কেন এমন পরিণতি হল প্রণয়ের? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
বহরমপুরে হাড় হিম করা হত্যাকাণ্ডের আগে বারংবার নেটমাধ্যমে হিংসাত্মক পোস্ট দিত অভিযুক্ত সুশান্ত চৌধুরী। প্রাথমিক তদন্তে ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে প্রণয়ঘটিত সম্পর্কে টানাপড়েনের তত্ত্ব। কিন্তু কেন এমন পরিণতি হল প্রণয়ের? মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় আলোকপাত করলেন একাধিক বিষয়ে।
খুনের অভিযোগে ধৃত সুশান্ত চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
মনোবিদ প্রথমেই জানান, কোনও ধরনের সম্পর্কের ক্ষেত্রেই হিংসা কাঙ্ক্ষিত নয়। সম্পর্ক থাকাকালীন সময়েই হোক কিংবা সম্পর্ক পরবর্তী সময়ে, কখনওই অন্য দিকের মানুষটির সঙ্গে হিংস্রতার ভাষায় লিপ্ত হওয়ার বিন্দু মাত্র অধিকার জন্মায় না।
অনুত্তমা জানান, অনেক সময়ে বিচ্ছেদকে আমরা হার-জিত হিসেবে দেখি। বিচ্ছেদকে মেনে নিতে পারা না-পারার অভিব্যক্তি কেমন হবে সেটা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির চরিত্রেরই প্রতিফলক। অনুত্তমার কথায়, ‘‘ছেলেটি যদি এই সম্পর্কের ভাঙ্গনটিকে অন্য ভাবে নিতে পারত তবে ওর জীবনেও এত বড় বিপর্যয় আসত না।’’ বিচ্ছেদকে হেরে যাওয়া হিসেবে দেখলে প্রেম ভেঙে যাওয়ার পর জন্মাতে পারে প্রতিশোধ স্পৃহা।
অনুত্তমার মতে, ‘‘কোনও মানুষ বিচ্ছেদের পর যখন হিংসার পথ বেছে নেয়, তখন সেই ব্যক্তি আর সম্পর্ককে ‘ও আমায় আর ভালবাসে না’— এই যন্ত্রণা দিয়ে দেখছে না। বরং তার কাছে মনে হচ্ছে এই ভাঙনের জন্য উল্টো দিকের মানুষটির ‘শাস্তি’ প্রাপ্য। এই শাস্তির নিদানের মধ্যে কোথাও একটা ক্ষমতার রসায়ন রয়েছে।’’
এই ধরনের সমস্যা কিন্তু সব সময়ে সম্পর্ক ভেঙে গেলেই হয় এমনটা নয়। অনুত্তমা জানান, অনেক ক্ষেত্রেই সম্পর্কে থাকাকালীনও হিংসার বহিঃপ্রকাশ দেখা যেতে পারে। এমনকি, অনেক সময় কোনও এক জন সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলেও ‘হয় আমি মরে যাবো কিংবা তোমায় শেষ করে দেব’ জাতীয় কথা বলতেও দেখা যায় অনেককে। এই হুমকির ভয়ে অনেকেই বেরোতে পারেন না সম্পর্ক থেকে।
অনুত্তমা বলেন, ‘‘এই ধরনের সমস্যায় প্রয়োজনে আইনের সহায়তা নিতে হবে। অনেক সময়ে এই ধরনের বিষয়কে অনেকে তীব্র প্রেমের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করতে পারেন। কিন্তু এর মধ্যে যতটা না প্রেম আছে, তার চেয়ে অনেক বেশি অধিকারবোধ ও কুক্ষিগত করার চর্চা আমরা দেখতে পাই। এই ধরনের হুমকিকে হালকা ভাবে নেওয়া ঠিক নয়। হিংস্রতার নির্যাস থাকলে সময় থাকতে সতর্ক হওয়াই বাঞ্ছনীয়।’’