রক্তের রোগকে অবহেলা নয়। ছবি: শাটারস্টক
জটিল রক্তরোগ, যেমন থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলিয়া, রক্তের ক্যানসার ইত্যাদি থাকা মানে এমনিই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, তার উপর কোভিডের বিপদ এড়াতে এই সব রোগীরা কেউই আর বিশেষ পা রাখছেন না ঘরের বাইরে। অনেক সময় পা রেখেও লাভ হচ্ছে না। কারণ এখনও বহু জায়গায় ডাক্তার অমিল। আগে হয়তো যেখানে দেখাতেন সেখানে এখন কোভিডের চিকিৎসা হচ্ছে। ফলে ডাক্তাররাও অনেক সময় আসতে বারণ করে দিচ্ছেন।
রুটিন চেকআপও হচ্ছে না কারও কারও। চিকিৎসায় বাধা পড়ছে। কারও হয়তো রক্ত নেওয়ার কথা, নেওয়া হচ্ছে না। কারও কেমোথেরাপির দিন পেরিয়ে যাচ্ছে, বা ওষুধ বদলানো দরকার, তা হয়ে উঠছে না। সে সবের হাত ধরে একদিকে যেমন সেই রোগের বাড়াবাড়ি হচ্ছে, আর বাড়াবাড়ি অসুস্থ, দুর্বল শরীরে সহজেই থাবা বসাচ্ছে কোভিড। স্বাভাবিক নিয়মে বাড়ছে কোভিডের জটিলতাও।
“উন্নত দেশে যেমন থ্যালাসেমিয়া জাতীয় রক্তের অসুখ নেই বললেই চলে, আমাদের দেশে এখনও এসব রোগের প্রকোপ বেশ বেশি। আর সমস্যা হল, রোগীদের মধ্যে অনেকেই গরিব ও দূরদূরান্তে থাকেন। সচেতনতারও অভাব আছে। করোনা নিয়ে নিরন্তর প্রচারের ফলে অনেক সময় তাঁরা বুঝে উঠতে পারেন না কোনটা বেশি বিপজ্জনক, তাঁর রোগটা না করোনা। ফলে এমনিতে কোনও অসুবিধা না থাকলেও যাঁদের নিয়মিত রক্ত নিতে হয়, বা কেমোথেরাপি করতে হয় তাঁরাও কোভিডের ভয়ে সময়মতো চিকিৎসা করাতে আসেন না। সবে মিলে বিপদ বাড়ে।” জানালেন রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ তুফানকান্তি দলুই।
আরও পড়ুন:স্পুটনিকে জব্দ কোভিড ১৯? কী বলছেন চিকিৎসকরা
বাড়ছে বিপদ
“ রক্তের জটিল অসুখ থাকলে একদিকে যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে বলে কোভিড হওয়ার আশঙ্কা বেশি, আবার কোভিড হলে তার জটিলতার আশঙ্কাও অনেক বেড়ে যায়। তার উপর, করোনার যে সমস্ত প্রচলিত উপসর্গ আছে, জ্বরজারি-কাশি-গলাব্যথা ইত্যাদি, তা অনেক সময় থাকে না তাঁদের। সামান্য দুর্বলতা বা গা ম্যাজম্যাজের পরই অনেকের হঠাৎ করে প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিতে না পারলে ঘটে যেতে পারে মারাত্মক বিপদ। আর বর্তমানে যা পরিস্থিতি, আগে থেকে এলেও হাসপাতালে জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না, শেষ মুহূর্তে এলে কী হতে পারে, বুঝতেই পারছেন। অতএব কোনওমতেই মূল রোগের চিকিৎসায় অবহেলা করলে চলবে না। তার সঙ্গে সতর্ক থাকতে হবে কোভিডের ব্যাপারেও, যাতে রোগ হতে না পারে বা হলেও চট করে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।” জানালেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: কোভিডের মরসুমে উচ্চরক্তচাপ বশে রাখতে না পারলে বিপদ, নিয়ন্ত্রণ কী ভাবে, জেনে রাখুন
যাঁদের নিয়মিত রক্ত নিতে হয়, বা কেমোথেরাপি রয়েছে, তাঁরা করোনা আবহে আরও সতর্ক থাকুন। ছবি: এপি
সমাধান
• নিয়মিত চিকিৎসা করে রোগটাকে বশে রাখুন। কোভিড ঠেকানোর এবং আক্রান্ত হলে রোগের জটিলতা কম রাখার এটাই হল সবচেয়ে বড় ধাপ।
• রক্ত নেওয়ার প্রয়োজন হলে দেরি করবেন না। দু-একটি ক্ষেত্রে ১০-১৫ দিন পর্যন্ত দেরি হলে তবু চলতে পারে। বাকি ক্ষেত্রে নয়। কেমোথেরাপি বা অন্য চিকিৎসার ক্ষেত্রেও দেরি করা চলবে না।
• অসুস্থ লাগলে চিকিৎসকের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করুন। বেশির ভাগ গ্রামের হেল্থ সেন্টারে থ্যালাসেমিয়া ও অন্যান্য রক্তের অসুখের কাউন্সিলর থাকেন। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও সঠিক পরামর্শ পাবেন।
• কোভিড সংক্রান্ত সবরকম নিয়ম মেনে চলুন। নিয়মিত হাত ধুয়ে ফেলুন। মাস্ক, ফেস শিল্ড না পরে বাড়ির বাইরে পা রাখবেন না। প্রয়োজনে বাড়িতেও পরতে হতে পারে। সবার সঙ্গে ৬ ফুটের দূরত্ব বজায় রেখে চলুন। বাড়িতেও মেনে চলতে হবে। কারণ কার শরীরে রোগ আছে তা কিন্তু সব সময় বোঝা যায় না।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)