে যেতে পারেন, অবস্থা জটিল হতে পারে৷ এমনকি, মারা যাওয়াও অসম্ভব নয়৷
সমস্যা সেটাই৷ সম্প্রতি ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ধূমপায়ী ও ডায়াবিটিস-হাইপ্রেশারে আক্রান্ত ৬৯-এর চেয়ে বেশি বয়সি পুরুষরাই নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি মারা যান৷ চিনের উহানে ১৯১ জন কোভিড ১৯-এর রোগীর উপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে যে ৫৪ জন মারা গিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগেরই ডায়াবিটিস ও হাইপ্রেশার ছিল এবং বয়স ছিল ৭০-এর বেশি৷ কাজেই হাই রিস্ক মানুষদের বিশেষভাবে সাবধান হয়ে রোগ প্রতিরোধের চেষ্টা করা দরকার৷ তবে সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে দেখে নেওয়া যাক, কাদের ‘হাই রিস্ক’ বলা হয়৷
হাই রিস্ক মানুষ কারা
• ৬৫-র বেশি বয়স৷এরপর বয়স যত বাড়বে, বিপদের আশঙ্কা তত বেশি৷
• দীর্ঘদিন ধরে কোনও ক্রনিক রোগ শরীরে বাসা বেঁধে থাকলে সমস্যা বেশি৷ যেমন হাইপ্রেশার, ডায়াবিটিস, হৃদরোগ, ফুসফুসের সমস্যা বা কিডনিরজটিলরোগ৷
• খুব বেশি ধূমপান করেন৷
• বিভিন্ন কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম৷ যেমন,
• ক্যান্সারের চিকিৎসা চলছে৷
• রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস, লুপাস, মাল্টিপল স্কেলরোসিস বা ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ তথা আলসারেটিস কোলাইটিস বা ক্রোনস ডিজিজ আছে৷
• এইচআইভি পজিটিভ৷
• কিডনি বা শরীরের অন্য কোনও প্রত্যঙ্গ কিংবা বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট হয়েছে৷
আরও পড়ুন: মানসিক চাপ কমান, কমবে কোভিড ১৯-এর আশঙ্কা
তাহলে কী করবেন এঁরা
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সব্যসাচী সেন বলছেন, “প্রথম কাজ মাথা ঠান্ডা রাখা৷ সংক্রমণ হওয়া মানেই রোগ হওয়া নয়৷ বা হলেও যে একেবারে সামলানো যাবে না, বেঘোরে মারা পড়তে হবে, তেমন নয় ব্যাপারটা৷ যে যে নিয়মের কথা বলা হচ্ছে তা যদি মেনে চলেন, বিপদের আশঙ্কা যথেষ্ট কম৷ কারণ, এই জীবাণু খুব বেশি ছোঁয়াচে হলেও বিপজ্জনক নয় তেমন৷ কাজেই টেনশন করবেন না। টেনশন করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিন্তু আরও কমে যায়। নিয়ম মানা অভ্যাস করুন৷ আপনার নিজস্ব চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলুন৷”
আরও পড়ুন: করোনা মোকাবিলার উপায় আগামী ১৫ দিন বাড়িতে থাকা
সঠিক নিয়ম মেনে চললে, তবেই বিপদের আশঙ্কা কমবে
যে যে নিয়ম মেনে চলতে হবে
• ধূমপান ছাড়ুন সবার আগে৷ কারণ সারা শরীর তথা শ্বাসযন্ত্র, ফুসফুস ইত্যাদির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমাতে এর অবদান বিরাট৷ আর এই ভাইরাস যেহেতু শ্বাসতন্ত্রকেই আক্রমণ করে, ধূমপান চালিয়ে গেলে সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়৷ বাড়ে জটিলতার আশঙ্কা৷ আর এ বিপদ শুধু আপনার একার নয়৷ আপনার আশেপাশে যাঁরা আছেন, তাঁদেরও৷ প্যাসিভ স্মোকিংয়েও বিপদ প্রায় একই রকম বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ কাজেই নিজের জন্য না হোক, প্রিয়জনের খাতিরে এই বদভ্যাসটি ত্যাগ করুন৷
• সাধারণ সাবধানতাগুলি মেনে চলুন অক্ষরে অক্ষরে৷ যেমন, ঘন ঘন হাত ধোওয়া, ঘরদোর পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখা, যে কোনও ধরনের জমায়েত এড়িয়ে যাওয়া ইত্যাদি৷
• যা যা ওষুধ নিয়মিত খান, সে সব একটু বেশি করে এনে রাখুন৷ হঠাৎ শরীর খারাপ হলে, বেরনোর মতো পরিস্থিতি যদি না থাকে, কাজে লাগবে৷
• চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জেনে নিন, আপনার যে রোগ আছে, তার বাড়াবাড়ি হলে কী ওষুধ খেতে হবে ও কী কী নিয়ম মানতে হবে৷
• নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণ যদি হয়েই যায়, কী কী করতে হবে তা চিকিৎসক ও আত্মীয়দের সঙ্গে আলোচনা করে প্ল্যান করে নিন৷ চিন্তা করবেন না৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কিছু সাবধানতা মেনে ঘরে থাকলেই সমস্যা কমে যায়৷
• ঘরে থাকতে গেলে খাবারের ব্যবস্থা কী হবে তা ঠিক করে রাখুন৷ নিজেরা রান্না করে খাবেন না হোম ডেলিভারি অর্ডার করবেন৷ সপ্তাহ দু’য়েকের মতো বাজারহাট যেন করা থাকে৷
• রোগের উপসর্গ সম্বন্ধে সচেতন থাকুন৷ জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি হলে চিকিৎসককে জানান৷ তিনি যেভাবে চলতে বলবেন, সেভাবে চলুন৷
• রোগের বাড়াবাড়ি, অর্থাৎ শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ ধরা বা ব্যথা, আচ্ছন্ন হয়ে পড়া, ভুল বকা, ঠোঁট ও মুখ নীলচে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি হলে কোন হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে তা আগে থেকে জেনে রাখুন৷
• চিকিৎসক যদি বাইরের সঙ্গে সবসংযোগ বিচ্ছিন্ন করে পুরোপুরি ঘরে থাকতে বলেন, তা-ই করুন৷