ফাইল চিত্র।
দীর্ঘদিন ধরেই কিডনির অসুখে ভুগছেন বছর পঞ্চাশের প্রৌঢ়। যদিও পেশার তাগিদে বৈশাখের তাপদাহের মধ্যে থেকেই কাজ করতে হয় তাঁকে। তীব্র গরমে গলা শুকিয়ে কাঠ। কিন্তু, ডাক্তারের বেঁধে দেওয়া নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি জল কি খাওয়া যাবে? ভেবেই পাচ্ছিলেন না তিনি।
তীব্র তাপে অতিরিক্ত ঘাম বেরিয়ে যাওয়ায় শরীরে জলশূন্যতা তৈরি হওয়া এখন বড় সমস্যা। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, রোদে কাজ করতে হয় এবং কিডনির ক্রনিক অসুখ বা সিকেডি-তে ভুগছেন, এমন রোগীদের ক্ষেত্রে ‘ডিহাইড্রেশন’ বা শরীরে জলশূন্যতা তৈরি হলে তা মারাত্মক ক্ষতিকর। বিষয়টিকে কোনও ভাবেই অবহেলা করা যাবে না। বরং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজন মতো জল খাওয়ার পরিমাণ বাড়াতে হবে। এক ডাক্তারের কথায়, ‘‘পরিমিত জল পানের কথা বলা হয় স্বাভাবিক সময়ের জন্য। কিন্তু প্রতিনিয়ত রোদে থাকলে ঘাম ঝরে শরীরে জলশূন্যতা তৈরি হতে পারে। তাতে কিডনির উপরে আরও চাপ পড়বে। তাই ডাক্তারের থেকে জানা উচিত, কতটা অতিরিক্ত জল পান করা যাবে।’’
নেফ্রোলজিস্টরা জানাচ্ছেন, কিডনির ক্রনিক অসুখে ভোগা রোগীদের ক্ষেত্রে জল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাঁদের শরীরে জলের মাত্রা দ্রুত কমতে থাকলে বা জলশূন্যতা তৈরি হলে কিডনিতে চাপ বাড়ে। ফলে রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হয়। তাতে কিডনি আরও বিকল হয়ে রোগীর প্রাণের ঝুঁকি কয়েক গুণ বাড়তে পারে। দেহে নুন ও জলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে কিডনি। তবে সেটির ক্রনিক অসুখে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে তা ব্যাহত হয়। ফলে গরমে ঘাম বেরিয়ে জল ও নুনের ঘাটতি তৈরি হয়। এন আর এসের নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক পিনাকী মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, কিডনির ক্রনিক সমস্যা বিভিন্ন স্তরের হয়। ধরা যাক, কোনও রোগীকে দিনে দেড় লিটার জল মেপে খেতে বলা হয়েছে। কিন্তু এই গরমে প্রতিদিন রোদে তাঁকে কাজ করতে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে যতটা জল বেরিয়ে যাচ্ছে, সেই ঘাটতি ওই দেড় লিটার জল পূরণ করতে পারছে না। পিনাকীবাবু বললেন, ‘‘ঘামের মাধ্যমে দৈনিক ১০-১২ লিটার জল শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। তখন দেড় লিটার জলের উপরে ভরসা করলে চলবে না। ৮০০ মিলিলিটার থেকে এক লিটার পর্যন্ত অতিরিক্ত জল পান করা উচিত। তবে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নিলে ভাল।’’ তিনি জানাচ্ছেন, কিডনির ক্রনিক সমস্যায় ভোগা প্রবীণদের এই গরমে আচমকা দুর্বলতা ও ক্লান্তি ভাব দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন। সিকেডি-র রোগীদের বাইরে যেতে টুপি, ছাতা, রোদচশমা, সান-ক্রিম ব্যবহার করা ভাল। পরতে হবে শরীর ঢাকা সুতির পোশাক।
বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালের নেফ্রোলজিস্ট অরূপরতন দত্ত জানাচ্ছেন, কিডনির ক্রনিক অসুখের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ের পরে রোগীর শরীর ফুলে যেতে থাকে। অর্থাৎ, কিডনি জল বার করতে না পারায় তা জমতে থাকে। ওই রোগীদের জল মেপে পান করতে বলা হয়। তা বলে কাউকে রোজ রোদে কাজ করতে হলে তাঁর ক্ষেত্রে সেই মাপ প্রযোজ্য নয়। অরূপরতনবাবু বলেন, ‘‘ওই রোগীকে জলের যে পরিমাণ বলা হয়েছিল, তা হয়তো শীতকালীন পরামর্শ। কিন্তু তাঁকে রোদে বেশিক্ষণ থাকতে হলে জলের পরিমাণ আনুপাতিক হারে বাড়াতেই হবে।’’ তবে কিডনির ক্রনিক অসুখে ভোগা যে সমস্ত রোগী এসি-তে বসেই বেশি কাজ করছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে জলের পরিমাণ খুব বেশি না বাড়ালেও চলে। অরূপরতনবাবুর কথায়, ‘‘যাঁদের বেশি ঘরে বসে কাজ, তাঁরা গরমের সংস্পর্শে বেশি আসছেন না। তাই শরীরে জলের ঘাটতি ততটা তৈরি হচ্ছে না।’’ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ওই রোগীরা দিনে ২০০-৩০০ মিলিলিটার বেশি জল খেলে ক্ষতি নেই। তাঁরা আরও জানাচ্ছেন, কিডনির ক্রনিক অসুখে ওআরএস বা লেবুর শরবত উপযুক্ত নয়। কারণ তাতে পটাশিয়াম বেশি থাকে, যা কিডনির পক্ষে ক্ষতিকর।