আক্রান্ত শিশুর শরীরে বেরিয়েছে র্যাশ। নিজস্ব চিত্র
ষাটের দশকে জাপানে কাওয়াসাকি নামে এক শিশুরোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল। করোনা আবহে সেই কাওয়াসাকি রোগের মতোই উপসর্গযুক্ত নতুন এক রোগে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে দুই মেদিনীপুর-সহ রাজ্যের একাধিক জেলায়। চিকিৎসকেরা নতুন এই রোগের নাম বলছেন, ‘পেডিয়াট্রিক মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লেমেটরি সিনড্রোম বা ‘মাল্টি সিস্টেম ইনফ্লেমেটরি সিনড্রোম’। উপসর্গ করোনার কাছাকাছি হওয়ায় শিশুদের করোনা পরীক্ষাও হচ্ছে। রিপোর্ট আসছে নেগেটিভ অথবা অমীমাংসিত।
গত দু’সপ্তাহে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে পাঁচ জন শিশুর এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে খবর। আক্রান্তের খবর মিলেছে হাওড়া, হুগলি থেকেও। কাওয়াসাকি রোগের মূল উপসর্গ হল— তীব্র জ্বর, জিভ ও ঠোঁট লাল হয়ে যাওয়া, শরীরের শিরা-উপশিরা ফুলে যাওয়া এবং র্যাশ বেরনো। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কাওয়াসাকিতে আক্রান্ত শিশুর জ্বর অ্যান্টিবায়োটিকে কমতে চায় না। নতুন রোগটির ক্ষেত্রে শিশুদের কাওয়াসাকির মতো উপসর্গ ছাড়াও পেটে ব্যথা, পাতলা পায়খানার অতিরিক্ত উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞেরা একে বলছেন ‘টিপিক্যাল কাওয়াসাকি’ বা পিআইএমএস। মূলত ২ থেকে ১৪ বছরের শিশু-কিশোররা ওই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
গত দু’সপ্তাহে এ রকম পাঁচটি শিশুর চিকিৎসা করেছেন কোলাঘাটের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রবীর ভৌমিক। তিনি বলেন, ‘‘করোনার আগে গোটা বছরে হয়তো কাওয়াসাকি উপসর্গযুক্ত এক-দু’জন শিশুকে পাওয়া যেত। এখন গত দু’সপ্তাহে ওই উপসর্গের পাঁচটি শিশুকে পেলাম। কাওয়াসাকির উপসর্গের সঙ্গে নতুন উপসর্গও মিলছে আক্রান্তদের শরীরে।’’ ‘ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ’-এর প্রফেসর তথা ডিরেক্টর অপূর্ব ঘোষও মানছেন, ‘‘এটা ঠিকই যে, করোনা-কালে গোটা রাজ্যেই কাওয়াসাকি উপসর্গযুক্ত শিশুর সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে।’’ হাওড়ার এন এইচ নারায়ানা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক আইসিইউ কনসালট্যান্ট ইনচার্জ শুভদীপ দাস জানালেন, গত দু’সপ্তাহে কাওয়াসাকি রোগের উপসর্গযুক্ত দু’জন শিশুকে পেয়েছেন। একজনের বাড়ি হুগলিতে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক যদিও জানান, এ বিষয়ে তাঁদের কাছে কোনও তথ্য সে ভাবে নেই। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, যথাসময়ে চিকিৎসা হলে এই রোগ নিরাময় সম্ভব। তবে চিকিৎসা খরচসাপেক্ষ। এ ক্ষেত্রে ‘ইন্ট্রা ভেনাস ইমিউনো গ্লোবিউলিন’ (আইভিআইজি) ব্যবস্থায় চিকিৎসা হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের বছর দেড়েকের একটি শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। তার বাবা বলেন, ‘‘ভোপাল থেকে মাস দেড়েক আগে ফিরেছি। তার পরেই ছেলের খুব জ্বর হয়, র্যাশ বেরোয়। করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। এখন ও সুস্থ।’’
করোনা আবহে ব্রিটেন, আমেরিকা, ইটালিতে কয়েক হাজার শিশু ‘পিএমআইএস’-এ আক্রান্ত হয়েছে। ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল ‘বিএমজে’র এপ্রিল সংস্করণে এই বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। হু এবং আমেরিকার ‘সেন্টার অব ডিজ়িজ় কন্ট্রোল’ আবার জানিয়েছে, এই রোগের সঙ্গে করোনার সম্পর্ক রয়েছে। যদিও ঠিক কী সম্পর্ক তা জানতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবডি টেস্ট প্রয়োজন, যা আমাদের দেশে খুব কমই হচ্ছে।