ঘরে বসেই সম্ভব বিশ্বভ্রমণ।
কোভিডের কারণে বেড়াতে যাওয়া প্রায় শিকেয় উঠেছে। ঘরের কাছে যদিও বা টুকটাক ঘুরতে যাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু বিদেশ ভ্রমণ শূন্যতে। তবে এর মধ্যেও বাড়ছে ভ্রমণ। সৌজন্যে প্রযুক্তি।
পরিসংখ্যান বলছে, ‘ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি’ বা ‘ভিআর’-এর দৌলতে ঘরে বসেই অনেকে ছুটে চলে যাচ্ছেন পিসার টাওয়ারের সামনে, মিশরের পিরামিডের দোরগোড়ায় বা কেনিয়ার জঙ্গলে। দরকার শুধু বিশেষ ধরনের চশমা আর কানে গোঁজার স্পিকার বা ইয়ারফোন। হালে এই ভাবে ঘরে বসে বিশ্বভ্রমণ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে নতুন প্রজন্মের কাছে।
বহু দিন ধরেই এই ‘ভার্চুয়াল ভ্রমণ’ জনপ্রিয় হচ্ছিল। বিভিন্ন জাদুঘর অনলাইনে তাদের অন্দরমহল ঘুরে দেখার ব্যবস্থা করে দিচ্ছিল। কোভিড-কালে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে চরম উন্নতি হয়েছে। তার ফলে এই ‘মানস ভ্রমণ’ও এখন প্রায় আসলের মতোই সত্যির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। এমনকি, বিভিন্ন সংস্থা পর্যটকদের জন্য বানিয়ে ফেলছে বিশেষ ধরনের ভ্রমণের প্যাকেজও। যেমন, বেসরকারি এক প্রতিষ্ঠান পর্যটকদের জন্য ব্যবস্থা করেছে আন্টার্কটিকায় এক বিশেষ ভ্রমণের। চোখে এই ‘ভিআর’-চশমা, আর কানে স্পিকার গুঁজে গা এলিয়ে বসে পড়ুন নিজের সোফায়। পৌঁছে যাবেন আন্টার্কটিকা মহাদেশের সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায়। বরফের চাঙড়ের ফাঁক দিয়ে ঘুরে বেড়াবেন নৌকায় চেপে। পেনগুইনের বাসস্থান খুঁজতে গিয়ে হঠাৎই পড়ে যেতে পারেন দক্ষিণ মেরুর প্রবল ঝড়ের সামনে। সব মিলিয়ে পুরোদস্তুর আন্টার্কটিকা অ্যাডভেঞ্চারের সব রসই পাওয়া যাচ্ছে ঘরে বসে।
কতটা বদলেছে এই ‘ঘরে বসে ভ্রমণ’-এর ধরন? কোভিড পরিস্থিতির আগে বেশির ভাগ মানুষই কোথাও বেড়াতে যাওয়ার আগে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতেন। তাতে গোটা বেড়ানোর পরিকল্পনা করতে সুবিধা হতো বলেই অনেকে মনে করতেন। কিন্তু এখন আর তা নয়। এখন বেড়ানোর মাধ্যমই হয়ে দাঁড়িয়েছে এটি।
কিন্তু বেড়ানো মানে তো শুধু দেখা আর শোনা নয়। প্রকৃতি বা শিল্পকীর্তিকে ছুঁয়ে দেখা, তার গন্ধ, কিংবা নতুন কোনও জায়গার অজানা একটা খাবারের স্বাদ— সবই তো ভ্রমণের অঙ্গ। সেই হিসেবে কোভিডের ঘেরাটোপ থেকে বেরোনোর পরে আদৌ আর গুরুত্ব থাকবে কি এই প্রযুক্তিনির্ভর ভ্রমণবিলাসের? অনেকের মতেই, হয়তো ততটাও থাকবে না। তবু এই ভার্চুয়াল মাধ্যমে ভ্রমণ বহু সমস্যার সমাধানও ভবিষ্যতে করে দেবে বলে মনে করছেন অনেকে। এমন বহু শিল্পকীর্তি বা স্থাপত্য রয়েছে, বহু সংখ্যক পর্যটকের আনাগোনার কারণে যাদের হাল ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। এই সব ক্ষেত্রে প্রযুক্তিনির্ভর ভ্রমণ খুবই লাভের হবে বলেও মত অনেকের। তাই কোভিড চলে গেলেও এই ‘ঘরে বসে ভ্রমণ’ হারিয়ে যাবে না।