ভারতে টুইটারের জনপ্রিয়তা ছুঁতে চাইছে নতুন অ্যাপটি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
ভারতে হঠাৎই জনপ্রিয়তা বেড়ে গিয়েছে ‘কু’ নামক অ্যাপের। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, ব্যবহারকারীর গোপন তথ্য ফাঁস করারও। শোনা যাচ্ছে, চিনের কাছে ভারতীয় ব্যবহারকারীদের তথ্য ফাঁস হয়ে যেতে পারে এই অ্যাপের মাধ্যমে।
কঙ্গনা রানাউত, সদগুরু থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গয়াল, রবিশঙ্কর প্রসাদের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব ইতিমধ্যেই নিজেদের অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলেছেন এই নেটমাধ্যমটিতে। নিজেদের ‘আত্মনির্ভর ভারত অ্যাপ’ বলে দাবি করা নেটমাধ্যমটি হঠাৎ বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে ভারতের বাজারে। রাতারাতি পৌঁছে গিয়েছে ভারতে সবচেয়ে জনপ্রিয় ৫টি অ্যাপের তালিকায়। কিন্তু তারপরেও বিতর্ক তাড়া করছে এই অ্যাপটিকে।
বছর খানেক আগে এক ফরাসি সংস্থা তাদের তদন্তে দেখিয়েছিল, আধার কার্ডের তথ্য কী ভাবে ফাঁস হয়ে যেতে পারে। তারাই ‘কু’ অ্যাপের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে, এর মাধ্যমে ফাঁস হয়ে যেতে পারে ব্যবহারকারীর জন্ম তারিখ, ই মেল আইডি, ফোন নম্বরের মতো গোপন তথ্য।
ফরাসি তদন্তকারী সংস্থার অন্যতম প্রধান রবার্ট ব্যাপতিস্তে বুধবার রাতে নেটমাধ্যমে একটি ছবি প্রকাশ করে দেখান, কী ভাবে ‘কু’ থেকে এক ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য তিনি জানতে পেরেছেন। শুধু তাই নয় তিনি জানান, মাত্র আধ ঘণ্টাতেই অ্যাপটির নিরাপত্তাবেষ্টনী তিনি ভেঙে ফেলতে পেরেছেন।
কু বনাম টুইটার।
তবে এর পাশাপাশি উঠে এসেছে ‘কু’-এর সঙ্গে চিনের যোগাযোগের অভিযোগও। কারণ অ্যাপের মালিকানায় অংশীদারিত্ব রয়েছে চিনের এক সংস্থার। ফলে অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, এই অ্যাপের মাধ্যমে ভারতীয়দের তথ্য চলে যাচ্ছে চিনের কাছে। যদিও ‘কু’-এর অন্যতম নির্মাতা অপ্রমেয়া রাধাকৃষ্ণের দাবি, চিনের সংস্থাটি নিজেদের অংশীদারিত্ব বিক্রি করে দিচ্ছে। ফলে এই অ্যাপের মালিকানা পুরোপুরি ভারতীয়দের হাতে চলে আসবে।
শুধু এটাই নয়, ‘কু’-এর বিরুদ্ধে নেটমাধ্যমে আরও বেশ কয়েকটি অভিযোগ উঠেছে। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণটি হল, এর সঙ্গে তুলনা হচ্ছে ‘ম্যাস্টোডন’ বা ‘পার্লার’ জাতীয় অ্যাপের সঙ্গে। আমেরিকার দক্ষিণপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় এই নেটমাধ্যমগুলো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হায়ার বলসোনারো-র পক্ষে প্রচারে বড় দায়িত্ব নিত। ঠিক একই রকম ভাবে ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারের নানা কাজকর্মের পক্ষে সওয়াল করার কথাও নাকি বলছে ‘কু’। অনেকেই এমনটাই দাবি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী-সহ বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের বহু মন্ত্রী থেকে বিজেপি-র অনেক নেতা-নেত্রীর বক্তব্য ইতিমধ্যেই অ্যাপটির ‘ট্রেন্ডিং’ বিভাগে স্থান পেয়েছে। স্থান পেয়েছে ‘ভারতে টুইটার নিষিদ্ধকরণ’-এর দাবিও।
এ রকম নানাবিধ অভিযোগ উঠলেও, এখনও পর্যন্ত এই অ্যাপটির বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগই প্রমাণিত নয়। বরং দেখা যাচ্ছে, অ্যাপটির জনপ্রিয়তা ভারতে বিপুল হারে বাড়ছে।