গত এক সপ্তাহে কোভিডের সংক্রমণ আচমকাই অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। রাজ্যে সংক্রমণের সংখ্যা চারশো ছাড়িয়েছে, যেটা দু’সপ্তাহ আগেও অর্ধেক ছিল। চিকিৎসকদের মতে, পুজোর আগে কেনাকাটার ভিড়ের কারণে এই অবস্থা। তাই ঠাকুর দেখার ভিড়ে কী অবস্থা হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। গত দু’বছর পুজোয় মানুষ সে ভাবে আনন্দ করতে পারেননি। কিন্তু এ বার করোনা পরাজিত হয়েছে মনে করে, আমরা ঢিলেমি দিচ্ছি নিজেদেরই নিরাপত্তায়। রাস্তাঘাটে মাস্ক পরা মুখ এখন দুর্লভ। পুজোয় আনন্দ যাতে নষ্ট না হয়, তার জন্য করোনাবিধি মেনে চললে নিজেদেরই ভাল। হইহুল্লোড়, ঠাকুর দেখা চলুক, তার সঙ্গে কিছু নিয়ম মানলে শরীর সুস্থও থাকবে, ক্লান্তি কাটানোও সহজ হবে।
মধ্য তিরিশের এক কর্পোরেট চাকুরে গত দু’বছর ওয়ার্ক ফ্রম হোম করেছেন। এখন নিয়মিত অফিস যেতে হচ্ছে তাঁকে। বাড়ি ফিরে অসম্ভব ক্লান্ত লাগছে। ভাবছেন আগে তো এত ক্লান্ত লাগত না। এর কারণ কিছুই নয়, গত দু’বছরে আমাদের অনেক অভ্যেসই বদলে গিয়েছে। তাই এখন রোজ অফিসে যাতায়াত করতে গিয়ে বেশি ক্লান্ত লাগছে। একই জিনিস পুজোর হুল্লোড়ের ক্ষেত্রে হওয়াও স্বাভাবিক। রাত জেগে আড্ডা, ঠাকুর দেখা এগুলো প্রায় ভুলতে বসেছিলাম আমরা। কিন্তু এ বার তো অনেকেই ষষ্ঠী থেকে দশমীর প্ল্যান করে ফেলেছেন। কোনও দিন ঘরোয়া আড্ডা তো কোনও দিন সারা রাত ঠাকুর দেখা। আবার কোনও দিন পছন্দের রেস্তরাঁয় খাওয়াদাওয়া। আনন্দে মেতে ওঠার আগে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখলে গোটা পুজোটাই চনমনে ও তরতাজা থাকা যাবে।
এখন গরম কিছু কম নেই। তাই রোজ স্নান করতেই হবে। কোথাও বেরোনার আগে এবং ঘুরে এসেও। যাদের বড় চুল তাঁরা রাতের দিকে, ভাল করে গা ধুয়ে নিলে আরাম পাবেন। স্নানের জলে কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল ফেলে দিলে তরতাজা লাগবে।
হেঁটে হেঁটে ঠাকুর দেখে পায়ে ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক। তাই বাড়ি ফিরে একটা গামলায় হালকা গরম জলে একটু ইপসম সল্ট দিয়ে ১৫ মিনিট পা ডুবিয়ে রাখুন। ওই সময়টা মোবাইল না দেখে, চোখ বন্ধ করে রিল্যাক্স করুন। হালকা মিউজ়িক চালিয়ে দিতে পারেন। দেখবেন মিনিট পনেরো পরে আপনার শরীরটা বেশ ঝরঝরে লাগছে।
আমাদের ক্লান্তি সবচেয়ে বেশি ফুটে ওঠে চোখের মধ্যে। তাই ভাল কোনও ডার্ক সার্কল রিমুভাল ক্রিম কিংবা আলু, শসা চাকা করে কেটে চোখের উপরে রেখে রিল্যাক্স করুন কিছুক্ষণ।
এ বার আসা যাক খাওয়াদাওয়ার কথায়। সুস্থ থাকতে গেলে পুজোর প্রত্যেক দিন চারবেলা বাইরে খাওয়া এড়াতে হবে। দিনে একবার যদি ভারী খাওয়ার পরিকল্পনা থাকে, তা হলে বাকি সময়ের হালকা খাওয়াদাওয়া করার চেষ্টা করতে হবে। খেয়াল রাখবেন দীর্ঘ সময়ে যেন খালি পেট না থাকে। অনেকক্ষণ খালি পেটে থেকে তার পর রেস্তরাঁয় গিয়ে ভরপেট খেলে, শরীর খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবেই। যাঁদের অ্যাসিডিটির সমস্যা রয়েছে, তাঁদের আরও বেশি সতর্ক হতে হবে।
এই সময়টা ভাল নয়। করোনা, ডেঙ্গির পাশাপাশি ভাইরাল ফিভারও চোখ রাঙাচ্ছে। তার মধ্যে আবহাওয়ার মতিগতি বোঝা দায়। কখনও রোদ, কখনও বৃষ্টি... ঘামতে ঘামতে রাস্তার দোকান থেকে ঠান্ডা সফট ড্রিঙ্ক খেয়ে নিলে সাময়িক আরাম হয়তো পাওয়া যায় কিন্তু হিতে বিপরীত হতে পারে। এই মরসুমে গলা ব্যথা, সর্দির সম্ভাবনা কিন্তু রয়েছেই।
বেশি করে জল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। বাড়িতে ডিটক্স ওয়াটার বানিয়ে রাখুন। চাইলে সেই জল বোতলবন্দি করে নিয়ে ঠাকুর দেখতে বেরোন। একটা বড় পাত্রে দু’তিন স্লাইস লেবু, পুদিনা পাতা, তুলসী পাতা এবং শসা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এই জল সারা দিন মাঝেমধ্যে খান। ডিটক্স ওয়াটার বানাতে না চাইলে রাস্তায় বেরোনোর সময়ে এক বোতল ওআরএস বানিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। বাড়িতে ছোট বাচ্চা থাকলে, তাদের জন্য এটি খুবই ভাল পানীয়। রাস্তায় খুব ক্লান্ত লাগলে, গলা শুকোলে ডাবের জল খেতে পারেন। ডাবের জলে এত ভিটামিন, মিনারেল থাকে, চট করে এনার্জি পাওয়া যায়।
ক্লান্তি কাটানোর জন্য ক্যাফিনের পরামর্শ দিচ্ছেন ডায়াটিশিয়ান কোয়েল পাল চৌধুরী। সারা রাত আড্ডা বা ঠাকুর দেখার পর অনেক সময়ে ভীষণ ক্লান্ত লাগে। তখন এক কাপ ভাল কফি মুহূর্তে চনমনে করে দিতে পারে। তবে খেয়াল রাখবেন রাত জাগতে খালি পেটে পরপর কফি খাবেন না।
পুজোর আনন্দে ঘুমে যেন ফাঁকি না পড়ে, সেটাও দেখতে হবে। রোজ ছ’-আট ঘণ্টা ঘুম দরকার। নয়তো পুজোর শেষে রোজকার রুটিনে ফেরার সময়ে শরীর অসুস্থ হতে পারে।
পুজোয় মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার জরুরি। ভিড় এড়িয়ে চলুন। জ্বর হয়েছে বুঝতে পারলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।