রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে খাবার পাতে মন দিন। ছবি: শাটারস্টক।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে প্রাচীন কাল থেকেই যে সব খাবারকে রোগ প্রতিরোধক ও জীবাণুনাশক হিসেবে ধরা হত, হলুদ তাদের মধ্যে অন্যতম। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানও হলুদের গুণাগুণ বিচার করে তাঁকে মান্যতা দিয়েছে। কাঁচা ও শুকনো হলুদের গুঁড়োতে আছে প্রচুর পরিমাণে কারকিউমিন যৌগ, যা আসলেও একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা কারকিউমিনকে ‘ম্যাজিক যৌগ’ বলেন। কারকিউমিন ছাড়াও হলুদে আছে ফোলেট যা ফলিক অ্যাসিডের মূল উপাদান (গর্ভাবস্থার শুরু থেকে নিয়মিত খাওয়া উচিত), নিয়াসিন, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, ভিটামিন কে, ভিটামিন ই, প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট।
এখানেই শেষ নয়, কাঁচা হলুদে আছে ভিটামিন সি। সুতরাং রোজ নিয়ম করে কাঁচা হলুদ খাওয়া ও রান্নায় হলুদ ব্যবহার করলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার হয়। সাধারণ জ্বর সর্দি হাঁচি কাশির পাশাপাশি কোভিডের মতো অসুখকে ঠেকাতে পারে। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন হলুদের মধ্যে থাকা কারকুমিন বিভিন্ন অসুখবিসুখের বিরুদ্ধে লড়াই এর এক অন্যতম হাতিয়ার।
‘ন্যাশানাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর আয়ুর্বেদিক ড্রাগ ডেভলপমেন্ট’-এর প্রাক্তন অধিকর্তা, আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ সুবল কুমার মাইতির মতে, খুব ভাল হয় যদি শুকনো হলুদ বেটে নিয়ে রান্নায় ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া সকালে খালিপেটে এক ইঞ্চি পরিমাণে কাঁচা হলুদ সামান্য আখের গুড় দিয়ে খেয়ে এক গ্লাস গরম জল খেলে শরীরের সব দূষিত পদার্থ বেরিয়ে যাওয়ারর পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার হয়।’’
তবে শুকনো হলুদের চেয়ে কাঁচা হলুদে উপকার বেশি। যেমন, কাঁচা হলুদে ভিটামিন-সি থাকে যা, শুকনো হলুদে থাকে না। তবে দু’রকম হলুদেই কারকিউমিন থাকে। এটি রোগ প্রতিরোধের পাশাপাশি আমাদের পিত্ত নিঃসরণও বাড়িয়ে দেয়। ফলে এক দিকে হজম ক্ষমতা বাড়ে অন্য দিকে হজম সংক্রান্ত নানা সমস্যাও কমে যায়।
বদহজম, আলসারেটিভ কোলাইটিস, ক্রোনস ডিজিজ ইত্যাদি পেটের রোগ প্রতিরোধ করতে পারে হলুদের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট।
ব্যথা কমাতেও হলুদ কার্যকর। অস্টিও আর্থ্রাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস সহ জয়েন্ট পেন কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া কোনও ব়ড় আঘাত সারাতে চুনের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে লাগানোর প্রচলন ছিল।
সকালে খালিপেটে কাঁচা হলুদ খেলে প্যানক্রিয়াস উদ্দীপিত হয় ও সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে। ফলে ডায়াবিটিস কিছুটা প্রতিরোধ করা যায়। ডায়াবিটিসের রোগীরাও হলুদ খেলে রোগের জটিলতা কম থাকে।
হার্টের অসুখ প্রতিরোধ করতে পারে হলুদের কারকিউমিন। হৃদপিণ্ডের রক্তবাহী ধমনীতে চর্বির প্রলেপ পড়ে আর্টারি সরু হয়ে গিয়ে হার্টে অক্সিজেন কমে যায়। এতে আচমকা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। এই সমস্যা প্রতিরোধ করতে পারে হলুদ। রোজকার ডাল-তরকারিতে কিছুটা হলুদ থাকলে ধমনিতে চর্বি জমার হার অনেকটাই কমে যায়।
রোজ হলুদ দেওয়া রান্না খেলে মস্তিষ্কের কোষ উজ্জীবিত থাকে, বেশি বয়সে ডিমেনশিয়া বা অ্যালঝাইমারস ডিজিজ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ক্যানসার কোষের বাড়বাড়ন্ত থামিয়ে দিতে পারে হলুদের কারকিউমিন। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, নিয়মিত হলুদ ব্যবহার করলে প্রি-ক্যানসারযুক্ত পলিপ ৬০ শতাংশেরও বেশি কমে যায়।
একই সঙ্গে শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোরদার করে যে কোনও সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। তাই করোনা যুদ্ধেও সঙ্গে থাকুক হলুদ।