হতাশা কাটানোর সঠিক পথ না জানা থাকলে তা গ্রাস করতে পারে যখন তখন। ছবি: আইস্টক।
মনের মতো কিছু না হলেই হতাশ হয়ে পড়ার স্বভাব ঘাপটি মেরে থাকে অনেকের মধ্যেই। কেউ কেউ সহজেই তাকে কাটিয়ে উঠতে পারেন, কেউ বা তেমনটা আয়ত্তে আনতে পারেন না।
তবে মনোবিদদের মতে, হতাশা কাটানো খুব জটিল বিষয় নয়। কয়েকটা যুক্তি, একটু ভাবনা সঙ্গে খারাপ পরিস্থিতি মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা— এটুকু অভ্যাসে আনলেই হতাশা কাটানো সহজ হয়ে ওঠে। মনোবিদ অমিতাভ মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘অতিরিক্ত আশা থাকলে হতাশাও আসবে৷ এটাই জীবনের নিয়ম৷ অস্থির হবেন না৷ সে এসেছে যেমন, চলেও যাবে৷ একটু শুধু সময়ের অপেক্ষা৷ আর তার ফাঁকে খুঁজে দেখুন কেন হতাশ হলেন৷’’
হতাশা কাটাতে কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি। কী কী বিষয় মাথায় রাখলে সহজে মুষড়ে পড়া বা হতাশায় ডুবে যাওয়ার হওয়ার মতো ঘটনা ঘন ঘন ঘটবে না— বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানালেন তারই ফর্মুলা।
আরও পড়ুন: চুল পাতলা হয়ে ঝরে যাচ্ছে? সমস্যা মেটাতে মেনে চলুন এই সব উপায়
আশা কি অন্যায্য ছিল? অন্যায্য আশা করলে হতাশ হতেই হবে৷ নিজের ক্ষমতা, পরিস্থিতি সম্বন্ধে সম্যক ধারণা না থাকলে দুরাশা করে মানুষ৷ কাজেই কী ভুল হয়েছে খুঁজুন৷ পেলে সতর্ক হয়ে যান৷ ভুলের পুনরাবৃত্তি যেন না হয়৷ ন্যায্য আশা, তবুও হতাশ? তা হলে কি তাকে বাস্তবে পরিণত করার চেষ্টায় কোনও ত্রুটি ছিল? কী সেই ত্রুটি? কী কী ভাবে তাকে শোধরানো যেতে পারে, এটা ভাবুন। আশা ন্যায্য ছিল, চেষ্টাতেও ঘাটতি ছিল না, তাও সফল হননি, এরকমও হতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে বিকল্প আর কী কী হতে পারে সে সম্বন্ধে ধারণা থাকা দরকার৷ যেমন ধরুন, ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছে, চেষ্টা সত্ত্বেও হল না৷ এ বার কী করবেন? আর এক বার চেষ্টা করবেন না অন্য বিকল্প বাছবেন, তা নিয়েও ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আচমকা কোনও ঘটনায় হতাশ হয়েছেন না তলে তলে যে ভূমিক্ষয় হচ্ছিল তা ধরতে পারেননি? কেন ধরতে পারলেন না? চোখ–কান খোলা রেখে কত কিছু হয়েছে, কিছু দিন পর ভুলে গেছেন৷ এই ঘটনাও ভুলবেন৷ একটু আগে আর পরে৷ ভুলতে যখন হবেই, তা নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাবেন না। ঘটনাটাকে গুরুত্বহীন করতে পারলে ভোলা সহজ৷ গুরুত্বহীন করার অন্যতম রাস্তা প্রায়োরিটি লিস্ট বানানো৷ যার জন্য হতাশ হয়েছেন সেটা হয়তো টপ প্রায়োরিটি ছিল, তার পরও তো কিছু আছে৷ এ বার না হয় ভাবুন পরের প্রায়োরিটিকে নিয়ে৷ মন খারাপ করে বসে না থেকে আড্ডা দিন৷ সিনেমা–থিয়েটার দেখুন৷ ব্যায়াম বা খেলাধুলাও করতে পারেন৷ এ বার একটু চিন্তাভাবনা সাজানো৷ ভেবে দেখুন হতাশ হলেন কেন? কী ক্ষতি হয়েছে? টাকা, প্রেম, নিরাপত্তা, ক্ষমতা না অন্য কিছু? ক্ষতিপূরণ কী ভাবে করবেন? বিকল্প রাস্তা খুঁজে না সমঝোতা করে? প্রেমের বদলে নতুন প্রেম না পুরোনোটাই টিকিয়ে রাখা? সমাজে নিজের অবস্থান বাঁচাতে নতুন চাকরি না নত হয়ে আগেরটা বাঁচানো? আবেগে চলবেন না বুদ্ধিতে? নাকি ইগোর কাছে নতি স্বীকার করবেন— কোন পরিস্থিতিতে কী বাছবেন, কী করবেন হতাশার কারণ অনুধাবন করে ভেবে দেখতে হবে সে সব। সমস্যা সমাধানে যুক্তি ও আবেগের দোটানায় পড়লে কয়েক জন বাস্তববাদী লোকেদের সঙ্গে আলোচনা করুন৷ দেখুন এরকম পরিস্থিতিতে তাঁরা কী করতেন৷ আপনিও সেই পথে চলবেন কি না ভেবে দেখুন৷
আরও পড়ুন: ডায়াবেটিক? এ সব নিয়ম মেনে পুজোর ক’দিনের অনিয়মেও থাকুন সুস্থ
তবে চির-হতাশদের ক্ষেত্রে এই সমাধানের পথ আর একটু জটিল। চির-হতাশা মূলত মানসিক অসুখ। ঠিক সময়ে ঠিকঠাক চিকিৎসা বা কাউন্সেলিং না হলে এই অসুখ বাড়তে পারে। আসলে এই বিশ্বাসের মূল লুকিয়ে থাকে বেড়ে ওঠার পরিবেশে৷ ‘হবে না’, ‘করিস না’ জাতীয় কথা শুনতে শুনতে বড় হলে, তাঁর দ্বারা যে কোনও কাজ সম্ভব সেই বোধই জাগে না৷ তুলনা করে হেয় করলেও তাঁদের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যায়৷
এই আত্মবিশ্বাস হারানোর মূলে যে তাঁর বেড়ে ওঠার পরিবেশ খানিকটা দায়ী সেটা বোঝানো গেলে কাজ সহজ হয়৷ পরের ধাপে ছোটখাটো সাফল্যগুলিকে কাটাছেঁড়া করে দেখানো হয়৷ সফল হওয়ার অনেক গুণই যে তাঁর আছে তা বোঝাতে পারলেই অর্ধেক কাজ সারা৷ এক কাজে সফল হলে অন্য কাজেও সফল হওয়া সম্ভব৷ কাজেই এক একটা ব্যর্থতাকে কাটাছেঁড়া করে যদি দেখানো যায়, আসলে সে ভাবে চেষ্টা করা হয়নি বলেই সাফল্য আসেনি— কাজ হতে পারে৷ নিজে করা সম্ভব না হলে ভাল কাউন্সেলরের তত্ত্বাবধানে কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি করাতে পারেন৷
এই পর্যায়ে রোগীকে সাহস জোগানোও খুব জরুরি৷ বোঝানো দরকার যে চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে লজ্জার কিছু নেই৷ অনেক নতুন কিছু শেখা যায় তাতে, যা পরবর্তী সাফল্যের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা হিসেবে কাজে আসে৷ ব্যর্থতার ভয়ে চেষ্টা ছেড়ে দিলে বরং তা লজ্জাজনক৷
এর পাশাপাশি প্রথম দিকে কিছু সহজ কাজ দিয়ে, তাঁকে সাহায্য করে একটা সাফল্য এনে দিলে আত্মবিশ্বাস বাড়তে শুরু করে৷ এর পর ধাপে ধাপে কঠিন কাজের দিকে এগোতে পারেন মানুষ৷