মাদকের নেশা থেকে সন্তানকে রুখে দিন কয়েকটা বিশেষ কৌশলে। ছবি: আইস্টক।
সন্তান বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছলে অভিভাবকদের চিন্তাও বাঁক নেয়। যত্নআত্তি, খেয়াল রাখা, কেরিয়ারের পাশাপাশি আরও যে চিন্তা মাথাচাড়া দেয়, তা সন্তানের আচরণ। বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছে তাদের আচার-ব্যবহারে খানিক বদল আসে।
তা ছাড়া পরিবার ছোট হোক বা বড়, শিশুরা সব পরিবারে মন খুলে কথা বলার মানুষ পায় না। একাকীত্বও গ্রাস করতে পারে তাদের। তা থেকে নানা রকম মাদকদ্রব্যের শিকার হয় কিশোর-কিশোরীরা। বিভিন্ন সময়েই নামী স্কুল-কলেজের সামনে থেকে মাদক-সহ পড়ুয়া ধরা পড়ার খবর সেই শঙ্কাকেই সত্যি করে তোলে।
তাই সন্তানের এই স্খলন রুখতে সকলের আগে সচেতন হতে হবে অভিভাবককে। মনোবিদদের মতে, মাদক ও নেশার কবলে পড়া শিশুদের আচরণগত কিছু ফারাক ঘটে। দৌড়ের যুগে বাবা-মাও তাঁদের কাজ-ব্যস্ততা সামলে আলাদা করে সন্তান বড় হয়ে গেলে তার খুঁটিনাটির প্রতি খেয়াল রাখতে পারেন না। আর সেই ফাঁকেই ঘাঁটি গাড়ছে নেশার চারা। মনোবিদ অমিতাভ মুখেপাধ্যায়ের মতে, ‘‘কিছু লক্ষণ দেখলেই সচেতন হোন। কেউ কেউ বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে প্রথমে কৌতূহলের বশে মাদকের স্বাদ নিতে শুরু করে কিন্তু পরে আর নিজেদের সামলাতে পারে না। তাই নিজেরা বুঝিয়ে পেরে উঠলে তো ভালই, নইলে নেশা ছাড়াতে প্রথমেই শরণ নিন কাউন্সিলিংয়ের।’’
আরও পড়ুন: সঙ্গীকে টেক্সট করার সময় এ সব ভুল করেন না তো? এখনই সতর্ক হোন!
কিন্তু কোন কোন লক্ষণ প্রকাশ পেলে তা একেবারেই অবহেলা করা উচিত নয়, জানেন?
সন্তানের মন-মেজাজের দিকে খেয়াল রাখুন। কথায় কথায় বিরক্তি বা রাগ দেখাচ্ছে কি? কিংবা খুব মুড সুইং হচ্ছে? তা হলে সচেতন হোন। হতেই পারে মাদক থেকে তৈরি হওয়া সমস্যার কারণে হয়তো এমনটা ঘটছে না। তবু সতর্ক থাকার সময় সবটুকুর জন্যই থাকতে হবে। খাওয়াদাওয়া ও ঘুমের সময়ের উপর নজর রাখুন। ঠিকঠাক খাওয়াদাওয়া না করা, বা সারা রাত জেগে থাকা, বাইরে থেকে নেশাড়ু চোখে বাড়ি ফেরা, হঠাৎই অবিন্যস্ত কথা বলা— এ সব দেখলে সতর্ক হোন। কোন কোচিংয়ে যাচ্ছে, সেখানে আদৌ সময় মতো যাচ্ছে কি না, খেয়াল রাখতে হবে সে ক্ষেত্রেও। সবচেয়ে বড় ব্যাপার কাদের সঙ্গে মিশছে, কার সঙ্গে কতটা গভীর ভাব, এগুলোও দূর থেকে বা তাদের দলে মাঝে মাঝে ভিড়ে জেনে নিতে হবে। অতটা সম্ভব না হলে অন্তত চেলে-মেয়ের বন্ধুদের মাঝে মাঝেই বাড়িতে ডাকুন। দরজা বন্ধ করে চুপচাপ আড্ডা নয়, সকলের মাঝে হই-হুল্লোড় করে আড্ডা দিতে বলুন। এর ফাঁকে বুঝে নিতে চেষ্টা করুন, সন্তানের ‘সঙ্গদোষ’ তৈরি হচ্ছে কি না। তেমনটা বুঝলে বোঝান তাকে। নিজেরা না পারলে কাউন্সিলিং প্রয়োজন। সন্তানের ব্যবহার করা ফোন ও ল্যাপটপও বন্ধুর মতোই নিয়ে ব্যবহার করুন। প্রথম থেকেই তেমনটা করতে পারলে গোপনীয়তার তারগুলো আলগা থাকবে।
আরও পড়ুন: সাদা জুতো বর্ষায় নোংরা হয় সহজে, এই সব উপায়ে রাখুন ঝকঝকে
সন্তানের ব্যবহার করা ফোন ও ল্যাপটপও বন্ধুর মতোই নিয়ে ব্যবহার করুন।
হঠাৎই উল্লেখযোগ্য ভাবে পরীক্ষার ফল খারাপ হতে শুরু করলে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবেন না। নেশা ছাড়াও নানা কারণেই হতে পারে তা। কেন হল তা জেনে সেই মতো ব্যবস্থা নিন। তবে মনে রাখবেন, অনেক ক্ষেত্রেই নেশার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার কারণেও এমন অবহেলা দেখা যায়। হঠাৎই অনেক খরচ বেড়ে যাচ্ছে কি? হাচতখরচের পরিমাণ বাড়াতে বলছে, এ দিকে কিসে এত খরচ হচ্ছে তার কোনও হিসেব নেই। এমনটা ঘটলে সচেতন হোন। কেবল সন্তান নয়, নিজেদের ভুলগুলোও চিহ্নিত করুন। বাড়িতে এমন কিছু করবেন না বা এমন কোনও পরিবেশ তৈরি করে রাখবেন না, যেখানে মাদকদ্রব্য সেবন বা নেশার জন্য আপনার দিকেই আঙুল উঠতে পারে।