Durga Puja 2022

পশ্চিমী না সাবেকি? দেবী দর্শনে বেরিয়ে নিজেকে ‘দর্শনধারী’ করতে কোন পোশাক পরবেন পুরুষরা?

কেমন হবে পুরুষদের পুজোর সাজ? পশ্চিমী থেকে সাবেকি, দেবী দর্শনে বেরিয়ে নিজেকেও ‘দর্শনধারী’ করে তুলতে ছেলেরা পরতে পারেন কোন কোন পোশাক? খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৫:৫৯
Share:

দেবের নতুন সাজ। ছবি: দেবের ফেসবুক থেকে।

আশ্বিনের মাঝামাঝি পুজোর বাজনা বাজা শুরু হলে এ কালের ‘মধু বিধু’-দেরও মন আনচান করা অস্বাভাবিক নয়। তাই কেমন হবে পুরুষদের ‘পূজার সাজ’, তা নিয়ে পুজোর আগেই শুরু হয়ে যায় পরিকল্পনা। কী ধরনের জামা বেশি চলছে এ বছর? কিংবা কোন প্যান্ট পরলে আলাদা করে নজর কাড়া যাবে, সে সব নিয়ে অন্ত নেই গবেষণার। পশ্চিমী থেকে সাবেকি, দেবী দর্শনে বেরিয়ে নিজেকেও ‘দর্শনধারী’ করে তুলতে ছেলেরা পরতে পারেন কোন কোন পোশাক, খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

লম্বা উৎসব হওয়ার এই এক সুবিধা। এক এক দিন পরা যেতে পারে এক এক রকমের পোশাক। চার-পাঁচ দিন একই ধরনের পোশাক না পরে কোন দিন কী পরবেন তা ভাগ করে নিতে পারেন আগেই। অষ্টমী-নবমীতে যদি সাবেকি পোশাক পরতে চান, তবে ষষ্ঠী-সপ্তমীতে পুরুষরা নিজেকে সাজাতে পারেন পশ্চিমী পোশাকে। কোন ধরনের পশ্চিমী পোশাক এ বছর বেশি ‘ট্রেন্ডিং’ পুরুষদের মধ্যে? পোশাকশিল্পী অভিষেক দত্ত আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “এখন ছেলেদের অনেকেই বম্বার জ্যাকেট বেশ পছন্দ করছেন। ডেনিম, ট্রাউজার, টি-শার্ট— বিভিন্ন ধরনের পোশাকের সঙ্গে এই জ্যাকেট পরা যেতে পারে। এখন যেহেতু উজ্জ্বল রঙের পোশাক পরার চল কিছুটা বেড়েছে, তাই প্রিন্টেড জ্যাকেট পরলে সঙ্গে পরতে পারেন একরঙা ট্রাউজার ও টি-শার্ট।”

আঙ্গরখা, বম্বার জ্যাকেট ও পাঠানি স্যুট। ছবি: সংগৃহীত

শুধু বম্বার জ্যাকেট নয়, ভিতরে অন্য ধরনের কিছু পরলে বাইরে বুকখোলা ল্যাপল জ্যাকেটও পরতে পারেন, পরামর্শ শিল্পীর। ‘প্রিন্ট অন প্রিন্ট’ বলে যুগলবন্দি ইদানীং দেখা যাচ্ছে এই ধরনের পোশাকের মধ্যে। মানে যে প্রিন্টের জ্যাকেট, সেই প্রিন্টেরই প্যান্ট। তবে প্যান্টগুলির দৈর্ঘ্য হতে হবে একটু কম, যেন গোড়ালির আগেই শেষ হয়ে যায়। এই প্যান্টের সঙ্গে পরতে হবে মোকাসিন কিংবা লোফার্স জাতীয় জুতো। যদি পোশাক একরঙা হয়, তবে প্রিন্টেড জুতো পরতে পারেন।

Advertisement

দেবী দুর্গা থেকে লক্ষ্মী-গণেশ-সরস্বতী সকলেই সঙ্গে আনেন কোনও না কোনও বাহন। পুজোর বাজার কিন্তু বলছে, শুধু প্রতিমার বাহনেই নয়, পশুপাখি থাকছে পোশাকেও। “অনেকেই ট্রপিক্যাল প্রিন্ট কিংবা জঙ্গল প্রিন্টের জামা ও জ্যাকেট খুঁজছেন এ বছর। বিশেষ করে বাঘ ও চিতার ছবি দেওয়া পোশাকে আগ্রহ দেখাচ্ছেন অনেকেই।” বলছিলেন অভিষেক।

সাধারণ ‘জামা-প্যান্ট’ কিংবা ‘জিন্‌স-টি’ থেকে বেরিয়ে এসে অনেকেই ‘অন্য রকম’ হতে চাইছেন পুজোয়। ‘অন্য রকম’-এর সংজ্ঞা সবার কাছে এক নয়। তাই একটু সাহসী হতে পারলে আলাদা আলাদা ‘কম্বিনেশন’ পরে দেখতে পারেন নির্দ্বিধায়। অভিষেক বলেন, “দেব, সাহেব কিংবা অর্জুনের মতো তারকাও একটু আলাদা ধরনের পোশাক পরে চমকে দিয়েছেন এ বছর।”

দেব, অর্জুনের মতো তারকাও একটু আলাদা ধরনের পোশাক পরে চমকে দিয়েছেন এ বছর। ছবি: দেবের ফেসবুক ও অর্জুনের ইনস্টাগ্রাম থেকে।

শুধু পোশাকের ধরন নয়, পশ্চিমী সাজের ক্ষেত্রে বাড়ছে উজ্জ্বল রঙের পোশাক বেছে নেওয়ার চলও। কোন কোন রঙের পোশাক বেশি মনে ধরছে ছেলেদের? পোশাকশিল্পী বলেন, “ট্যাঞ্জেরিন কমলা, ট্যানারি হলুদ, লিফি গ্রিন বা প্যারট গ্রিনের মতো রং খুব চলছে বাজারে।” যাঁরা উজ্জ্বল রঙের জামা বা জ্যাকেট পরতে চান, তাঁদের জন্য অভিষেকের পরামর্শ, “এই ধরনের পোশাকের সঙ্গে কালো, নীল বা ধূসরের মতো নিউট্রাল রঙের প্যান্ট পরতে পারেন।” কে কী পোশাক পরবেন, তার অনেকটাই নির্ভর করে তাঁর চরিত্রের উপর। কেউ কেউ যেমন চান তাঁদের পোশাক যেন সবার আগে নজর কাড়ে। “তাঁরা একই রঙের জ্যাকেট ও প্যান্ট পরতে পারেন। এই ধরনের সাজের সঙ্গে পরতে পারেন একেবারেই অন্য রঙের জুতো। এমনও হতে পারে, হয়তো কেউ হালকা রঙের পোশাক পরলেন, কিন্তু জুতো পরলেন উজ্জ্বল লাল কিংবা হলুদ রঙের। এই ধরনের পোশাক সবার আগে চোখ টানে।” মত পোশাকশিল্পীর।

পশ্চিমী সাজের ক্ষেত্রে বাড়ছে উজ্জ্বল রঙের পোশাক বেছে নেওয়ার চলও। ছবি: সংগৃহীত

এ তো গেল পশ্চিমী সাজের কথা। কিন্তু সাবেকি সাজ ছাড়া কি আর পুজো সম্পূর্ণ হয়? তা ছাড়া বছরে তিন চারটি মাত্র অনুষ্ঠানে সাবেকি পোশাক পরা যায়। তাই পুজোর এই ক’টি দিন হাতছাড়া করা চলবে না একেবারেই। সাবেকি সাজের মধ্যে বছর খানেক আগেও হরদম নেহেরু জ্যাকেট পরতে দেখা যাচ্ছিল ছেলেদের। তবে এ বার কিছুটা হলেও বদল এসেছে সেই প্রবণতায়। শিল্পী জানান, এ বছর ধুতির সঙ্গে শর্ট কুর্তা পরছেন অনেকে। ধুতির মধ্যেও বেশ বৈচিত্র এসেছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের যাঁরা প্রথাগত ভাবে ধুতি পরতে জানেন না, তাঁদের অনেকেই ধোতি-প্যান্ট পরছেন। অভিষেক বলেন, “এই ধরনের ধোতি প্যান্টের সঙ্গে পরতে পারেন বান্ডি ও প্রিন্টেড কুর্তা। আগে যেমন মূলত সাদা কিংবা ঘিয়ে রঙের ধুতি পরতেন ছেলেরা, সেখানে এখন অনেকেই রঙিন ধুতি পরছেন। যাঁরা একেবারে নতুন ধরনের পোশাক খুঁজছেন তাঁদের জন্য রয়েছে ডেনিমের ধুতি। ধুতির মধ্যে থাকছে পকেটও।”

নেহেরু কোট, রঙিন ধুতি। ছবি: সংগৃহীত

পুরুষদের সাবেকি সাজের মধ্যে অনেকেই এ বার আঙ্গরখা পরছেন। দু’দিকের দৈর্ঘ্য দু’রকম, এমন কুর্তাও খুঁজছেন অনেকে। এই ধরনের পোশাকে হেমলাইন বরাবর দু’দিকের দৈর্ঘ্য আলাদা হয়। আলাদা হতে পারে দু’দিকের পরত ও এমব্রয়ডারির কাজও। এমন কুর্তার সঙ্গে ধোতি-প্যান্ট, আলিগড়ি পাজামা বা পাঠানি স্যুট পরার পরামর্শ দিলেন অভিষেক। সাবেকি পোশাকের ক্ষেত্রেও চল বেড়েছে উজ্জ্বল রঙের। পোশাকশিল্পী বলেন, “সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে নীলের বিভিন্ন রকমফের। মিডনাইট ব্লু, কোবাল্ট ব্লু। লাল বা মেরুন কুর্তা ও বান্ডিও কিনছেন অনেকে।” যাঁরা একটু ধ্রুপদী রং পছন্দ করেন, তাঁরা ঘিয়ে রঙের পোশাকও পরতে পারেন, পরামর্শ তাঁর।

পুজোর ফ্যাশনে অসুর হতে পারে আবহাওয়া। ভ্যাপসা গরম আর আর্দ্রতায় পোশাক কতটা ঠিকঠাক থাকবে তা নিয়েও রয়েছে চিন্তা। আর্দ্রতা আর গরম যে ভাবে বাড়ছে, তাতে আঁটসাঁট গলার পোশাক এড়িয়ে চলেছেন পুরুষদের একাংশ। যাঁরা শরীরকে কষ্ট দিতে চান না তাঁদের জন্য শিল্পীর পরামর্শ, “হাওয়া চলাচল করতে পারে এমন পোশাক পরাই ভাল। একটির উপর আরও একটি পোশাক যদি চাপাতেই হয়, তবে তা করা উচিত সন্ধ্যার পর। দিনেরবেলায় নীল বা কালচে গাঢ় রং এড়িয়ে চলা উচিত। পরতে পারেন গভীর গলা কুর্তা।” তবে শিল্পী মনে করিয়ে দিচ্ছেন, পুজোর ক’টা দিন অনেকেই আরামকে কিছুটা হলেও উপেক্ষা করতে রাজি। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যে হেতু পুজোর পোশাক পরে ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে ছবি দেওয়ার চল এসেছে তাই পুজোর ক’টা দিন তাঁরা সাজের সঙ্গে কোনও আপস করতে রাজি নন, মত তাঁর। অভিষেক জানান, বয়সের দিক থেকে দেখলে মোটামুটি ৩৫ বা তার কমবয়সি তরুণদের মধ্যে পর্যন্ত এই প্রবণতা কিছুটা বেশি। তবে বয়স যা-ই হোক, পুজোর ক’দিন নিজেকে পছন্দসই সাজে সাজাতে ১৬ থেকে ৬০— পিছিয়ে নেই কেউই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement