ঝিনুক ও পুঁতির কাজ করা বাহারি স্যান্ডেল। দাম ৪৫০ টাকা। নিজস্ব ছবি
গায়ের সঙ্গে বাহার থাকুক পায়েও, নই কেউ ছাড়বার পাত্র। সাজে যেন কমতি না থাকে ‘ধরণীমাঝে চরণ-ফেলা মাত্র’। পুজোর সাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ ‘পদপল্লবের’ ভূষণ জুতো। সাবেকি হোক বা পশ্চিমী, যে কোনও সাজের সঙ্গেই পুজোর দিনগুলিতে মানানসই জুতো না পেলে বিগড়ে যেতে পারে গোটা সাজ। পুজোর দিনে ফ্যাশনপ্রেমীদের ‘মলিন ধূলা’ লাগে না যেন ‘পায়ে’, তা নিশ্চিত করতে আনন্দবাজার অনলাইন ‘জুতা অবিষ্কার’ করতে নামল কলকাতা শহরের বিভিন্ন জনপ্রিয় বাজারে।
সপ্তমীতে শুরু
কোন বছর কোন ধরনের জুতো বেশি চলছে বাজারে, তার আভাস পাওয়ার সহজতম উপায় বলি-টলির তারকাদের দিকে নজর রাখা। পাম্প শু থেকে স্নিকার্স, ফ্ল্যাট বেলি থেকে স্টিলেটো, তারকাদের ফ্যাশন দেখে অনুপ্রাণিত হন অনেকেই। তারকা সাংসদ মিমি চক্রবর্তীকে যেমন কিছু দিন আগেই ইনস্টাগ্রামে দেখা গিয়েছিল পশ্চিমী সাজের সঙ্গে রঙিন স্টিলেটো পরতে। ভাবলেন সপ্তমীর বিকেলে কোথাও যাবেন না, পাড়ার প্যান্ডেলেই আড্ডা দেবেন, তা হলে আদর্শ হতে পারে এই জুতো। বেশি ঘোরাঘুরি করতে হলে অবশ্য সাবধান, বেশি হাঁটলে স্টিলেটো বেশ বেকায়দায় ফেলতে পারে। বড়-ছোট যে কোনও দোকানেই এই জুতো পাওয়া যাচ্ছে। নিউ মার্কেটে পথের পাশের দোকানগুলিতে তিন-চারশো টাকা থেকেই শুরু এ ধরনের জুতো। হগ মার্কেটের কাছে জুতোর পসরা নিয়ে বসা এমডি ইলিয়াস বলেন, “উজ্জ্বল রঙের স্টিলেটো বিকোচ্ছে সবচেয়ে বেশি। তবে অধিকাংশ মহিলাই পাঁচ-সাতশো টাকার বেশি খরচ করতে চাইছেন না।” এসপ্ল্যানেডের বড় দোকানগুলি থেকেও কিনতে পারেন একই জুতো, দাম পড়বে ১,৭০০ থেকে ২,০০০ টাকার মতো।
আঁটসাঁট অষ্টমী
অষ্টমীতে তিনটি জিনিস খুব ‘কমন’। তুমুল ভিড়, সাবেকি পোশাক আর প্রিয়জনের হাত ধরে এ মাথা থেকে ও মাথা পুজো পরিক্রমা। দীর্ঘ ক্ষণ হেঁটে হেঁটে ঠাকুর দেখতে হলে সবচেয়ে উপযোগী স্নিকার্স। কিন্তু সাবেকি পোশাকের সঙ্গে কি স্নিকার্স পরা যায়? যায়। কিছু দিন আগেই কুর্তা-পাজামার সঙ্গে দিব্য স্নিকার্স পরতে দেখা গিয়েছিল সাংসদ অভিনেতা দেবকে। ছেলে-মেয়ে সকলেই পরতে পারেন, দোকানেও কমতি নেই। তা ছাড়া যে কোনও দামেই মেলে এই ধরনের জুতো। বরদান মার্কেটে বেশ অল্প দামে প্রচুর পলিইউরিথিনের তৈরি স্নিকার্স পাওয়া যায়। ৪০০ টাকা থেকে শুরু দাম। যাঁরা নিউ মার্কেট চত্বরে যাচ্ছেন, তাঁরা শ্রীলেদার্সে ৭০০ টাকার থেকেই এই ধরনের জুতো পেয়ে যেতে পারেন। তবে শুধু পুজো নয়, বহু মানুষই সারা বছর এই ধরনের জুতো কেনেন। জুতো ভেদে দামের তারতম্য দেখেও চোখ কপালে উঠতে পারে। বিশেষ করে খেলাধুলোর ব্র্যান্ডের স্নিকার্সগুলির দাম কখনও কখনও আকাশছোঁয়া হয়। মেট্রোর নিউ মার্কেটের শাখার সহকারী ম্যানেজার ইরশাদ বলেন, “জুতো কী দিয়ে তৈরি, তার উপরই মূলত নির্ভর করে দাম। তবে এই ধরনের জুতোর ক্ষেত্রে লিমিটেড এডিশন বা সীমিত সংস্করণের স্নিকার্স খুব চড়া দামে বিক্রি হতে পারে।”
মহিলারা পরতে পারেন ফ্ল্যাটবেলি পা ঢাকা রঙিন পাম্প শু। দাম ৬৫০ টাকার মতো। নিজস্ব ছবি
নজরকাড়া নবমী
শুধু বঙ্গ ফিল্ম দুনিয়াই নয়, সাজের ভাবনা মিলতে পারে বলিপাড়া থেকেও। তারকা দম্পতি দীপিকা-রণবীরও হতে পারেন পুজোর সাজের অনুপ্রেরণা। নবমীতে কুর্তার সঙ্গে ভালই মানাবে ফ্ল্যাট স্যান্ডেল। ইন্দো-ওয়েস্টার্ন কুর্তি কিংবা সালোয়ার কামিজের সঙ্গে মেয়েরা পরতে পারেন ফ্ল্যাট স্যান্ডেল কিংবা পা ঢাকা ফ্ল্যাট বেলি জুতো। মেট্রো প্লাজায় দেখা গেল, ঝিনুক ও পুঁতির কাজ করা বাহারি স্যান্ডেল। দাম ৪৫০ টাকা। যদি একটু রঙিন জুতো পছন্দ করেন, তবে পরে দেখতে পারেন মিউল জুতো। দাম হাজার টাকার মতো।
দশমীর দিন শেষে
দশমীতে মায়ের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গেই মিশে থাকে কিছুটা মনখারাপ। কিন্তু মনখারাপের মধ্যেও যেতে হবে ভাসানে। ছেলেরা সে দিন পরতে পারেন জিনস-লোফার্স। ৬০০ টাকার মধ্যেই বিভিন্ন ধরনের লোফার্স পাওয়া যায় বিকে মার্কেটে। কিন্তু একটু আরামদায়ক জুতো চাইলে ছেলেদের শু-এর দাম পড়বে বেশি। অন্তত হাজার খানেক টাকা। মহিলারা পরতে পারেন ফ্ল্যাটবেলি পা ঢাকা রঙিন পাম্প শু। দাম ৬৫০ টাকার মতো।