ছোট শব্দ ‘সাইকো’। অনেকেই হয়তো মজার ছলে কাউকে বলে দেন, ‘ও তো সাইকো’... কিন্তু শব্দের উৎস যেখানে, সেই জায়গাটা অন্ধকারে ঢাকা। ‘সাইকোসিস’ থেকে সাইকো শব্দের ব্যবহারিক প্রয়োগ বলা যায়। ‘সাইকো’ ছবিটি মুক্তির পর থেকে এই শব্দের প্রয়োগ বাড়ে। কিন্তু এটা একেবারেই মজার ছলে বলার মতো বিষয় বা শব্দ নয়। সাইকো কথাটা এসেছে সাইকোসিস থেকে। মানসিক রোগের একটি মেডিক্যাল কন্ডিশন বলা যায় সাইকোসিসকে।
সাইকোসিস কী?
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জয়রঞ্জন রাম বললেন, “মানসিক রোগকে মূলত দু’ভাগে ভাগ করা হয়। নিউরোসিস ও সাইকোসিস। কমন মেন্টাল ডিজ়অর্ডার বলতে নিউরোসিস। যেমন, অ্যাংজ়াইটি ডিজ়অর্ডার, ডিপ্রেশন। আর সাইকোসিস হল অনেক জটিল ও গুরুতর মানসিক রোগ। এখন অবশ্য এই টার্ম ব্যবহার করা হয় না। এখন মানসিক রোগকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়, কমন মেন্টাল ডিজ়অর্ডার, সিরিয়াস মেন্টাল ডিজ়অর্ডার। একটা উদাহরণ দিলে সহজ হবে। যেমন আগে বলা হত অ্যাংজ়াইটি নিউরোসিস, অবসেসিভ কমপালসিভ নিউরোসিস। এখন এদের বলা হয় অ্যাংজ়াইটি ডিজ়অর্ডার, অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজ়অর্ডার ইত্যাদি। আর সাইকোসিস পর্যায়ে রোগ অনেক জটিল। সাইকোসিসে বাস্তবের সঙ্গে রোগীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। নিজের খেয়াল রাখতে পারেন না, অসংলগ্ন কথা বলেন। তবে সাইকোসিসকে একটা উপসর্গ বলা যায় জ্বরের মতো। অনেক রোগেই সাইকোসিস দেখা যায়। যেমন স্কিজ়োফ্রেনিয়া, বাইপোলার মুড ডিজ়অর্ডার বিভিন্ন কারণে সাইকোসিস হতে পারে। কোন রোগের জন্য এটা হচ্ছে, বুঝে চিকিৎসা শুরু করতে হবে।”
উপসর্গে নজর রাখুন
খুব কম বয়সেও কিন্তু এ ধরনের জটিল মানসিক রোগ হতে পারে। পিউবার্টির আগে সাধারণত এ ধরনের রোগ দেখা যায় না। তবে বয়ঃসন্ধির সময় থেকে জটিল মানসিক রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। বিশেষত, পরিবারে যদি এই ধরনের জটিল মানসিক রোগ কারও থেকে থাকে, তা হলে সেই পরিবারে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও এ রকম রোগের আশঙ্কা থাকে। সাইকোসিসে আক্রান্ত হলে তার উপসর্গগুলোও খুব স্পষ্ট হয়। ডা. রাম কিছু উপসর্গের দিকে নজর রাখতে বললেন। যেমন,* বাস্তবজ্ঞান লোপ পায়। কোথায় আছে বুঝতে পারেন না রোগী, দিন-ক্ষণ-কাল গুলিয়ে যায়। শরীরের যত্ন নিতে পারেন না।
* হ্যালুসিনেশন করতে থাকেন রোগী। অনেক সময়ে অডিটরি হ্যালুসিনেশনও হয়। রোগীর মা বা বাবা হয়তো বেঁচে নেই বা কাছে নেই, কিন্তু তিনি মায়ের কথা শুনে যাচ্ছেন। তাঁর মনে হচ্ছে তাঁর মা বা বাবা হয়তো তাঁকে কিছু বলছেন।* সন্দেহপ্রবণতা দেখা দেয়। রাস্তাঘাটে কোনও মানুষকে অহেতুক সন্দেহ করতে পারেন রোগী। হয়তো পাশ দিয়ে কেউ যাচ্ছেন, রোগী ভাবলেন, তাঁকে ফলো করছে। আবার কেউ তাঁর খাবারে বিষ মিশিয়ে দিচ্ছেন, এমন চিন্তাভাবনাও আসতে পারে রোগীর মনে।
চিকিৎসা
এই রোগে কাউন্সেলিং ততটা কাজে দেয় না। ওষুধ খেতে হবে নিয়মিত। ওষুধের বিকল্প নেই এ রোগে। সারা জীবন ধরেই ওষুধ চলবে। ওষুধে এ রোগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত থাকে। এমনও দেখা গিয়েছে যে, কম বয়সে এ রোগে আক্রান্ত হয়েও ওষুধ খেয়ে তিনি সুস্থ জীবনযাপন করছেন। বিয়ে করে সন্তান নিয়ে সংসার করছেন, চাকরি করছেন। কিন্তু ওষুধ বন্ধ করলে চলবে না।
সাইকোসিস নির্দিষ্ট কোনও রোগ নয়। বরং বলা যেতে পারে একাধিক জটিল মানসিক রোগের উপসর্গ। তাই এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে অবহেলা করবেন না। শীঘ্রই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আর মজার বিষয় হিসেবেও এই শব্দবন্ধের প্রয়োগ ঠিক নয়। এই ধরনের রোগীরা নিদারুণ যন্ত্রণা ও কষ্টের মধ্য দিয়ে দিনযাপন করেন। তাই তাঁদের প্রতি সমবেদনা থাকাই মানবিক।