মারজোরি ফিটারম্যান (বাঁ দিকে) এবং বার্নি লিটম্যান। ছবি : সংগৃহীত।
জীবন ডালি সাজিয়ে অপেক্ষা করছে। দেখছে, আপনাকে পিছনে টেনে নামিয়ে দেওয়ার পরেও আপনি সেই নুইয়ে পড়া অবস্থা থেকে আবার স্প্রিংয়ের মতো উঠে দাঁড়াতে পারেন কি না। যদি ফিরে আসেন তবে ডালি ভরা জীবন আপনার। না হলে নয়। গতিময় জীবনে পান থেকে চুন খসলেই হতাশায় ডুব দেন যে সমস্ত তরুণ-তরুণীরা, তাঁদের ঘাড় ধরে দুই শতায়ু দেখিয়ে দিলেন আশায় বাঁচা কাকে বলে। ১০০ বছরের দোরগোরায় পৌঁছে তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন প্রেম। বয়স ১০০ পেরনোর পরে বিয়ে করেছেন একে অপরকে। তাঁদের সেই প্রেম গড়েছে বিশ্বরেকর্ডও।
গিনেজ় ওয়ার্ল্ড রেকর্ড
পাত্রী মারজোরি ফিটারম্যানের বয়স ১০২। পাত্র বার্নি লিটম্যান ১০০। দু’জনেই হুইলচেয়ারবন্দি। গত মে মাসে তাঁরা যখন বিয়ে করেছেন, তখন তাঁদের মিলিত বয়স ছিল ২০২ বছর ২৭১ দিন। গিনেজ় ওয়ার্ল্ড রেকর্ড জানিয়েছে, মারজোরি আর বার্নিই বিশ্বের বৃদ্ধতম দম্পতি, যাঁরা বিয়ে করলেন। নিজেদের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে বিশ্ব রেকর্ডের খবরটি দিয়ে তারা লিখেছে, ‘‘মার্জোরি আর বার্নি প্রমাণ করলেন, প্রেমে পড়ার কোনও বয়স না।’’
পরিবারের সঙ্গে মারজোরি ফিটারম্যান এবং বার্নি লিটম্যান। ছবি: সংগৃহীত।
এক দশকের প্রেম
মার্জোরি আর বার্নি দু’জনেই তাঁদের প্রথম সঙ্গীর সঙ্গে দীর্ঘ বিবাহিত জীবন কাটিয়েছেন। দু’জনেরই স্বামী এবং স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। সমাজসেবার কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন দু’জনেই। অবসরপ্রাপ্তদের প্রবীণদের একটি কমিউনিটির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। সেই কমিউনিটিরই একটি কস্টিউম পার্টিতে বার্নির সঙ্গে আলাপ হয় মার্জোরির। কস্টিউম পার্টিতে সাধারণত বিভিন্ন বিখ্যাত চরিত্রের আদলে পোশাক পরে আসা দস্তুর। সেই পার্টিতে মার্জোরি আর বার্নির আলাপ গাঢ় হতে বিন্দুমাত্র দেরি হয়নি। অথচ দু’জনে কম বয়সে পেনসিলভিনিয়ার একই বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সময়ে পড়াশোনা করেছেন। অথচ সেই সময় দু’জনের কখনও সাক্ষাৎ হয়নি। গিনেজ় জানিয়েছে, পার্টিতে আলাপ হওয়ার পরে প্রায় এক দশক ধরে প্রেম করেছেন দু’জন। খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে দু’জনেই শৌখিন, দু’জনের রসবোধ এবং মেধাও মেলে আবার বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পে এক সঙ্গে কাজ করতেও ভালবাসেন মার্জোরি আর বার্নি। এক দশক ধরে ধীরে ধীরে ওই সবের মধ্যে দিয়েই প্রেম গাঢ় হয়েছে। অবশেষে দু’জনেই যখন শতায়ু তখন প্রেমকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভেবেছেন বৃদ্ধতম দম্পতি। পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে চার হাত এক হয়েছে দু’জনের।
বিয়ের পরে হুইলচেয়ারবন্দি নবদম্পতি মারজোরি ফিটারম্যান এবং বার্নি লিটম্যান। ছবি: সংগৃহীত।
ভাল থাকার পাসওয়ার্ড
একশো বছরে বিয়ে! শুনলে অনেকে বলবেন, একশো বছর পর্যন্ত বাঁচার গ্যারান্টি কিসে। আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ার বাসিন্দা মার্জোরি আর বার্নি অবশ্য জানিয়েছেন, শতায়ু হওয়ার পরেও তাঁদের শারীরিক ভাবে ভাল থাকতে সাহায্য করেছে স্বাস্থ্যকর কিন্তু সহজ সরল জীবন যাপন। মার্জোরি অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁকে ভাল রেখেছে তাঁর মাখন তোলা দুধ বা বাটারমিল্ক। বার্নি জানাচ্ছেন, তাঁর ভাল থাকার পাসওয়ার্ড আশপাশে কী ঘটছে না ঘটছে, সে ব্যাপারে জানা এবং পড়াশোনা। বার্নির নাতনি সারা সিশারম্যান গিনেজ়কে জানিয়েছেন, ‘‘ওঁদের জীবনের উপান্তে এসেও ও ভাবে ভাল থাকতে দেখে, আমাদেরও ভাল লাগে। জীবনবোধ কাকে বলে, তার আদর্শ উদাহরণ হতে পারেন ওঁরা।’’