শাড়ি পরিয়েও বিখ্যাত হওয়া যায়। দেখিয়ে দিয়েছেন ডলি জৈন। ছিলেন কলকাতার গৃহবধূ। এখন তিনি নিজেই সেলেব্রিটি। ডাক আসে দেশের তাবড় সেলেব্রিটিদের বাড়ি থেকে। বিশেষ অুষ্ঠানে তাঁদের শাড়ি পরানোর জন্য। সোনম কপূর, দীপিকা পাড়ুকোন, প্রিয়ঙ্কা চোপড়া থেকে ইশা অম্বানি। সবাইকে তাঁদের বিয়েতে সাজিয়েছেন ডলি। কলকাতার পেশাদার শাড়ি ও দোপাট্টা ড্রেপার।
দেশের নামী ডিজাইনাররাও ডলির শরণাপন্ন হন। তাঁর কথায়, আগেকার দিনে বাড়িতেই থাকতেন এমন কেউ যিনি শাড়ি পরাতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। বিশেষ বিশেষ অনু্ষ্ঠানে তাঁর কাছেই লম্বা লাইন পড়ে যেত। এখন অনেকেই খোঁজেন পেশাদার শাড়ি ড্রেপার। যাতে আরও নিখুঁত হয়ে ওঠে সাজগোজ।
মাত্র সাড়ে ১৮ সেকন্ডে শাড়ি পরাতে পারেন ডলি। তাঁর নাম উঠেছে লিমকা বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে। তখন তিনি ১২৫ রকম ভাবে শাড়ি পরাতে পারতেন। এখন পারেন ৩২৫ রকম উপায়ে। ভারতের সব প্রদেশের শাড়ি পরানোর স্টাইল তো বটেই। ডলির আস্তিনে হাজির ফিউশন কেতাও।
কনের উপর নির্ভর করে ডলির শাড়ি পরানোর কায়দা। তিনি খেয়াল রাখেন যাতে শাড়ির জন্য বিয়ের কনের ব্যক্তিত্ব চাপা না পড়ে যায়। সেই সঙ্গে গুরুত্ব পায় কনের পছন্দ অপছন্দও। যেমন ডলির কাছে দীপিকা চেয়েছিলেন হাতের উপর এলানো আঁচল। প্রিয়ঙ্কার পছন্দ ঢিলেঢালা আলগা আঁচল। ইশা আবার বলেছিলেন, শাড়ির আঁচল থেকে লেহঙ্গার দোপাট্টা, সবই যেন থাকে আঁটোসাঁটো।
যে শাড়ি এখন তুরূপের তাস, সেই শাড়ি থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকতেন বিয়ের আগে। ছোটবেলায় মায়ের শাড়ি পরতেন, যেমন বাকি মেয়েরাও করে। কিন্তু তার বেশি কিছু নয়। ছবিটা পাল্টে গেল বিয়ের পরে। এমন শ্বশুরবাড়িতে এলেন, যেখানে বাড়ির বউ-এর শাড়ি ছাড়া অন্য পোশাক চলবে না।
প্রথমে ভেঙে পড়েছিলেন। শাড়ি পরে থাকতে হবে শুনে। পরে একেই পাল্টে নিলেন আশীর্বাদে। শুরু করলেন শাড়ি পরানোর কায়দা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা। শাড়ি পরাতেন ম্যানেকিনে। ভাবতেন, কী করে আরও নতুনত্ব আনা যায়।
শাড়ি পরানোর হাতেখড়ি এক বিয়েবাড়িতে। বাড়ির সব মহিলাকে সাজিয়েছিলেন তিনি। তিনি নিতে না চাইলেও দেওয়া হয়েছিল পারিশ্রমিক। উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। সেই শুরু। এরপর আর পিছনে পিরে তাকাতে হয়নি। ধীরে ধীরে জমে উঠেছে তাঁর শাড়ি পরানোর কারিগরি।
ডেস্টিনেশন ওয়েডিং-এ শাড়ি পরানোর জন্য ডলি পাড়ি দেন বিদেশেও। পারিশ্রমিকের কথা না পরিষ্কার করে না জানালেও শোনা যায় তাঁর দক্ষিণা ৩৫ হাজার থেকে দু’ লক্ষ টাকা অবধি। রাজনীতিকরাও সেজেছেনে তাঁর হাতে। ডলি শাড়ি পরিয়েছিলেন তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত জয়ললিতাকে। সম্প্রতি শাড়ি পরিয়েছেন বস্ত্রমন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে।
শুধুই সেলেব্রিটিরা নন। সাধারণ ঘরেও ডলি যান বিয়ের কনেকে শাড়ি পরাতে। একান্তই তাঁকে অ্যাফোর্ড করতে না পারলে আছে তাঁর সহযোগীরা। তাঁরাও সাজিয়ে তোলেন বিয়ের কনেকে। তবে দু’ তিন মাস আগে বুক না করলে তাঁর সময় পাওয়া দুষ্কর।
শ্রীদেবী বলেছিলেন ডলির আঙুলে জাদু আছে। আর ডলি বলেন, জাদু আছে শাড়িতেই। নতুন প্রজন্মের জন্য তাঁর টিপস, ক্যানভাস শু বা গুচ্চির বেল্ট, সব কিছুর সঙ্গেই পরা যায় শাড়ি। শুধু পরার কায়দা পাল্টাতে হবে।
মেয়েদের ফিগারে যে কোনও খুঁত ঢাকতে শাড়ি সেরা উপায় বলে মনে করেন ডলি জৈন। তাঁর হাতের ট্যাটু বলছে, ‘আমি আমার সময়ের থেকে ছ’গজ এগিয়ে আছি’।