ঠোঁটের প্রকার অনুযায়ী বেছে নিন বাম।
মিশর সম্রাজ্ঞী ক্লিয়োপেত্রার রূপচর্চা নিয়ে নানা গল্প তো আছেই। রয়েছে তাঁর ঠোঁটের প্রসাধনী নিয়েও কিছু কাহিনি। মোম, অলিভ অয়েল, মধুর প্রলেপ ঠোঁটে লাগিয়ে রাখতেন রানি ক্লিওপেত্রা। এতে ঠোঁট তো ফাটতই না। উপরন্তু বেশ ভরাট, উজ্জ্বল ঠোঁট পেতেন। আবার লাল টুকটুকে ঠোঁট পেতে গুবড়ে পোকা ও লাল পিঁপড়ে মেরে গুঁড়ো করে বেরির রসে চুবিয়ে রাখতেন। মাছের আঁশ গুঁড়ো করে তাতে মিশিয়ে লাগিয়ে নিতেন ঠোঁটে। এই রাঙা ওষ্ঠাধরই নিম্নবর্ণের মানুষদের থেকে রানিকে আলাদা করত বলে বিশ্বাস। তবে এই ধরনের ঠোঁটের প্রসাধন অনেকেই বিষাক্ত মনে করত। ফলে রানি ছাড়া তা ঠোঁটে ধারণ করা সাহসেও কুলোয়নি অন্যদের। মধ্য প্রাচ্যে আবার ভেড়ার চর্বি গলিয়ে ভেষজ শিকড়ের রস মিশিয়ে জমিয়ে রাখা হত। তখনকার দিনের নিরাপদ লিপ বাম বলা যায়।
রূপচর্চায় প্রাচীন ভারতও অবশ্য পিছিয়ে ছিল না। তাঞ্জোরের রাজা দ্বিতীয় সরফোজ়ি আয়ুর্বেদ নিয়ে চর্চা করতেন। তিনি ওষধি নিয়ে নানা রকম পরীক্ষানিরীক্ষা করতেন। তাঁর ধন্বন্তরি অনুযায়ী, পৌরাণিক ভারতে ফাটা ঠোঁটের সমস্যার মোকাবিলায় বেল ফলের ক্বাথ ও দুধ মিশিয়ে ঠোঁটে লাগিয়ে রাখা হত। দিন কয়েকের মধ্যেই ঠোঁটের ফাটল পূরণ হয়ে উজ্জ্বল হয়ে উঠত। ডালিমের রস মাখার রীতিও ছিল। পান খেয়ে ঠোঁট রাঙানোর গল্পও নতুন নয়। তবে গল্প শুনলেই হবে না, সুন্দর ঠোঁটের রহস্যভেদ করতে হবে।
লিপ বাম কখন লাগাবেন
অনেকেরই ধারণা থাকে লিপ বাম শুধু শীতকালের জন্য। আসলে কিন্তু তা নয়। বরং শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা— সব ঋতুতেই লিপ বাম অত্যাবশ্যক। রোজ দিনে অন্তত চার বার খাবার খাওয়া হয়। জল খাওয়া হয় তারও বেশি বার। ঠোঁটের আর্দ্রতা গায়েব হতে সময় লাগে না। তাই বারো মাসই ঠোঁটে লিপ বাম লাগানো জরুরি।
অনেকে আবার ঠোঁট না ফাটলেও শুকনো ঠোঁট সারা দিন জিভ দিয়ে ভিজিয়ে রাখেন। এতে হিতে বিপরীত হয়। কারণ আপাত ভাবে ঠোঁট ভিজলেও ঠোঁটের স্বাভাবিক ময়শ্চার উবে যায়। শুকিয়ে যায় ঠোঁটের চামড়া। আর যাঁরা রুক্ষ ঠোঁট ঢাকতে গ্লসি লিপস্টিকের শরণাপন্ন হন,
তাঁদের ক্ষতিও কম নয়। তার চেয়ে লিপ বাম লাগানো থাকলে ঠোঁটের উপরে স্তর তৈরি হয়, যা ভেদ করে ঠোঁটের ক্ষতি হওয়ার ভয় কম।
মনে রাখবেন
ঠোঁট নিয়মিত স্ক্রাব করা জরুরি। তার জন্য চিনি বা নুন তেলে মিশিয়ে ঠোঁটে ঘষলেই হবে। ঠোঁটের মৃত কোষ উঠে ঠোঁট পরিষ্কার হয়ে যাবে। পরে নিশ্চিন্তে লিপ বাম লাগান। ঘুমোতে যাওয়ার আগে ঠোঁটে লিপ বাম লাগাতে পারেন। লিপ বাম লাগানোর সময়ে ঠোঁটের আউটলাইন বরাবর আগে লাগিয়ে পরে ভিতরটা ভরাট করুন। ঠোঁটেও সানবার্ন হয়। সে ক্ষেত্রে নারকেল তেল বা তিল তেল লাগাতে পারেন, যা ছাতার মতো রোদ থেকে রক্ষা করবে ঠোঁটকে।
স্বাভাবিক লিপ বাম
স্নান করতে যাওয়ার আগে ঠোঁটে মধু লাগিয়ে বসে থাকতে পারেন মিনিট পাঁচেক। তার পরে স্নান সেরে নিন। ঠোঁট হাইড্রেটেড থাকবে। দুধের সরও ঠোঁটের জন্য ভাল। এতে ঠোঁটের রংও উজ্জ্বল হবে। অ্যালো ভেরার জেল বার করে ঠোঁটে লাগিয়ে রাখুন। এতেও ঠোঁটের ফাটা ভাব দূর হবে।
ঘরোয়া লিপ বাম
পেপারমিন্ট অয়েল বাম
উপকরণ: ১ চা চামচ নারকেল তেল, ১ চা চামচ আমন্ড অয়েল, ১ টেবিল চামচ মোম, ৮ ফোঁটা পেপারমিন্ট অয়েল।
প্রণালী: পাত্রে তেল ও মাখন নিয়ে দু’মিনিট মাইক্রোওয়েভ আভেনে গরম করুন। মাখন গলে গেলে মোম যোগ করুন। সেটা বার করে অল্প ঠান্ডা করে পেপারমিন্ট অয়েল মেশান। পুরো জিনিসটা ভাল করে মিশিয়ে রেখে দিন। ছোট পাত্রে সংরক্ষণ করুন ও প্রয়োজন মতো ব্যবহার করুন।
ল্যাভেন্ডার লিপ বাম
উপকরণ: ৪ টেবিল চামচ হোহোবা বা আমন্ড অয়েল, ১ টেবিল চামচ মোম, ১ টেবিল চামচ মধু, ১/৪ চা চামচ ভিটামিন ই অয়েল, সাত ফোঁটা ল্যাভেন্ডার অয়েল, ১ চা চামচ কোকো পাউডার।
প্রণালী: তেল, মোম ও মধু একসঙ্গে গরম করতে হবে। ঈষদুষ্ণ হয়ে এলে আঁচ বন্ধ করে এর মধ্যে ল্যাভেন্ডার অয়েল, ভিটামিন ই অয়েল, কোকো পাউডার মেশাতে হবে। একটি পাত্রে ভরে বরফ ভর্তি পাত্রের মধ্যে রেখে অপেক্ষা করুন। জমে যাবে।
ভ্যানিলা অরেঞ্জ লিপবাম
উপকরণ: ১ টেবিল চামচ নারকেল তেল, ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, ২ চা চামচ মোম, ২ চা চামচ শিয়া বাটার, ৮ ফোঁটা অরেঞ্জ এসেনশিয়াল অয়েল, ১/৪ চা চামচ ভ্যানিলার নির্যাস।
প্রণালী: মোম, নারকেল তেল, অলিভ অয়েল ও শিয়া বাটার মাঝারি আঁচে গরম করতে হবে। এর মধ্যে অরেঞ্জ অয়েল ও ভ্যানিলার নির্যাস মিশিয়ে ঠান্ডা করে ছোট জারে ভরে রেখে দিন।
প্রত্যেকের ঠোঁট আলাদা। তাই অন্যের দেখে না কিনে নিজের দরকার মতো লিপ বাম বেছে নিন।
মডেল: মুনমুন রায়
ছবি: সুপ্রতীম চট্টোপাধ্যায়
মেকআপ: সুবীর মণ্ডল
লোকেশন: বিবোনি, কসবা নিউ মার্কেট