লাল পিঁপড়ের স্বাদ চেখে দেখবেন নাকি?
যে কোনও খাবারের সঙ্গে যদি পাতে একটু চাটনি পড়ে তা হলে খাবারের স্বাদে যেন আলাদা মাত্রা যোগ হয়। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন প্রকার চাটনির প্রচলন। উত্তর ভারতে যেমন খাবারের সঙ্গে বেশ ঝাল চাটনির চল রয়েছে, তেমনই পূর্ব ভারতে আবার লোকজন মিষ্টি চাটনির স্বাদ নিতে পছন্দ করেন।
রসুন, ধনেপাতা এমনকি মাছ দিয়েও চাটনি বানিয়ে খাওয়ার চল রয়েছে ভারতে। তবে লাল পিঁপড়ে দিয়েও যে চাটনি হয়, সে খবর জানতেন? ভাবছেন বুঝি হেঁয়ালি করছি! আজ্ঞে না!
লাল পিঁপড়ের একটা কামড় খেলেই শরীরে যন্ত্রণা এবং র্যাশ অবধারিত। আর তার সঙ্গে চুলকানির জ্বালায় প্রাণ যায় যায় অবস্থা। ফলে এর থেকে দূরত্ব বজায় রাখাই শ্রেয় বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু সেই পিঁপড়ে দিয়েই যদি বানিয়ে ফেলা যায় সুস্বাদু চাটনি? অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্যি। লাল পিঁপড়ে দিয়ে তৈরি সুস্বাদু চাটনি পেতে পারে জিআই তকমাও। কোন রাজ্যে মেলে এমন অভিনব খাবার?
ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলাতে গেলেই পেতে পারেন এই চাটনির স্বাদ। মূলত আদিবাসী অধ্যুষিত এই এলাকাতেই কাই চাটনি খাওয়ার চল রয়েছে। দেশের অন্য অংশের বাসিন্দারা নাক শিঁটকালেও ময়ূরভঞ্জের মানুষের কাছে এই চাটনি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর খাবার। তাঁদের মতে, কাই চাটনিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালশিয়াম, জিঙ্ক, ভিটামিন বি-১২, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, কপার, ফাইবার এবং ১৮ রকমের অ্যামিনো অ্যাসিড। জিভে জল আনা এই পিঁপড়ের চাটনি খেলে নাকি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে।
প্রতীকী ছবি।
কী ভাবে তৈরি হয় লাল পিঁপড়ের চাটনি?
লাল পিঁপড়ের বৈজ্ঞানিক নাম ওইসোফিল্লা সামারাগডিমা। গোটা বছরই এই পিঁপড়ে ময়ূরভঞ্জ এলাকায় দেখা যায়। গাছের পাতা দিয়ে তৈরি বাসায় খোঁজ মেলে এই বিশেষ প্রজাতির পিঁপড়ের। সেখান থেকেই পিঁপড়ে সংগ্রহ করে আনেন আদিবাসীরা। এর পর জলের মধ্যে গাছের পাতায় লেগে থাকা ওই পিঁপড়েগুলিকে ডুবিয়ে রাখা হয়। এর পর লার্ভা ও ডিম আলাদা করা হয়। হরেক রকম মশলার সঙ্গে সেগুলি বেটে তৈরি করা হয় কাই চাটনি।
ওড়িশা ছাড়াও ছত্তিশগড় ও ঝাড়খণ্ডের বেশ কিছু অঞ্চলেও এই চাটনি খাওয়ার চল রয়েছে। ইতিমধ্যেই জিআই ট্যাগ পাওয়ার জন্য ময়ূরভঞ্জবাসীরা আয়ুশ মন্ত্রকের কাছে চিঠি জমা করেছেন। এই আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভের পর এই চাটনি সারা বিশ্ব জুড়ে পরিচিতি পাবে। সেই সঙ্গে ময়ূরভঞ্জবাসীর ব্যবসায়িক উন্নতিও সম্ভব হবে।