—প্রতীকী চিত্র।
আ উয়োম্যান হু কাটস হার হেয়ার ইজ় অ্যাবাউট টু চেঞ্জ হার লাইফ বলেছিলেন বিখ্যাত ফরাসি ফ্যাশন ডিজ়াইনার কোকো শ্যানেল। আর যিনি চুল পুনরুজ্জীবিত করতে চান, তিনিও কি নতুন ভাবে নিজেকে দেখতে চান না? আসলে চুলে রং, হাইলাইট, স্মুদনিং বা নষ্ট হয়ে যাওয়া চুল নতুন ভাবে বাঁচিয়ে তোলা... সবের মধ্যেই ‘আমি’কে নতুন রূপে আবিষ্কারের স্পৃহা রয়েছে। আমরা নিজেকে কী ভাবে দেখতে চাই বা দেখাতে চাই তার মধ্যে রয়েছে মনস্তত্ত্ব। সেই তো চালনা করছে বাইরের দেখনদারিকে। কিন্তু যে চুল-কে ঘিরে স্বপ্নেরা অবয়ব নিতে চাইছে, সে-ই যদি নিষ্প্রাণ হয়ে যায়? সেখানেই আবির্ভাব হয় ন্যানোপ্লাস্টিয়ার।
এই নতুন ট্রিটমেন্টের গুণ হল, চুলের গোড়া থেকে তার মধ্যে প্রাণের সঞ্চার করে। প্রযুক্তির এই নয়া যুগে সৌন্দর্য পিছিয়ে থাকবেই বা কেন! সামনেই পুজো। এ সময়ে সকলেই কম-বেশি চায় অপূর্ণতাকে পূর্ণতায় বদলে নিতে। তাই রুক্ষ চুলেও আসুক জেল্লা। তারই উপায় হিসেবে ন্যানোপ্লাস্টিয়া সম্পর্কে বিশদে জেনে নেওয়া যাক।
কখন প্রয়োজন
মেকওভারের জন্য অনেকেই বারবার হেয়ার কালার বদলে থাকেন বা হাইলাইট করান। রেশমের মতো চুল যাঁদের পছন্দ, তাঁরা স্মুদনিং বা স্ট্রেটনিংয়ের শরণাপন্ন হন নির্দিষ্ট সময় অন্তর। আবার পেশার কারণেও অনেককে চুলে নিয়মিত বিভিন্ন প্রডাক্ট ব্যবহার করতে হয় ও হিট দেওয়া হয়। কিন্তু এ সবের ফলে চুল ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে, ভঙ্গুর হয়ে যায়। হেয়ার এক্সপার্ট জলি চন্দ বললেন, “বারবার হাইলাইট করে বা টং করে কিংবা হেয়ার স্টাইলিংয়ের জন্য নানা প্রডাক্ট ব্যবহার করে যাঁদের চুল নষ্ট হয়ে গিয়েছে এবং খুব চুল উঠছে, তাঁদের চুলে জেল্লা এনে দেবে ন্যানোপ্লাস্টিয়া। ভার্জিন হেয়ারে এই ট্রিটমেন্ট করা হয় না, কারণ কেরাটিন মজুত রয়েছে। ন্যানোপ্লাস্টিয়ার মাধ্যমে চুলে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উপাদানের একটি কোটিং দেওয়া হয়, যা কর্টেক্সের ভিতর পর্যন্ত গিয়ে চুল উজ্জ্বল করে তোলে।” রুক্ষ চুলে এই ট্রিটমেন্ট ভিতর থেকে ঔজ্জ্বল্য আনে। ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে যে কোটিং দেওয়া হয় তার ভিতরে রয়েছে এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড, ওজ়োন, প্রোটিন, এমনকি নারকেল তেলও। চুল পড়ে যাওয়া হোক বা ত্বকের সমস্যা, বঙ্গনারী তো চিরকালই ভরসা রেখেছে নারকেল তেলে।
পদ্ধতি
“ন্যানোপ্লাস্টিয়া করার আগে চুলে হেনা বা ডাই করা হয়েছে কি না, কালার রয়েছে কি না, কোনও স্টাইলিং প্রডাক্ট ব্যবহার হয়েছে কি না, সেগুলো জেনে নেওয়া হয়। চুলে কোন প্রডাক্ট কতক্ষণ রাখা হবে, তা এই বিষয়গুলোর উপরে নির্ভর করে,” ট্রিটমেন্টের গোড়ার কথা প্রসঙ্গে বললেন জলি।
প্রথমেই চুলে শ্যাম্পু করে নেওয়া হয়, কারণ চুলে তেল বা ময়লা লেগে থাকলে কোনও প্রডাক্ট ঢুকবে না। তা ছাড়া অঞ্চলভেদে জলে আয়রনেরও তারতম্য হয়। চুল ব্লন্ড বা স্ট্রেটনিংয়ের কারণে খুব রুক্ষ হয়ে গেলে একটি বিশেষ ধরনের সেরাম স্প্রে করা হয়, যাতে ভিতর থেকে উজ্জ্বলতা আসে। চুলের গোড়া থেকে এক ইঞ্চি দূরত্বে ক্রিম লাগানো হয় ও এক থেকে দেড় ঘণ্টা রাখা হয়। যদি কোনও কারণে বেশি প্রডাক্ট লাগানো হয়ে গিয়ে থাকে, তার জন্য চুল হালকা করে উপর থেকে ধুয়ে নেওয়া হয়, যাতে টেন পারসেন্ট মতো প্রডাক্ট বেরিয়ে যায়। তার পর সেরাম লাগিয়ে ব্লো ড্রাই করার পরে আয়রন করা হয়। প্রতিটি চুল ভাল ভাবে আয়রন করতে হবে, যাতে প্রডাক্টটা হিটের সঙ্গে চুলের ভিতরে ঢোকে। স্বাভাবিক উষ্ণতায় এলে জল দিয়ে ভাল করে চুল ধোয়া হয়। তার পরে মাস্ক লাগানো হয়। মিনিট পনেরো পরে ভাল করে ধুয়ে ব্লো ড্রাই করা হয়।
পুরো ট্রিটমেন্ট সম্পূর্ণ হতে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগে। খরচ নির্ভর করে চুলের দৈর্ঘ্য ও ঘনত্বের উপরে, মোটামুটি ভাবে পাঁচ হাজার টাকা থেকে শুরু হয়।
পরবর্তী ধাপ
ভারতীয় চুল যেহেতু সাধারণ ভাবে বেশ শক্ত এবং কোঁকড়া, তাই এ ধরনের ট্রিটমেন্ট করার পরে অন্তত দু’দিন শ্যাম্পু করতে বারণ করা হয়। তবে ট্রিটমেন্টের পরে সালফেট ফ্রি, প্যারাবেন ফ্রি শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করলে চুল ভাল থাকে। ন্যানোপ্লাস্টি করার পরে চুল যেহেতু একটা বর্ম পেয়ে গেল, তাই এর পরে অনায়াসে কালার বা হাইলাইট করা যায়।
তাই এ বার পুজোর আগে নষ্ট হয়ে যাওয়া রুক্ষ চুলেও ফিরে আসুক ঔজ্জ্বল্য।
ছবি: সর্বজিৎ সেন