—প্রতীকী চিত্র
সমস্যাটি হতে পারে জন্মগত বা পরে বেড়েছে। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই তা অবহেলা করার নয়। স্ট্র্যাবিসমাস হল ট্যারা চোখের সমস্যা। অর্থাৎ চোখের মণিদু’টি বাইরের দিকে সরে গিয়েছে বা নাকের দিকে সরে এসেছে। অনেক সময়ে মনে করা হয়, ট্যারা চোখের সমস্যা বয়স বাড়লে ঠিক হয়ে যাবে। তা কিন্তু সব ক্ষেত্রে হয় না। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, এর চিকিৎসা প্রয়োজন। নয়তো দৃষ্টিশক্তি হারানোর ভয়ও থাকতে পারে।
স্ট্র্যাবিসমাস কী?
আমাদের দু’টি চোখে ছ’টি করে পেশি থাকে। এই পেশিগুলির ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে, এই সমস্যা দেখা যায়। আমাদের দু’টি চোখের দৃষ্টিরেখা (ভিসুয়াল অ্যাক্সিস) সাধারণত সমান্তরাল থাকে। দু’টি চোখে আলাদা ইমেজ তৈরি হয়। তা মস্তিষ্কে যখন পৌঁছয়, তখন মস্তিষ্ক সেটা প্রসেস করে একটি ইমেজ তৈরি করে। চিকিৎসার পরিভাষায় এটিকে বলা হয় বাইনোকুলার সিঙ্গল ভিশন। স্ট্র্যাবিসমাস হলে এই সিঙ্গল ভিশন তৈরি হয় না। ব্যক্তি অনেক সময়েই এক জিনিস দু’টি করে দেখতে থাকেন, যা তার দৈনন্দিন জীবনে অসুবিধের সৃষ্টি করে।
এ ছাড়া দৃষ্টিরেখা সমান্তরাল না হলে থ্রি-ডায়মেনশনাল বা ত্রিমাত্রিক এফেক্ট তৈরি হয় না। ডেপথ অব ফোকাস তৈরি হয় না। সাধারণত এই ব্যক্তিরা থ্রি ডি ছবি উপভোগ করতে পারেন না, সুচে সুতো পরানোর মতো কাজ করতে পারেন না।
কারও ক্ষেত্রে দু’টি চোখে এই সমস্যা হতে পারে। কারও ক্ষেত্রে একটি চোখে। কারও কারও ক্ষেত্রে কখনও বাঁ, কখনও বা ডান চোখে স্ট্র্যাবিসমাসের সমস্যা হতে পারে। সব ক্ষেত্রেই যে চোখটির দৃষ্টি সোজা, সেই চোখে চাপ বেশি পড়ে। ফলে অন্য চোখটি কাজ না করতে করতে ‘লেজ়ি আই’ হয়ে যেতে পারে। এটিকে বলা হয় অ্যাম্বিলোপিয়া।
আবার ট্যারা চোখের সমস্যা সময়মতো চিকিৎসা না করার ফলে, কোনও চোখের দৃষ্টি তৈরি না-ও হতে পারে। একটি চোখে কম দেখতে দেখতে সে ক্ষেত্রেও তা বাইরের দিকে সরে যেতে পারে।
স্ট্র্যাবিসমাস কেন হয়?
সাধারণত জন্মগত যে স্ট্র্যাবিসমাসের সমস্যাগুলি হয়, সে ক্ষেত্রে ওই পেশিগুলির ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ার কারণে হয়। এ ছাড়া নিউরোলজিক্যাল কারণেও এটি হতে পারে। প্যারালেটিক স্ট্র্যাবিসমাস সাধারণত জন্মগত নয়, পরে ডেভেলপ করে। চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রশান্ত চক্রবর্তীর মতে, ‘‘ডায়াবিটিসের কারণে এটি হতে পারে। চোখের মণির পাশে টিউমরের কারণে হতে পারে। প্যারালেটিক স্ট্র্যাবিসমাসে এক জিনিসকে দু’টি করে দেখার প্রবণতা বেশি থাকে।’’ সে ক্ষেত্রে নিউরোলজিস্টের পরামর্শমতো চিকিৎসা হয়।
চিকিৎসা
ট্যারা চোখের চিকিৎসা মূলত তিন ধরনের। পাওয়ার চেক, এক্সারসাইজ় এবং সবশেষে সার্জারি। স্ট্র্যাবিসমোলজিস্ট ঈপ্সিতা বসু এই চিকিৎসাগুলি বিশদে জানালেন—
অনেকের ক্ষেত্রে সাধারণ চশমা কাজে না এলে, প্রিজ়ম গ্লাস ব্যবহার করা হয়।
কতকগুলি ভ্রান্ত ধারণার নিরসন
সার্জারি করানোর পরে আবার ফিরতে পারে স্ট্র্যাবিসমাস। এটি পুরোপুরি সত্যিও নয়, আবার মিথ্যেও নয়। কোন বয়সে, কী ভাবে কার উপরে এটি করা হচ্ছে, তার উপরে বিষয়টি নির্ভর করছে। সার্জারির পরেও এক্সারসাইজ় করতে হতে পারে। একটি নয়, একাধিক সার্জারির প্রয়োজন পড়তে পারে।
যদি দু’টি চোখের দৃষ্টি তৈরি না হয়, সে ক্ষেত্রেও সার্জারি করে চোখ দু’টিকে সোজা করা যায়। সার্জারির উদ্দেশ্য দু’টি, কসমেটিক বা দেখতে ভাল লাগা। ফিজ়িয়োলজিক্যাল বা দৃষ্টিশক্তির গুণগত মান বাড়ানো। কসমেটিক সার্জারি যে কোনও বয়সে করা যায়।
স্ট্র্যাবিসমাসের চিকিৎসা সম্ভব। প্রয়োজন সময়মতো সচেতনতা।