‘কোরিয়ার স্ক্যাম’ বিষয়টি কি? ছবি: শাটারস্টক
অনলাইন কেনাকাটা যত জনপ্রিয় হচ্ছে, ততই বাড়ছে অনলাইনে জালিয়াতি করার প্রবণতাও। অনলাইন জালিয়াতিতে পরে লক্ষ লক্ষ টাকা হারাচ্ছেন গ্রাহকরা। জালিয়াতির জন্য প্রতারকরা নতুন নতুন যন্ত্র আবিষ্কার করছে। ভারতে বাড়ছে ‘কোরিয়ার স্ক্যাম’ বা ‘পার্সেল স্ক্যাম’-এর দৌরাত্ম্য।
সম্প্রতি, বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সের এক জন পিএইচডি ছাত্রী এমনই এক প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এই বিষয় তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। ‘ফেডএক্স’-এর কর্মচারীর নাম করে ওই ছাত্রীর কাছে এক ব্যক্তির ফোন আসে। তার পরেই ওই ছাত্রীর ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট থেকে ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৬৫০ টাকা উধাও যায়। ফোনে ওই ব্যক্তি দাবি করেন যে, ছাত্রীর নামে অবৈধ জিনিসপত্রের একটি পার্সেল আছে। ওই ফোনে আরও এক ব্যক্তিও আসেন, যিনি ছাত্রীর কাছে মুম্বই নারকোটিক্স বিভাগের অফিসার হিসাবে পরিচয় দেন। তার পর ছাত্রীকে একটি স্কাইপ কলে যোগ দিতে বলা হয়। ভিডিয়ো কলে ছাত্রীকে তাঁর বিরুদ্ধে সিবিয়াই ও আরবিআইয়ের তৈরি করা বিভিন্ন নথিও দেখানো হয়। প্রতারকেরা ছাত্রীর কাছ থেকে তাঁর ব্যাঙ্কের নথিপত্রও দেখতে চায়। তার পরেই ছাত্রীর অ্যাকাউন্ট থেকে সব টাকা গায়েব হয়ে যায়।
একই ঘটনা ঘটে দিল্লির এক চিকিৎসকের সঙ্গেও। জালিয়াতির খপ্পরে পড়ে তিনি প্রায় ৪ কোটি টাকা খুইয়েছেন। দিল্লি, মুম্বইয়ের মতো বড় শহগুলিতে এই পার্সেল প্রতারণায় পা দিচ্ছেন বহু মানুষ। পুলিশের কাছেও ভূরি ভূরি অভিযোগ পড়ছে।
ভারতে বাড়ছে ‘কোরিয়ার স্ক্যাম’ বা ‘পার্সেল স্ক্যাম’-এর দৌরাত্ম্য। ছবি: সংগৃহীত।
পার্সেল প্রতারণা কী?
এই প্রকার জালিয়াতি করার সময় প্রতারকরা তরুণ-তরুণীদের ফোন করে ভয় দেখান। তরুণ-তরুণীদের বলা হয় তাঁদের নামে মাদক কিংবা অন্য কোনও অবৈধ জিনিসপত্রের একটি পার্সেল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এই অভিযোগ শোনার পর তরুণ-তরুণীরা ঘাবড়ে যান। প্রতারকরা তাঁদের কাছ থেকে আধার কার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের যাবতীয় তথ্য জানতে চায়। ভয় পেয়ে তরুণ-তরুণীরা প্রতারকদের সঙ্গে সব তথ্য ভাগও করে নেন। আর তার পরেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে উড়ে যায় লক্ষ লক্ষ টাকা।
এই প্রকার প্রতারণা থেকে কী ভাবে সুরক্ষিত থাকবেন?
১) কোনও কোরিয়ার পরিষেবা সংস্থা বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির তরফে ‘পার্সেল’ সংক্রান্ত আপনার কাছে কোনও ফোন এলে সতর্ক থাকুন।
২) আপনার কাছে যদি এমন কোনও সন্দেহজনক ফোন আসে তখন নির্দিষ্ট কোরিয়ার সংস্থার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে স্বাধীন ভাবে তথ্য যাচাই করে নিন।
৩) আপনার আধার নম্বর, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য বা অন্য কোনও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফোনে বা অপরিচিত ওয়েবসাইট বা লিঙ্কগুলির মাধ্যমে কখনও কারও সঙ্গে ভাগ করে নেবেন না।
৪) এমন পরিস্থিতিতে তাড়াহুড়ো করবেন না। প্রতারকেরা আপনার উপর চাপ তৈরি করে তথ্য আদায় করার চেষ্টা করতে পারে। তবে আপনাকে মাথা ঠান্ডা রেখে পরিস্থিতির সামাল দিতে হবে।
৫) আপনার কাছে অজানা কোনও পার্সেল সম্পর্কে ফোন এলে সেই ফোন সম্পর্কে বাড়ির অন্যদের সঙ্গেও কথা বলুন। সকলকে বিষয়টি আগে থেকেই জানিয়ে রাখুন।