প্রতীকী ছবি
গ্লাভস পরা থাকলে কোনও কিছুর স্পর্শ থেকে বাঁচবে হাত। এই ধারণা থেকেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ রুখতে মাস্কের পাশাপাশি অনেকেই ব্যবহার করছেন গ্লাভস। কিন্তু প্রশ্ন হল, সকলেরই কি সেটি ব্যবহার করা প্রয়োজন? আবার গ্লাভস থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও দেখা দিচ্ছে অনেকের মনে। চিকিৎসকদের দাবি, সকলের যেমন মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই, তেমনই সাধারণ মানুষেরও অযথা গ্লাভস পরার যুক্তি নেই। তাঁরা জানাচ্ছেন, একমাত্র স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যাঁরা সরাসরি যুক্ত, তাঁদেরই গ্লাভস ব্যবহার করা উচিত। পাশাপাশি তাঁদের দাবি, নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে গ্লাভস ব্যবহার করা না-হলে উপকারের থেকে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি।
বক্ষরোগ চিকিৎসক ধীমান গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘সার্জিক্যাল গ্লাভসই ব্যবহার করা উচিত। এক বার ব্যবহারের পরে গ্লাভসকে জীবাণুমুক্ত করে আবার ব্যবহার করা হয় না। তবে সাধারণ মানুষের অহেতুক গ্লাভস পরার প্রয়োজন নেই। যদি পরতেও হয়, সার্জিক্যাল গ্লাভসই পরা উচিত।’’ প্রশ্ন হল, গ্লাভস থেকেও কি সংক্রমণ ছড়াতে পারে?
চিকিৎসকদের মত, তার আশঙ্কা প্রায় নেই। তাঁদের দাবি, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সাফাইকর্মীরা গ্লাভস ব্যবহারের পদ্ধতি ভাল জানেন। নির্দিষ্ট কাজটি শেষ হলে তাঁরা গ্লাভস খুলে নষ্ট করে দেন। ওই একই গ্লাভস বারবার ব্যবহার করেন না। মেডিসিনের চিকিৎসক জ্যোর্তিময় পাল বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে গ্লাভস কাদের পরা প্রয়োজন, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে। সেখানে কোথাও সাধারণ মানুষের কথা বলা হয়নি।’’ যদিও অনেকের দাবি, ‘‘গ্লাভস পরা থাকলে হাত অনেকটাই নিরাপদ। খালি হাত চোখে-মুখে লাগলে সংক্রমণের ভয় থাকে।’’
চক্ষু চিকিৎসক শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, এমন ধারণা ভুল। তিনি বলেন, ‘‘গ্লাভস পরে চোখ-নাক-মুখে হাত দিলেও সংক্রমণের আশঙ্কা রয়ে যায়। আসলে সব থেকে বড় সমস্যা, সাধারণ মানুষ গ্লাভস পরতে অভ্যস্ত নন।’’ তিনি জানান, সার্জিক্যাল গ্লাভসের বিভিন্ন মাপ রয়েছে। চিকিৎসক ও অন্যেরা তাঁদের প্রয়োজন মতো নির্দিষ্ট মাপের গ্লাভস পরেন। গ্লাভস খোলার পরেও হাত ভাল করে ধুতে হয়। আর গ্লাভস পরতে গিয়ে তা ফুটো হয়ে গেলে বা ফেটে গেলে সেটি ব্যবহার করা বিপজ্জনক বলেও জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
ভাইরোলজিস্ট বিভূতি সাহার কথায়, ‘‘গ্লাভস পরে অনেকে মনে করছেন তিনি নিরাপদ। কিন্তু সেটা ঠিক নয়। তার থেকে বারবার সাবান বা স্যানিটাইজ়ার দিয়ে হাত ধোয়া ভাল।’’ বারবার জল-সাবান ব্যবহার করে হাত সাফ করলে চামড়ার ক্ষতি হলেও তা ঠিক করা সম্ভব বলে জানাচ্ছেন চর্মরোগ চিকিৎসক নীলেন্দু শর্মা। তিনি বলেন, ‘‘এক মাস টানা বারবার জল-সাবান ব্যবহার করলে চামড়ার ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু সেটা প্রাণঘাতী নয়।’’ তবে নীলেন্দুবাবু এ-ও মনে করাচ্ছেন, সংক্রমণ রোধের কাজ করার সময়ে নিরাপত্তারক্ষী ও সাফাইকর্মীদের নিজেদের স্বার্থেই গ্লাভস ব্যবহার করা উচিত। তাঁর কথায়, ‘‘গ্লাভস ব্যবহারের নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলা উচিত। না হলে বিপদ থেকেই যাবে।’’