phobia

ফোন হাতছাড়া করতে ভয়, কারও আবার খাবার দেখলেই আতঙ্ক! ফোবিয়ার তালিকায় যোগ হল আর কী কী?

কোনও কোনও ফোবিয়া বাড়াবাড়ির আকার নেয়, তবে তা নিয়ে মনোবিদদের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

Advertisement

মনীষা মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৩:১৪
Share:

কোনও কোনও ফোবিয়া বাড়াবাড়ির আকার নেয়, তবে তা নিয়ে মনোবিদদের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন বলে মত বিশেষজ্ঞদের। ছবি: শাটারস্টক।

ফোবিয়া। বাংলা করলে যার অর্থ দাঁড়ায় মৃত্যুভয়। এমন কোনও জিনিস বা এমন কোনও অনুভূতি যা সামনে এলে উদ্বেগের জন্ম হয়। তা থেকেই ঘিরে ধরে আতঙ্ক। সাময়িক বিহেভিওরাল ডিজঅর্ডারের লক্ষণও দেখা দেয় অনেকের মধ্যে। গ্রিক শব্দ ‘ফোবোস’ থেকে ‘ফোবিয়া’ শব্দের উৎপত্তি। ফোবোসের অর্থ ‘ভয়’।

Advertisement

বেশির ভাগ সময়ই কোনও কোনও ফোবিয়ার মূল কারণ নিহিত থাকে জীবনের আদি কোনও কার্যকারণ বা ঘটনায়। চারপাশের এমন অনেক ফোবিয়াই আমাদের পরিচিত। যেমন, উঁচুতে উঠলে কেউ ‘অহেতুক’ পড়ে যাওয়ার ভয় পান, কেউ বা বদ্ধ জায়গায় গেলে দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় পান। কারও ক্ষেত্রে আবার বিস্তৃত জলরাশি মৃত্যুভয় গ্রাস করে। আবার কখনও কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই গিলে ফেলতে পারে নানা ভয়। একটি ঘটনা সম্পর্কে মনের অবস্থান, মস্তিষ্কে হরমোনের কারিকুরি ইত্যাদি নানা কারণে ফোবিয়া জন্ম নেয় বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

মনোবিদদের মতে, জোর করে এই সব ভয় কাটাতে গেলে অনেক সময় আরও বেশি করে জেঁকে ধরে তা। তাই খুব অসুবিধা না হলে ফোবিয়াদের নিয়ে বেশি মাথা না ঘামানোই ভাল। তবে, যদি কোনও কোনও ফোবিয়া বাড়াবাড়ির আকার নেয়, তবে তা নিয়ে মনোবিদদের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন বলে মত মনোবিদ অমিতাভ মুখোপাধ্যায়ের।

Advertisement

আরও পড়ুন: ক্যানসার ও হৃদরোগ ঠেকাতে এই বিষয়েই ভরসা রাখার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

তবে চেনা ফোবিয়া ছাড়াও বিগত কয়েক বছরে আরও কিছু ফোবিয়া যোগ হয়েছে এই তালিকায়। ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিক্যাল ম্যানুয়াল অব মেন্টাল ডিজঅর্ডার’ বা ডিএসএম তাদের নয়া ফোবিয়া হিসেবে অনুমোদনও দিয়েছে।

ইকো অ্যাংজাইটি: বিশ্ব উষ্ণায়ন বহু বছর ধরেই চোখ রাঙাচ্ছিল। ঘন ঘন আবহাওয়ার বদল, প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকোপ, বিশেষ কয়েকটি ঋতুকে আলাদা আলাদা করে চিনতে না পারার আধুনিক সমস্যাও জন্ম দিয়েছে এক ফোবিয়া। বিশ্ব জুড়ে তরুণ প্রজন্মই এতে বেশি প্রভাবিত হয়েছে। মাঝে মাঝেই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার এক ভুয়ো প্রচার উঠে আসে। শুধু তা-ই নয়, সেই প্রেক্ষাপটের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন চলচ্চিত্রও তৈরি হয়েছে। অবশেষে পৃথিবীর সম্পদ ক্রমশ নষ্ট হয়ে গিয়ে এক অভাবনীয় বিপদের পথে আমরা এগোচ্ছি, এই ফোবিয়া হানা দিতে শুরু করেছে।

ফুড নিওফোবিয়া: এ এক আজব বিষয়! ভোজনরসিক তো নয়ই, এমনকি, এত ব্যস্ত যে খাওয়ার সময়ও নেই। মাঝে মাঝেই মনে হয়, খাবারের সময়টুকু কমিয়ে যদি ওই জায়গায় সাপ্লিমেন্ট বা ওষুধ খেয়ে খিদেটা কমিয়ে ফেলা যেত ভাল হত। নতুন কোনও রান্না চেখে দেখার সময় এই ভয় বেড়ে যায় দ্বিগুণ। শিশুদের মধ্যে খাবার দেখলেই ভয় পাওয়ার বা অনীহা প্রকাশের প্রবণতা বেশি। পরে এই ভয়ই ধীরে ধীরে তা উদ্বেগের আকার নিলেই তা জন্ম দেয় ফুড নিওফোবিয়ার।

আরও পড়ুন: ফ্যাটি লিভার খুব ভোগাচ্ছে? কী ভাবে জব্দ করবেন

কার্বোফোবিয়া: ওজন বাড়ছে হু হু করে। তাই সরল নিদান, নো কার্ব, লো ফ্যাট ডায়েট। গোটা বিশ্বেই এই ডায়েট খুব জনপ্রিয়। হাতেনাতে ফলও মেলে। কার্বোহাইড্রেট দেখলেই ভয়ে সিঁটিয়ে থাকার শুরুটা এ থেকেই। অনেকেই ধরে নেন, যাবতীয় কার্বোহাইড্রেট মানেই ক্ষতি। এ থেকেই কার্বোফোবিয়া গ্রাস করে।

নোমোফোবিয়া: ভয়ের চোটে ফোন বন্ধ করে রাখেন কেউ কেউ। নোটিফিকেশন আর মিসড কল দেখলেই কোথাও একটা ভয় দানা বাঁধে। নোমোফোবিয়ার শুরুটা এ ভাবেই হয়— জানাচ্ছিলেন মনোবিদ জয়রঞ্জন রাম। অদ্ভুত বিষয় হল, এরা কেউ ফোন ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারেন না কিন্তু! বরং ফোন ছাড়া কিছু সময় কাটালেই তাদের মনে হতে থাকে এই বুঝি অনেক নোটিফিকেশন, অনেক কল ও মেসেজ চলে এল! সে সব দেখার নেশা এমন মাত্রায় পৌঁছয় যে ফোন ছাড়া সময় কাটাতেই ভয় পায় তারা।

এডিটোভালটাফোবিয়া: সোশ্যাল মিডিয়ার নেশা এমন চেপে বসে যে সেখানকার ভার্চুয়াল জগতের সামনে নিজের ইমেজ নিয়েও বেশ উদ্বেগে থাকেন অনেকেই। কোন ছবি নিয়ে কে কী ভাবল, কোন পোস্টে বা কোন কমেন্টে কে কী মনে করল এগুলো এতই ভাবায় যে ছবি বা পোস্ট করতে হাত সরে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement