Physical Exercise

ছকে বাঁধা নিয়ম ভেঙে

ফিটনেস বিশেষজ্ঞ গুরুপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘ব্যায়ামের সামান্য এ দিক ও দিক হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই জিমে যাওয়ার আগে প্রথমেই বুঝতে হবে, সব ব্যায়াম সকলের জন্য নয়।

Advertisement

কোয়েনা দাশগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১০:১৩
Share:

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

কেউ ওজন কমাতে, কেউ টোনড বডি পেতে, কেউ পেশি তৈরি করতে... নানা চাহিদা নিয়ে জিমে ভর্তি হন অনেকে। কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকরাই পরামর্শ দেন জিমে যাওয়ার। কারণটা হয়তো ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ওবেসিটি বা অন্য কিছু। আপনি ভাবছেন, জিমে ভর্তি হলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তা কিন্তু নয়। সেখান থেকে নতুন সমস্যার সূত্রপাতও হতে পারে। শহরে যত্রতত্র জিম গজিয়ে উঠেছে। কিন্তু ক’টা জায়গায় স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে, বৈজ্ঞানিক উপায়ে ট্রেনিং দেওয়া হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এর অন্যতম কারণ, অধিকাংশ জিমে সকলকেই একটা ছকে বাঁধা শারীরচর্চা করানো হয়। অথচ প্রতিটি মানুষের শারীরিক গঠন, ক্ষমতা, প্রয়োজনীয়তা আলাদা। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কিছু দিন জিমে যাওয়ার পরে অনেকেই তা হঠাৎ করে ছেড়ে দেন। চোট, আঘাতের ঘটনাও ঘটে। তাই জিমে গিয়ে এক্সারসাইজ় শুরু করার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি।

Advertisement

অনেক জিমে এক্সারসাইজ়ের একটা গড়পরতা চার্ট ধরিয়ে দেওয়া হয়। যিনি অনেক দিন ধরে ব্যায়াম করছেন, তাঁর হয়তো এতে সমস্যা হবে না। কিন্তু যিনি আনকোরা, তিনি কতটা উপকৃত হবেন সন্দেহ আছে। পার্সোনাল ট্রেনার রেখে জিম করার ট্রেন্ড এখন। কিন্তু সে ক্ষেত্রে আপনার শারীরিক সমস্যা, কাজের রুটিন, জীবনযাপনের সব কিছু সেই ট্রেনারকে জানানো উচিত। তবেই তিনি আপনার মতো করে এক্সারসাইজ় পরিকল্পনা করতে পারবেন।

ফিটনেস বিশেষজ্ঞ গুরুপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘ব্যায়ামের সামান্য এ দিক ও দিক হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই জিমে যাওয়ার আগে প্রথমেই বুঝতে হবে, সব ব্যায়াম সকলের জন্য নয়। আমাদের প্রত্যেকের শারীরিক গঠন আলাদা, এমনকি প্রত্যেকের ফিটনেস গোলও ভিন্ন রকমের। কেউ বাড়তি মেদ ঝরানোর জন্য জিমে ভর্তি হন, আবার কেউ শুধুমাত্র কর্মক্ষম থাকার জন্যই ব্যায়াম করেন। কারও উদ্দেশ্য ডায়াবিটিস, ঘাড়-কোমর-পায়ের ব্যথা কমানো, আবার অনেকে চান নায়কোচিত বডি বানাতে। তাই চাহিদা যখন আলাদা, শারীরচর্চার ধরনও আলাদাই হবে। একই ধরনের ব্যায়াম যে সকলের জন্য নিরাপদ, এমনটা মনে করার কোনও কারণ নেই।’’ তাঁর পরামর্শ, জিমে ভর্তি হওয়ার সময়ে কর্তৃপক্ষকে নিজের সুবিধে-অসুবিধে ও চাহিদা স্পষ্ট করে জানানো উচিত।

Advertisement

জেনে রাখুন

  • কার্ডিয়ো, ওয়েট ট্রেনিং, যোগব্যায়াম, জ়ুম্বা, ক্যালাস্থেনিক্স... শারীরচর্চার নানা পদ্ধতি। গুরুপ্রসাদ বলছেন, “আপনার বন্ধুর জন্য যে ব্যায়াম দরকারি, তা আপনার জন্য না-ও হতে পারে। চলতি ট্রেন্ডে গা ভাসাবেন না। কী কী ব্যায়াম করানো হয় এবং কোন ব্যায়াম কোন সমস্যার জন্য, সেটা জেনে নিন।
  • বয়স অনুসারে ব্যায়ামের ধরনও আলাদা হবে। যাকে বলা হয় ‘এলিজিবিলিটি অব এক্সারসাইজ়’। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের পরিস্থিতি ও চাহিদা আলাদা হয়ে যায়। কুড়ি-তিরিশ বছরের একটি ছেলে যে ধরনের ব্যায়াম করবে, একজন বয়স্ক ব্যক্তির পক্ষে কিন্তু তা ক্ষতিকর হতে পারে। তাই একটু বেশি বয়সে জিমে যেতে শুরু করলে প্রশিক্ষকের কাছ থেকে স্পষ্ট করে জেনে নিন, সে ধরনের ব্যায়াম আদৌ আপনার বয়সের উপযোগী কি না।
  • ব্যাক পেন বা আর্থ্রাইটিসের সমস্যা থাকলে বুঝে ব্যায়াম করুন। হাঁটু বা কোমরে ব্যথা থাকলে সতর্ক থাকুন।
  • বয়স্কদের জন্য হাই-ইন্টেনসিটি ব্যায়াম নয়, বরং লো-ইন্টেনসিটি ব্যায়াম উপকারী।

জানিয়ে রাখুন

অনেক জিমে ভর্তি হওয়ার আগে একটি ফর্ম পূরণ করতে হয়। তাতে জানাতে হয়, কোনও অসুখ রয়েছে কি না, থাকলে কী অসুখ। শ্বাসকষ্ট, হিস্টিরিয়া, অ্যানিমিয়া, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস ইত্যাদি কোনও সমস্যা থাকলে আগেভাগেই তা জানিয়ে রাখুন। হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ইত্যাদি আগে হয়ে থাকলে জানিয়ে রাখুন তা-ও। কোমর, পা, হাত... শরীরের কোথাও কোনও হাড় ভেঙে থাকলে তা সম্পর্কেও জানান। গুরুপ্রসাদ বলছেন, “মাঝেমধ্যেই অভিযোগ শোনা যায়, সেই ফর্ম কর্তৃপক্ষ খুঁটিয়ে দেখেন না। তাই এ বিষয়েও নজর রাখুন।”

সাবধান থাকতে

  • জিমে ভর্তি হওয়ার আগে একবার চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে কী ধরনের রোগ আছে বা কী ধরনের ব্যায়াম করলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে, তা নিয়ে একটা সম্যক ধারণা তৈরি হয়ে যায়। অনেক জিমেই ভর্তির আগে ফিট সার্টিফিকেট জরুরি হয়।
  • প্রথম থেকেই অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে যাবেন না। শরীর ঠিক যেটুকু নিতে পারে, সেটুকু পরিশ্রমই করুন। শ্বাসকষ্ট বা অন্য কোনও শারীরিক অস্বস্তি হলে সেই মুহূর্তে শারীরচর্চা বন্ধ করুন ও প্রশিক্ষককে জানান।
  • জয়েন্ট পেন থাকলে বুঝেশুনে ব্যায়াম করতে হবে। হাঁটু, কোমরের সমস্যা থাকলে ওয়েট ট্রেনিং এবং কার্ডিয়োর ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। প্রয়োজনে নি-ক্যাপ, ফিটনেস বেল্ট ব্যবহার করুন।
  • প্রয়োজনে পার্সোনাল ট্রেনাররাখুন।
  • অনেক জিম একটা গড়পরতা ডায়েট চার্ট ধরিয়ে দেয়। তার বদলে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।
  • অনেক সময় জিম থেকে সাপ্লিমেন্ট, ওজন কমানোর ওষুধের পরামর্শও দেওয়া হয়।

তবে বিশেষজ্ঞের মত না নিয়ে কোনওটাই করবেন না। দরকারে চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement