গত ১৫ বছর ধরে ‘চশমা পরে তোর ছবি ভাল আসছে না’, এই কথাটা শুনতে শুনতে ক্লান্ত শ্রেয়া। এ দিকে কনট্যাক্ট লেন্স তো টানা সাত-আট ঘণ্টার বেশি পরা যায় না। তা হলে চশমার বদলে স্থায়ী সমাধান কী? ইন্টারনেট হাতড়ে শ্রেয়া আবিষ্কার করল ল্যাসিক সার্জারির কথা।
ল্যাসিক সার্জারি কী?
চক্ষু বিশেষজ্ঞ মৃণ্ময় দাস বললেন, “ল্যাসিক হচ্ছে মানুষের চোখে আলোর প্রতিসরণজনিত দূরদৃষ্টির ত্রুটিকে লেজ়ার প্রযুক্তির মাধ্যমে স্থায়ী ভাবে নির্মূল করার অত্যাধুনিক পদ্ধতি। এখন নয়া প্রজন্মের একটা অংশ ল্যাসিক সার্জারির দিকে ঝুঁকছে। তাঁদের যুক্তি, চশমা পরলে দেখতে ভাল লাগে না। কনট্যাক্ট লেন্সও বিস্তর ঝক্কির। আবার পেশাগত কারণেও অনেকে চশমা-লেন্স ছাড়তে চাইছেন।”
কী ভাবে করা হয়?
চিকিৎসক জানাচ্ছেন, চোখের সামনের দিকে গোল কাচের মতো উত্তল স্বচ্ছ অংশের নাম কর্নিয়া। আলোর প্রতিফলন ও প্রতিসরণের ৬০ শতাংশ হয় এর উপরেই। তাই কর্নিয়ার কোনও গঠনগত সমস্যা থাকলে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। দীর্ঘ দিন ধরে যাঁদের চোখে প্লাস ৬ এবং মাইনাস ৭ থেকে ৮ পর্যন্ত পাওয়ার রয়েছে, একটি নির্দিষ্ট বয়সের পরে তাঁদের কর্নিয়ার বেধ অনুসারে এই ল্যাসিক সার্জারি করা হয়ে থাকে।
ভারতীয়দের কর্নিয়ার বেধ গড়ে ৫২০ মাইক্রন হয়ে থাকে। কর্নিয়ার এই পুরুত্ব স্বাভাবিকের আশেপাশে থাকলে ল্যাসিক সার্জারি করানো যাবে বলে জানালেন চিকিৎসকমৃণ্ময় দাস।
সে ক্ষেত্রে মাইক্রোকেরাটোম বা ফেমটোসেকেন্ড লেজ়ার পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন চিকিৎসকেরা। প্রথমেই ৯০ থেকে ১১০ মাইক্রনের একটি স্তর কর্নিয়া থেকে অস্ত্রোপচার করে তুলে নেওয়া হয়। এর পরে ফের লেজ়ার পদ্ধতি (এক্সিমার লেজ়ার) ব্যবহার করে কর্নিয়ার বেশ কিছু টিসুকে অপসারণ করা হয়। এ বার আগে থেকে তুলে রাখা কর্নিয়ার স্তরটি (স্ল্যাব) আবার চোখে বসিয়ে দেওয়া হয়। কোষের এপিথেলিয়াম স্তর গঠনের মাধ্যমে কর্নিয়ার স্তরটি ফের জুড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে সেলাই করার প্রয়োজন পড়ে না। এই পদ্ধতিটিকেই বলা হয় ‘লেজ়ার অ্যাসিস্টেড ইন-সিটু কেরাটোমিলিউসিস’, সংক্ষেপে ল্যাসিক। ল্যাসিক সার্জারি মূলত দু’টি পদ্ধতিতে করা হয়ে থাকে— প্রথমটি হল, মাইক্রোকেরাটোম ব্লেডের মাধ্যমে কর্নিয়ার স্ল্যাব কাটা হয়। যদিও এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায় বর্তমানে এই পদ্ধতিটি সে ভাবে ব্যবহার করা হয় না। দ্বিতীয়টি হল, ফেমটোসেকেন্ড লেজ়ার ব্যবহার করে ল্যাসিক সার্জারি। এটি বর্তমানে বহুল প্রচলিত একটি অস্ত্রোপচার পদ্ধতি।
কর্নিয়ার এই স্তরটি জুড়তে কত দিন লাগবে?
চিকিৎসক জানালেন, এক রাতের মধ্যেই এপিথেলিয়াম গঠনের মাধ্যমে কর্নিয়ার স্তরটি জুড়ে যায়। ল্যাসিক সার্জারি হওয়া ব্যক্তি পরের দিন সকাল থেকে চশমা ছাড়াই সব কিছু দেখতে পান।
কারা সার্জারি করাতে পারেন?
সার্জারির পরে যেগুলি করা যাবে না
খরচ কেমন?
কোন পদ্ধতিতে সার্জারি হচ্ছে, তার উপরে নির্ভর করে মোটামুটি ৪০ হাজার (মাইক্রোকেরাটোম ব্লেড) থেকে ৭৫ হাজার (ফেমটোসেকেন্ড লেজ়ার) খরচ হয়ে থাকে।
কনট্যাক্ট লেন্স পরায় বিধিনিষেধ
যিনি ল্যাসিক সার্জারি করাবেন, তাঁকে শেষ ১৫ দিন কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয় বলে জানালেন ডা. দাস। অস্ত্রোপচারের আগে বেশ কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা প্রয়োজন হয়, যা কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করলে সমস্যা হয়।
পাওয়ারের জন্য যাঁরা কনট্যাক্ট লেন্স পরেন, সার্জারির পরে তাঁদের লেন্স পরার দরকার হয় না। তবে রূপসজ্জার অঙ্গ হিসেবে যাঁরা লেন্স ব্যবহার করেন, তাঁদের সার্জারির এক থেকে দেড় মাস পরে লেন্স ব্যবহারের ছাড়পত্র দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।
চিকিৎসক জানালেন, এখন অনেকেই চশমা বা কনট্যাক্ট লেন্সের ঝক্কির বদলে স্থায়ী সমাধান হিসেবে ল্যাসিক সার্জারির দিকে ঝুঁকছেন। যদিও বুঝতে হবে, সকলের ক্ষেত্রে এই অস্ত্রোপচার সম্ভব নয়। যাঁদের কর্নিয়া ৫২০ মাইক্রনের চেয়ে অনেকটাই কম, তাঁদের এই সার্জারি করানো উচিত নয়। সে ক্ষেত্রে ইমপ্ল্যান্টেবল কলামার লেন্স বসানো হয়ে থাকে। তাই নিজেকে আকর্ষক করতে গিয়ে দৃষ্টিশক্তি যাতে না হারাতে হয়, সে কথাও মনে রাখতে হবে।