শারীরচর্চার পরামর্শ যে কোনও বয়সি ব্যক্তিকেই দেওয়া হয়ে থাকে। তবে সব বয়সেই কি এক্সারসাইজ় করার মতো শারীরিক অবস্থা থাকে? পঞ্চাশ পেরোলেই কোমর-পা-ঘাড় ও অন্যান্য জয়েন্টের ব্যথা কাবু করে ফেলে অনেককে। অস্টিয়োআর্থ্রাইটিস, উচ্চরক্তচাপ-সহ নানাবিধ অসুখে ভোগেন বহু ষাটোর্ধ্ব। এই সব রোগের নিরাময়ে শারীরচর্চা উপকারী হলেও অনেকেরই ক্ষমতা থাকে না তা প্র্যাকটিস করার। ব্যায়ামের সময়ে অতিরিক্ত চাপ বা বেকায়দায় চাপ পড়ে গেলেও হতে পারে হিতে বিপরীত। তাই বয়স বাড়লে ফিটনেস বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে বিশেষ ধরনের কিছু শারীরচর্চার অভ্যেস তৈরি করা দরকার। বিশেষ অসুখের জন্য বিশেষ ধরনের ব্যায়াম তো রয়েছেই। তা ছাড়া সাধারণ ভাবে প্রৌঢ়রা যে ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকেন, তার জন্য রইল কিছু সহজ সমাধান।
পঞ্চাশ পেরোলে চাপ
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক মুভমেন্ট যত কমে আসে, সেডেন্টারি লাইফস্টাইলে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন মানুষ, ততই বাড়ে শরীরের মধ্য প্রদেশ, যা ডেকে আনতে পারে ডায়াবিটিস, ফ্যাটি লিভার, কোলেস্টেরল, হাই প্রেশার এবং গ্যাস্ট্রিকের নানা সমস্যা। বেড়ে যায় স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা। জীবনধারণের নিত্য চাপে হাইপারটেনশন, স্ট্রেসের কারণে ধূমপান বা মদ্যপানের অভ্যেস বেড়ে যায় অনেকের। এ সময়ে হরমোনের তারতম্যের জন্য পুরুষ-নারী নির্বিশেষে অবসাদও গ্রাস করতে পারে। ছেলেদের ভুঁড়ি ও মহিলাদের ক্ষেত্রে স্যাগি টামি বা ঝুলে যাওয়া পেটের কারণে শুরু হয় লোয়ার টেল বোন ও হাঁটুর ব্যথা। শরীরের ভার বহন করতে পারে না কমজোরি হয়ে পড়া হাঁটু ও কোমর। ছেলেদের থাই ও কাফ মাসলের শক্তিক্ষয় হয়। শরীর থলথলে হয়ে পড়ে। উদ্যমে ভাঁটা পড়ে।
ব্যায়াম করুন চেয়ারে বসে
যে বয়সের পরে দাঁড়িয়ে বা ছুটোছুটি করে শারীরচর্চা করার ক্ষমতা চলে যায়, সে সময়ে কিছু হালকা ব্যায়াম শুরু করুন চেয়ারে বসে। ফিটনেস বিশেষজ্ঞ সৌমেন দাস জানালেন, বেশির ভাগ মাঝবয়সি পুরুষ বা মহিলাই নো-মেশিন এক্সারসাইজ়ে ভরসা রাখেন। হাড়ের ক্ষয়, জয়েন্ট পেন-সহ আরও বিভিন্ন কারণেই জিমে গিয়ে ঘাম ঝরানোর পরিবর্ত খোঁজেন তাঁরা। অনেকে এই সময়ে শরণাপন্ন হয়ে থাকেন যোগাসনের। তাতে দীর্ঘমেয়াদি ফল পাওয়া সম্ভব। সঙ্গে নিয়মিত হালকা শারীরচর্চাও চালিয়ে যেতে পারেন। রইল তেমনই কয়েকটি এক্সারসাইজ়ের টিপস।
ফুল বডি টোনিং অ্যান্ড টাইটনিং: চেয়ারে বসে হাত দুটো মাথার উপরে সোজা তুলে দিয়ে লক করে নিন এবং উল্টে দিন। এ বার চেয়ারে বসেই দু’পা ফাঁক করে চওড়া ভাবে দু’পাশে নিয়ে আসুন। হাত মাথার উপরে টানটান করে মাটিতে গোড়ালি রেখে ভর দিয়ে পা দু’টি ওঠান। থাই, ঘাড়, পিঠ ও হাতের সব পেশি টানটান হয়ে থাকবে। ১৬ কাউন্ট করে ১০-১৫ সেট করুন। এই এক্সারসাইজ় দিয়ে শারীরচর্চা শুরু করলে গোটা শরীরের জং ধরা ভাব কেটে যাবে এক ধাক্কাতেই।
সিটেড জগিং: এটি এক ধরনের কার্ডিয়ো এক্সারসাইজ়। বয়স হয়ে গেলে জগিং বা স্পট জগিং করা সম্ভব হয় না অনেকের পক্ষেই। তাই চেয়ারে বসেই সিটেড জগিং করলে শরীরের উপরিভাগের ব্যায়াম হবে এতে। চেয়ারে সোজা হয়ে বসে পড়ুন। এ বার দু’হাত দু’পাশে দিয়ে দৌড়নোর মতো ভঙ্গি করুন। পা মাটিতে শক্ত করে রাখুন। এক-এক বারে ৫০ অবধি গুনে দৌড় শেষ করুন। এই ব্যায়াম করার সময়ে নাক দিয়ে শ্বাস টেনে মুখ দিয়ে ছাড়বেন। অভ্যেস হয়ে গেলে ৫০ থেকে বাড়িয়ে এক বারে ১০০ পর্যন্ত গোনার চেষ্টা করুন।
অ্যাব এক্সারসাইজ়: শরীরের পেশি টোন-আপ করার জন্য জরুরি এই ধরনের ব্যায়াম। লুজ় ফ্যাট ঝরে গিয়ে অ্যাবস টাইট হয় এতে। চেয়ারে বসে পেটের উপরে দু’হাত দিয়ে জোরে শ্বাস নিয়ে তা ধরে রাখুন। ১৬ গুনে ছেড়ে দিন। ১০-১২ সেট করতে হবে এই ব্যায়াম।
থাই অ্যান্ড নি স্ট্রেনদেনিং: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে থাই মাসল আর হাঁটুর জোর বাড়ানোর জন্য এই ব্যায়াম অবশ্যই করুন। চেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা করে বসে একটি একটি করে পা তুলে দিন সোজা। পায়ের আঙুলের ডগা থাকবে ভিতরের দিকে। এ বার হাত দিয়ে হাঁটু বা তারও পরের অংশ ছোঁয়ার চেষ্টা করুন। এক-একটি পা তুলে ১৬ কাউন্ট করে পা নামিয়ে দিন। এ ভাবে ১০-১২ সেট করুন।
এ ছাড়া যোগাসনের অভ্যাস থাকলে ভুজঙ্গাসন করুন। কোমরের জোর বাড়াতে এর জুড়ি নেই। ১৬ কাউন্ট অবধি শরীর ধরে রেখে ছেড়ে দিন, ৬-৮ সেট করতে হবে। পার্কে হেঁটে আসুন, একটু স্ট্রেচিং হবে তাতে।
যে ব্যায়ামই হোক, তা নিয়মিত করুন। তাতে হাড় বুড়োলেও জোর বাড়বে বই কমবে না।