Relationship

অন্য ‘বেলাশুরু’, স্বামীহারা নিঃসঙ্গ মায়ের বিবাহ দিলেন কন্যারা

বৃদ্ধ বয়সে মাকে একা অসহায় দেখে তাঁর বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন নাদিরার মেয়েরা। মাত্র দুই মাসের চেষ্টায় গত ৬২ বছর বয়সি মহম্মদ হান্নান খানের সঙ্গে নাদিরা বেগমের বিয়ে দিয়েছেন মেয়েরা।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

কক্সবাজার, বাংলাদেশ শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২২ ১১:২৩
Share:

বেলাশেষেই বেলাশুরু! ছবি: ফেসবুক

জীবনের পথ চলার জন্য সকলের এক জন সঙ্গীর প্রয়োজন হয়। অল্প বয়সে কেউ সঙ্গীহারা হলে সমাজ তাঁর দ্বিতীয় বিবাহ নিয়ে চিন্তাভাবনা করি বটে তবে বয়স একটু বেশি হলে, সন্তান হয়ে গেলে সমাজের চোখে ছবিটা বদলে যায়। নাদিরা বেগমের গল্প সত্যিই সমাজের অনেকের ভাবনা বদলে দিতে পারে। বাংলাদেশের সংবাদপত্র ‘প্রথম আলো’-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বছর ৫৩-র নাদিরার স্বামী পাঁচ বছর আগে আত্মহত্যা করেন। এর পর থেকে দুই মেয়ে জান্নাতুল ফিরদৌস ও মারিয়াম জ্বীমর দায়িত্ব কী ভাবে একা সামলাবেন সেই ভেবে চিন্তায় পড়েন নাদিরা। কোনও রকমে সংসার চালিয়ে বড় মেয়ে জান্নাতুলের বিয়ে দেন তিনি। বড় মেয়ে জান্নাতুল নিরাপত্তার কথা ভেবে ছোট বোন মারিয়ামকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। সন্তান থেকেও একা হয়ে পড়েন নাদিরা। মাকে একা অসহায় দেখে নাদিরার ফের বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মেয়েরা। যেমন ভাবনা, তেমন কাজ! মাত্র দুই মাসের চেষ্টায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর ৬২ বছর বয়সি মো. হান্নান খানের সঙ্গে নাদিরা বেগমের বিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

এই বিয়ে নিয়ে বেশ উৎসাহিত ছিলেন নাদিরার জামাই মাহমুদুল ইসলাম। শাশুড়ির বিয়েতে উকিলের ভূমিকায় ছিলেন স্বয়ং জামাই।

প্রথম বিয়েতে নাদিরা বেগম ২৮ বছর সংসার করেছেন। আর নতুন বিয়ের পর পার দশ দিনও পার হয়নি। নাদিরা বেগম ও হান্নান খান ইতিমধ্যেই নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এরই ফাঁকে দু’জন দু’জনকে একান্তে সময়ও দিচ্ছেন। তবে দু’জনই হাসিমুখে জানিয়েছেন, তাঁরা সঙ্গী নির্বাচনে ভুল করেননি। এ বয়সে এসে তাঁরা চেয়েছিলেন, জীবনসঙ্গী যেন ভাল মানুষ হন, সে বিষয়ে তাঁদের মধ্যে এখন আর কোনও দ্বিধা নেই।

Advertisement

নাদিরা বেগম জানিয়েছেন, স্বামী হান্নান খান সহজে রেগে যান না, পান-সিগারেটের নেশা নেই। স্বামীর হাসিটা তাঁর মনে ধরেছে। হান্নান খান জানিয়েছেন, নাদিরার সোজাসাপ্টা কথা বলার ভঙ্গিই তাঁর বেশি পছন্দ।

মায়ের বিয়ের বিষয়টা নেটমাধ্যমে পোস্ট দেবেন কি না, তা নিয়েও অনেক ভেবেছেন জান্নাতুল। আদৌ কি তাঁদের এই সিদ্ধান্ত লোকে ভাল চোখে দেখবে? মনে নানা ধরনের চিন্তা চলছিল তাঁর। তবে মনে সাহস নিয়ে ফেসবুকে মায়ের বিয়ের ছবি পোস্ট করেই দিলেন তিনি। নেটমাধ্যমে এত বেশি ইতিবাচক প্রচার দেখে নাদিরার মেয়েরা সত্যিই অবাক হয়েছেন।

জান্নাতুল বলেন, ‘‘একা বেঁচে থাকাটা এক প্রকার শাস্তি। আর এমন শাস্তি পাওয়ার মতো কোনো অন্যায় তো করেননি। তা হলে কেন শেষ সময়টা একা থাকবেন? কেন তাঁর পাশে কথা বলার একটা মানুষ থাকবেন না?’’

জান্নাতুল আরও বলেন, ‘‘এক দিকে আর্থিক সঙ্কট, অন্য দিকে এই সমাজে একজন বিধবা নারী হিসেবে মাকে শুনতে হয় নানা কটু কথা। কেউ ফোনে মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক করতে চান, কেউ সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দেন। কেউ বাজে মন্তব্য করেন। এ ভাবেই চলছিল।’’

বিয়ের ঘটকালি অ্যাপ থেকে হান্নান খানের সম্পর্কে জানতে পারেন নাদিরার মেয়েরা। তার পর তাঁরাই পাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বনলতা রেস্তরাঁয় হবু বর-কনের দেখা হয়। তার পর এই বিয়ে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement