লিভার এনজাইমগুলির মাত্রার হেরফের হলে লিভারের সমস্যার কথা ভাবা হয়। ছবি: আইস্টক।
ত্বক কিংবা চুলের সমস্যা হোক অথবা পেটের গোলমাল, সব কিছুর জন্যেই লিভারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো আমবাঙালির অভ্যাস। তবে এটা ঠিক যে জীবনযাত্রা বদলে যাওয়ার ফলে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের প্রবণতা আগের থেকে অনেকটাই বেড়েছে। আসলে ভুঁড়ি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লিভারেও চর্বি জমার ঝুঁকি বাড়ে বলে কাজ করার ক্ষমতা কিছুটা কমে যায়। আবার অনেক সময় কিছু কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই কোনও রকম সমস্যা হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে লিভার এনজাইমের পরিমাণ জেনে নেওয়া উচিত।
কখন সতর্ক হওয়া উচিত?
অনেক সময় আমাদের অজান্তেই লিভারের কাজ করার ক্ষমতা কিছুটা ব্যহত হয়। কখনও কখনও বিলিরুবিন বেড়ে যায় আবার অনেক সময় উল্লেখযোগ্য কোনও উপসর্গই থাকে না। বিলিরুবিন বেড়ে গেলে অথবা বছরে এক বার নিয়ম করে চেক আপ করার সময় লিভার এনজাইম দেখে নিলে ভাল হয়।
নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের সব থেকে বড় লক্ষণ স্বাভাবিকের থেকে বেশি কোমরের মাপ বা মোদ্দা কথা ভুঁড়ি। ছোট থেকে বড়, সকলেরই ভুঁড়ি বাড়লে লিভারে মেদ জমে। এর ফলে লিভারের স্বাভাবিক কাজ কিছুটা ব্যহত হয়। লিভারের কাজ কমে গেলে প্রথম অবস্থায় খাওয়ার ইচ্ছে কমে যায়, খাবারে অরুচি হয়, দ্রুত ওজন কমে যেতে পারে, বমি বমি ভাব থাকে আর বমিও হতে পারে, খুব দুর্বল লাগে, কোনও কাজ করতে ইচ্ছে করে না। এই সব উপসর্গের পাশাপাশি ক্রনিক মাথা ব্যথা, মন খারাপ ও ডিপ্রেশন, আচমকা কাঁপুনি-সহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়। বিশেষ করে নখ বা চোখ হলদেটে লাগলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে লিভার ফাংশন টেস্ট করিয়ে নেওয়া দরকার।
আরও পড়ুন: বদহজম রুখতে চান? ভরসা রাখুন এ সবে
হজমের সমস্যা হলেই লিভার ফাংশন টেস্ট নয়
অনেককে প্রায়ই বলতে শোনা যায় যে হজমের সমস্যা অথবা অ্যাসিডিটি মানেই লিভারের কোনও সমস্যা। বিষয়টা কিন্তু তা নয়। সঠিক ডায়েট না করলে, বেশি ভাজা খাবার খেলে অথবা খিদে না পেলেও লোভনীয় খাবার খেতে ইচ্ছে হলেই খেয়ে ফেলা এই রকম নানা কারণে অ্যাসিডিটি-সহ হজমের সমস্যা হতে পারে। অ্যাসিডিটির সঙ্গে লিভারের অসুখের প্রত্যক্ষ কোনও সম্পর্ক নেই।
ফাস্ট ফুডের জাপটে বাড়ছে লিভারের সমস্যা। ছবি:আইস্টক।
লিভার ফাংশন টেস্ট
লিভার ফাংশন টেস্টের মধ্যে আছে অ্যালবুমিন (এএলবি), অ্যালামাইন ট্র্যান্স অ্যামাইলেজ (এএলটি) সাধারণ মানুষ যাকে এসজিপিটি বলেন, এএসটি বা অ্যাসপারটেট ট্র্যান্স অ্যামাইলেজ যার চেনা নাম এসজিওটি, অ্যালকালাইন ফসফেট বা এএলপি, টোটাল বিলিরুবিন বা টিবিআইএল ইত্যাদি পরীক্ষা করা হয়। লিভার এনজাইমগুলির মাত্রার হেরফের হলে লিভারের সমস্যার কথা ভাবা হয়। প্রয়োজনে অন্যান্য পরীক্ষাও করতে হতে পারে। বছরে এক বার হেলথ চেক আপের সময় এই পরীক্ষাগুলি করিয়ে নিতে পারলে ভাল হয়। তবে কোনও সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের নির্দেশে প্রয়োজন হলে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া দরকার।
আরও পড়ুন: বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়াই শুরু করেছেন ডায়েট! জানেন কি পরিণতি?
হরমোন ও অন্যান্য ওষুধে সমস্যা
যাঁরা অপরিমিত মদ্যপান করেন তাঁদের লিভারের অসুখের ঝুঁকি বেশি। এ ছাড়া টিবির ওষুধ, হরমোন ওষুধ, কিছু ব্যথার ওষুধ-সহ কয়েকটি অ্যান্টিবায়োটিকে লিভারের কর্মক্ষমতা কমে যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি কোনও ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হলে লিভার এনজাইম পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া দরকার। এ ছাড়া স্ত্রীরোগের কোনও সমস্যা হলে মাসাধিককাল হরমোনের ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হলে লিভার ফাংশন টেস্ট করিয়ে নেওয়া দরকার। ক্রনিক হেপাটাইটিস থাকলেও লিভারের এনজাইমের মাত্রা পরীক্ষা করা উচিত।