মাতৃদুগ্ধের বিকল্প নেই। নবজাতকের পুষ্টি, বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য যাবতীয় প্রয়োজন মায়ের দুধ থেকেই পাওয়া যায়। তাই জন্মের পরে, যত দ্রুত সম্ভব নবজাতককে মায়ের দুধ পান করানো জরুরি।
শিশুর জন্মের পরে, প্রথম ঈষৎ হলুদ বর্ণের যে গাঢ় দুধ নিঃসৃত হয়, তাকে ‘কলোস্ট্রাম’ বলা হয়। ‘কলোস্ট্রাম’ নবজাতকের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী। কারণ, এতে পুষ্টিগুণ ছাড়াও আরও বিভিন্ন ধরনের ‘ইমিউনোগ্লোবিউলিন’ থাকে, যা নবজাতককে ভবিষ্যতে কয়েকটি রোগ থেকেও মুক্ত রাখে।
শুধু তাই নয়, মায়ের বুকের দুধ সহজপাচ্য এবং যে তাপমাত্রায় পান করানো দরকার, সেই তাপমাত্রাতেই পাওয়া যায়। এটি নিরাপদ এবং জীবাণুমুক্ত। বুকের দুধ খাওয়ানো মায়ের ক্ষেত্রেও সমান উপকারী।
অথচ দেখা যায় কখনও নিরুপায় হয়ে আবার কখনও অপুষ্টির কারণে যথাযথ দুধ উত্পাদন না হওয়ার কারণে অনেক মা বিকল্প বেছে নিতে বাধ্য হন।
অনেকেই শিশুর জন্য বাজারজাত দুধ কিনে তা খাওয়ান। কর্মরত মায়েরা আবার যেমন অনেক সময়ই দুধ এক্সপ্রেস করে তা বোতলে নিয়ে শিশুকে খাওয়ান।
কিন্তু জানেন কি বোতলে দুধ খাওয়ানো কতটা ক্ষতিকর শিশুর জন্য? শুধু শিশুর জন্যই নয় একই ভাবে মায়ের জন্যও তা ক্ষতিকর।
বেশির ভাগ বোতল প্লাস্টিকের তৈরি। তাই অত্যন্ত ক্ষতিকারক বিসফেনল এ (বিপিএ) যা প্লাস্টিকের একটা উপকরণ তা দুধে মিশে যেতে পারে। যদিও এখন অনেক সংস্থাই দাবি করে বিপিএ মুক্ত বোতল বানানোর। তা হলেও কিছু রাসায়নিক দুধে মিশে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায় যা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে শিশুর স্বাস্থ্যে।
তা ছাড়া প্রতিবার শিশুকে খাওয়ানোর আগে বোতল খুব ভাল করে পরিষ্কার করাটা জরুরি। তা না হলে বোতলে ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর আশঙ্কা তৈরি হয়। ঠিক মতো বোতল পরিষ্কার করা সময় সাপেক্ষও।
স্তন্যপান মা এবং শিশুর মধ্যে একটি বন্ধন গড়ে তুলতেও সাহায্য করে। শিশুকে বোতলে দুধ খাওয়ালে শিশু আর মায়ের মধ্যে সেই বন্ধন তৈরি হয় না।
শিশু যদি বোতলে খেতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তা হলে স্তন্যপান সাধারণত করতে চায় না। কারণ বোতলে দুধ খেতে অনেক কম কষ্ট করতে হয় শিশুদের। আর শিশু স্তন্যপান না করলে ধীরে ধীরে মাতৃদুগ্ধ তৈরিও বন্ধ হয়ে যাবে।
বাজার চলতি বোতলের দুধে কখনও মাতৃদুগ্ধের সমান পুষ্টি থাকে না। ফলে শিশু অপুষ্টিতে ভুগতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও গড়ে ওঠে না শিশুর।
শিশুর পাশাপাশি স্তন্যপান করানো মায়েদের জন্য সমান উপকারী। শিশু স্তন্যপানের সময়ে একটি ব্রেস্ট থেকে প্রায় ৫০০ ক্যালরি বার্ন হয়। এতে মায়েদের ওজন অনেকটা কমতে পারে।
এমনকি ক্যানসার প্রতিরোধেও সাহায্য করে। স্তন্যপান করালে ব্রেস্ট ক্যানসার ও ওভারিয়ান ক্যানসারের ঝুঁকি কমে মায়েদের।