প্রতীকী ছবি। শৌজন্যে: শাটারস্টক
করোনাভাইরাস-আতঙ্কের মধ্যেই হানা দিয়েছে বার্ড ফ্লু ও সোয়াইন ফ্লু। চিকিৎসকদের পরিভাষায় এই তিনটি অসুখকে একত্রে ‘অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম’ বলা হয়। কলকাতায় ইতিমধ্যেই এক জনের শরীরে সোয়াইন ফ্লু হানা দিয়েছে। বার্ড ফ্লু-ও জাঁকিয়ে বসেছে কেরলে।
অবহেলা করলে, রোগ নির্ণয়ে দেরি হলে তিনটি অসুখই মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তাই শরীরে লক্ষণ প্রকাশের পর থেকেই সচেতন হয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। মেনে চলতে হবে চিকিৎসকদের পরামর্শও।
কিন্তু এই তিনটির মধ্যে কোন অসুখ দানা বেঁধেছে তা বুঝব কী করে? আদৌ কি এই তিনটি অসুখের লক্ষণে কোনও ফারাক রয়েছে?
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, “এই তিন অসুখের ক্ষেত্রেই তেড়ে জ্বর আসে। সঙ্গে থাকে শ্বাসকষ্ট ও সর্দি-কাশি। গায়ে হাত-পায়ে ব্যথা শুরু হয়। ‘ফ্লু’-এর সব রকম উপসর্গই এই তিনটি রোগেই থাকে। তাই উপসর্গের দিক থেকে কোনও ফারাক নেই।’’
তা হলে ফারাক কিসে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, খালি চোখে দেখলে ফারাক কিছুতেই বোঝা যায় না। রোগীও বুঝতে পারেন না, চিকিৎসকও নন। তবে চিকিৎসকরা রোগীর অসুখের তথ্য শোনার পাশাপাশি, রোগী কাদের সঙ্গে ওঠাবসা করেন, সম্প্রতি বিদেশ গিয়েছিলেন কি না, গেলে কোন দেশে, এই তিন অসুখের মধ্যে কোনওটিতে আক্রান্ত কারও আয়ত্তের মধ্যে গিয়েছেন কি না, এ সব খুঁটিয়ে বিচার করে রোগীর রোগ সম্পর্কে ধারণা করার চেষ্টা করেন। এর পর ন্যাসো ফ্যারিঞ্জিয়াল সোয়াব বা থ্রোট সোয়াবের মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখা হয় কী ধরনের অসুখ।
আরও পড়ুন: বেঙ্গালুরুতে করোনা আক্রান্ত গুগলের কর্মী, গ্রিস থেকে ফিরেই সংক্রমণ
এই তিনটি অসুখই ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ায়। তাই অসুখ রোখার নিয়মগুলোও এক। ভাল ভাবে সাবান দিয়ে হাত ধোওয়া, যেখানে সেখানে কফ-থুতু না ফেলা, অসুস্থ মানুষের মাস্ক ব্যবহার— এ সবের মাধ্যমেই এই তিন অসুখ প্রশমনের চেষ্টা করা হয়। তবে সোয়াইন ফ্লু ও বার্ড ফ্লু একলপ্তে অনেকের শরীরে পাওয়া যায়নি বলে সাধারণত অসুস্থ হলে তবেই তাকে আইসোলেশন পদ্ধতিতে (আলাদা ঘরে রেখে) চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু করোনার বেলায় কোনও সুস্থ লোকও যদি করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে ঘুরে আসেন, তবে তাঁকেও আইসোলেশনে কিছু দিন রেখে শরীরের গতিবিধি নজর রাখা হচ্ছে।
ফারাক আছে প্রতিষেধকেও। সোয়াইন ফ্লু ও বার্ড ফ্লু-র জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল ওষুধ রয়েছে। কিন্তু করোনার জন্য তেমন কোনও প্রতিষেধক এখনও গবেষকদের সন্ধানে নেই।
আরও পড়ুন: আইডি-তে ভর্তি ইটালীয় দম্পতি
ফারাক রয়েছে খাওয়াদাওয়াতেও। সোয়াইন ফ্লু বা বার্ড ফ্লু হলে মাংস খাওয়ায় কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। সুসিদ্ধ করে রান্না করে খেলে ভয়ও নেই। শুধু রাজ্যে বার্ড ফ্লুয়ের সংক্রমণ ছড়ালে নিশ্চিন্ত থাকতে মুরগি বা যে কোনও পাখির মাংস খেতে নিষেধ করা হয়।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ