কেউ খারাপ ব্যবহার করলে কী ভাবে উত্তর দেবেন? ছবি: সংগৃহীত।
ঘর থেকে বাইরে, অনেক সময় অনেক অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। পরিবার হোক বা কর্মক্ষেত্র, কখনও-কখনও কি আপনার মনে হয়, যথাযোগ্য সম্মান পাচ্ছেন না? সকলের সামনে হেনস্থা করা হলে বা প্রয়োজনীয় সম্মানটুকু না পেলে মন খুব খারাপ হয়ে যায়। অনেকেই এমন পরিস্থিতিতে চুপ করে থাকেন। কেউ বা বচসা শুরু করেন।
অফিস, বাড়ি, গণ পরিবহণ, রাস্তা প্রত্যেকটি জায়গাতেই এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে পারেন যে কেউ। কী ভাবে সামাল দেবেন?
কর্মক্ষেত্র
কর্মক্ষেত্র খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। সেখানে এমন পরিস্থিতি আসতেই পারে, যখন মনে হচ্ছে আপনার প্রাপ্য সম্মানটুকু অন্য জন দিচ্ছেন না। বা আপনার সঙ্গে ক্রমাগত যে ব্যবহার করা হচ্ছে সেটি ঠিক নয়। এ ক্ষেত্রে এক-দু’বার বিষয়টি এড়িয়ে যেতেই পারেন। কারণ, সেই মানুষটি তো আপনার কাছের কেউ নন। তবে যদি বার-বার কেউ দুর্ব্যবহার করেন, সেক্ষেত্রে তাঁকে ডেকে সরাসরি কথা বলুন। স্পষ্ট ভাবে জানতে চান, কেন তিনি এমনটা করছেন। এই ব্যবহার আপনার ভাল লাগছে না, অসম্মানিত মনে হচ্ছে নিজেকে, সেটাও তাঁকে বলুন। কথা বলার সময় উচ্চ স্বরে না বললেও চলবে, তবে সেই বক্তব্যে যেন দৃঢ়তা থাকে। কর্মক্ষেত্রে মনোমালিন্যের প্রভাব কাজে বা ব্যক্তি জীবনে যেন না পড়ে তা দেখা দরকার।
পাশাপাশি নিজেকে এই প্রশ্নও করুন, আপনার সঙ্গে কেন এমন ব্যবহার করছেন অন্য কেউ? আপনার ব্যবহারে বা চিন্তা-ভাবনায় কোনও ভুল নেই তো? তার উত্তরও আপনার কাছে স্পষ্ট থাকে যেন।
গণ পরিবহণ
বাস হোক বা ট্রেন, অনেক সময়ই অকারণে অন্যের দুর্ব্যবহারের মুখে পড়তে হয়। কেউ হয়তো সকলের সামনেই আপনাকে অসম্মান করলেন। সে ক্ষেত্রে শুরুতেই চিৎকার চেঁচামেচি না করে তাঁর সঙ্গে কথা বলুন। কথা না বাড়িয়ে, এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন বিষয়টি। কারণ, যে ব্যক্তিকে আপনি চেনেন না তাঁর কথায় গুরুত্ব দিয়ে নিজে উত্তেজিত হওয়ার সত্যি কি কোনও কারণ আছে? তবে গণ পরিবহণে যেতে গেলে সকলের সঙ্গেই সহযোগিতা করতে হয়। সহযোগিতার মানসিকতা না থাকলে, গণ পরিবহণ এড়িয়ে চলাই ভাল।
পরিবার
অনেক সময় পরিবারেই অন্য সদস্যদের দুর্ব্যবহারের মুখে পড়তে হয়। কর্মক্ষেত্রে বা রাস্তাঘাটে বিষয়টা এড়িয়ে যাওয়া যায়, কারণ তাঁরা কেউ আপন নন। কিন্তু কাছের মানুষের কাছ থেকে ক্রমাগত খারাপ ব্যবহার বা অসম্মান প্রাপ্তি হলে, সেটা মনে গভীর রেখাপাত করতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি যদি বয়েসে বড় হন, তা হলে ভাবুন অন্য মানুষটি কেন এমন করছে। আপনার ভুল রয়েছে কি? যদি মনে হয় তেমন কিছু নয়, তা হলে নিজে ঠিক থাকতে ধরে নিন, অন্য মানুষটি হয়তো মানসিক ভাবে শান্তিতে নেই। তাই এমনটি করছেন। ক্ষমা করে দিন। ক্ষমা কিন্তু বড় গুণ। কিন্তু সেই ব্যবহারে যদি মাত্রাছাড়া খারাপ লাগা তৈরি হয়, তবে তাঁর সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলে দেখতে পারেন। প্রয়োজনে তাঁর সঙ্গে কম কথাও বলা যেতে পারে।
আবার অনেক সময় এমন অভিযোগ থাকে, বয়স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষটি অতিরিক্ত খিটখিটে হয়ে গিয়েছেন। সকলের সামনেই অসম্মানজনক কথা বলছেন। তখন প্রথমে চেষ্টা করুন, বয়স হয়েছে ভেবে এড়িয়ে যাওয়ার। আবার কোনও সময় খারাপ লাগার কথাটা মানুষটিকে বুঝিয়ে বলতে পারেন। পরিবারে থাকলে মানিয়ে নিতেই হয়। এটা সকলের জন্যই প্রযোজ্য। তবে যদি বিষয়টি লাগামছাড়া হয়ে ওঠে তাহলে ঠান্ডা মাথায় তা থেকে মুক্তির উপায় খুঁজতে হবে।
সমাজমাধ্যম
বর্তমান জীবনের সঙ্গে গভীর ভাবে জুড়ে রয়েছে সমাজমাধ্যম। সেখানে কারও কোনও বিষয় অপছন্দ হলে বহু মানুষ নানা রকম মন্তব্য করার জন্য যেন মুখিয়ে থাকেন। বিশেষত তারকাদের ক্ষেত্রে এমনটা বেশি চোখে পড়ে। বহু তারকাকেই সমাজমাধ্যমে অসম্মানের শিকার হতে হয়েছে ও হচ্ছে। কত লোকে কত কথা বলে, এই ভেবে বিষয়টি এড়িয়ে যেতেই পারেন। তারকারা ‘ট্রোলড’ হন হামেশাই। মনে রাখবেন, যাঁরা আপনাকে ‘ট্রোল’ করছেন তাঁদের বেশিরভাগেরই লক্ষ থাকে স্বীকৃতি। তাঁরা হয়তো সেই তারকার কাছ থেকে এক লাইন মন্তব্যই আশা করছেন। এক্ষেত্রে যদি আপনার ইচ্ছে হয়, তবেই উত্তর দেবেন। অন্য দিকে যদি সেই মানুষটিকে চুপ করিয়ে দেওয়ার জন্য উপযুক্ত জবাব আপনার কাছে থাকে, তা হলে তা লিখে দেওয়া উচিত। যদি বিষয়টি অপরাধের জায়গায় চলে যায়, তা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও ভাবতে পারেন।