জ্যান্ত মাছ গিললেই সেরে যাবে হাঁপানি? ছবি: সংগৃহীত।
প্রচলত রীতি, সংস্কার নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু জনপ্রিয়তায় এতটুকুও ভাটা পড়েনি। হায়দরাবাদের বিখ্যাত জ্যান্ত মাছ ‘প্রসাদম’ ঘিরে শুরু হয়েছে নয়া বিতর্ক। হায়দরাবাদের গৌড় পরিবারের দাবি, হাঁপানি, অ্যাজ়মার অব্যর্থ এবং স্থায়ী দাওয়াই হল এই প্রসাদম। আগামী ৮ জুন জ্যান্ত শোল মাছের ‘প্রসাদ’ খাওয়ানোর আসর বসাচ্ছেন তাঁরা। পরিবারের সদস্য বথিনি অমরনাথ গৌড় তেলঙ্গানা সরকারের কাছে এই অনুষ্ঠান আরও বৃহৎ আকারে আয়োজন করার আবেদন জানিয়েছেন। যাতে প্রচুর শোল মাছের চারার জোগান পাওয়া যায়, প্রসাদম খাওয়ার জন্য আগ্রহীদের যাতায়াতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সরকারের কাছে সেই ব্যবস্থা করার আর্জি জানিয়েছেন।
প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো রেওয়াজ এই ‘প্রসাদম’। এই অনুষ্ঠানে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। কিন্তু ভেষজ দ্রব্যের সঙ্গে মিশিয়ে জ্যান্ত শোল মাছ গিলিয়ে অ্যাজ়মার মতো অসুখ কী ভাবে সারানো যায়, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। চিকিৎসকেরা বলছেন, এ ভাবে জড়িবুটি দিয়ে জ্যান্ত মাছ খেলে শরীরে নানাবিধ সমস্যা হতে পারে। হাঁপানি তো কমবেই না, উল্টে স্বাস্থ্যের অন্যান্য সমস্যা হতে পারে বলে দাবি করেছেন তাঁরা। যদিও প্রসাদম উৎসব নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে উৎসাহে কোনও ঘাটতি দেখা যায়নি।
গৌড় পরিবারের দাবি, তারা প্রসাদম পালনের ‘সূত্র’ পেয়েছে এক ঋষির কাছ থেকে। প্রায় দেড়শো বছর আগে পাওয়া সেই টোটকা নাকি মানুষের কল্যাণের জন্য। জ্যান্ত শোল ভেষজ দিয়ে গলাধঃকরণ করলে হাঁপানি-সহ শ্বাসযন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যার নিরাময় হবে।
প্রসাদমের জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও চিকিৎসকেরা বারবার সাবধান করছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, প্রসাদমের গুণে হাঁপানি কমে, তা কোনও গবেষণায় প্রমাণ হয়নি। আর এই রীতি বিজ্ঞানসম্মতও নয়। বরং এমন অনেক হাঁপানি রোগী আছেন, যাঁদের এমন খাবার খেয়ে অ্যালার্জি হতে পারে। জীবন্ত মাছ গিলে ফেলার ফলে সংক্রমণের ঝুঁকিও থাকছে। এমনকি, জ্যান্ত মাছ শ্বাসনালিতে আটকে গেলে শ্বাসরোধ পর্যন্ত হতে পারে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, বিশেষ করে মরসুম বদলের সময়ে হাঁপানি রোগীদের ভোগান্তি বাড়ে। ধুলো, অ্যালার্জি বা দূষণের প্রকোপে ফুসফুসে অক্সিজেন বহনকারী যে সরু সরু নালিপথ আছে, তা কুঁচকে যায়। শ্বাসনালির পেশি ফুলে ওঠার কারণে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি শুরু হয়। এই অসুখের প্রবণতা যাঁদের আছে, অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের সারা জীবনই এই সমস্যা বহন করতে হয়। তাতে চটজলদি সমাধান বা সম্পূর্ণ নিরাময় হয় না। বরং বিশেষ কিছু বিধি-নিষেধ মানতে হয়। করাতে হয় চিকিৎসা।