জয়শ্রী বর্মণের হাতে আঁকা লেহঙ্গায় অম্বানী বাড়ির নববধূ রাধিকা মার্চেন্ট। ছবি: সংগৃহীত।
অম্বানী-বধূ রাধিকা মার্চেন্টের বিয়ের এক এক দফা সাজ নিয়ে রোজই চলছে হইচই। তার মধ্যে বিশেষ একটি লেহঙ্গা নজর কেড়েছে গোটা বিশ্বের। সে লেহঙ্গায় আঁকা রয়েছে রাধিকা আর অনন্ত অম্বানীর প্রেমের কাহিনি। গোটাটা হাতে আঁকা। তা পরেই বিয়ের পরদিন দেশ-বিদেশের খ্যাতনামীদের আশীর্বাদ নিতে বসেছিলেন অম্বানী বাড়ির নতুন বৌমা। সঙ্গে সঙ্গে লেহঙ্গার ছবি ছড়িয়ে পড়ে দিকে দিকে। জৌলুসের বিয়েতে এমন শৈল্পিক ছোঁয়া প্রশংসিতও হয় যথেষ্ট। তার সঙ্গেই উঠে আসে শিল্পীর নাম, যিনি গোটা লেহঙ্গার উপরে ছবি এঁকেছেন একা হাতে। সেই শিল্পী বাঙালি। কলকাতার জন্ম ও বড় হওয়া। নাম জয়শ্রী বর্মণ। আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে যোগাযোগ করা হলে, অম্বানীদের নতুন বৌমার জন্য লেহঙ্গা বানানোর গল্প বলেন সুদূর লন্ডনে বসে।
মাত্র এক মাস সময় ছিল লেহঙ্গাটি বানানোর জন্য। ফলে দিনে ১২-১৪ ঘণ্টা কাজ করতে হয়েছে জয়শ্রীকে। শিল্পী বলেন, ‘‘এক এক দিন তো ১৬ ঘণ্টাও কাজ করেছি। যতখানি কাজ, সে তুলনায় হাতে কম সময়ই ছিল।’’
লেহঙ্গাটা কি আগেই বানানো ছিল? তার উপরে কাজ হল?
একেবারে ক্যানভাসে আঁকা হয়েছে রাধিকার লেহঙ্গা। জয়শ্রী বলেন, ‘‘ইটালিয়ান ক্যানভাসে এঁকেছি। মোট ১২টা প্লেট তৈরি করেছি হাতে এঁকে এঁকে। তার পরে সেলাই করা হয়েছে।’’ এ ছাড়াও তিনি লেহঙ্গার সঙ্গে পরার ওড়নার পাড় এঁকেছেন। এঁকেছেন বেল্টেও। সব মিলে গোটা একটি মাস, দিনরাত এক করে কাজ করেছেন।
জয়শ্রী বর্মণ। নিজস্ব চিত্র।
তবে তাঁর শিল্পের যোগ্য সম্মানও পেয়েছেন বলেই মনে করেন জয়শ্রী। তিনি বলেন, ‘‘পারিশ্রমিক তো সকলেই দেন, কিন্তু সম্মান সবাই দিতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে যোগ্য সম্মান পেয়েছে আমার কাজ।’’ লেহঙ্গা শেষ হওয়ার পরে তো হাতে লেখা চিঠি পেয়েছেনই শিল্পী, তবে তার চেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন, রাধিকা যে অনুষ্ঠানের জন্য তাঁর শিল্প বেছে নিয়েছেন, তা দেখে। জয়শ্রী বলেন, ‘‘প্রথমে এই লেহঙ্গাটা বিয়েতে পরার কথা হয়েছিল। কিন্তু পরে ঠিক হয়, পরের দিন যখন সকলে আশীর্বাদ করবেন, তখন রাধিকা পরবেন এই লেহঙ্গা।’’ যে অনুষ্ঠানে রাধিকা জয়শ্রীর তৈরি লেহঙ্গা পরেন, সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টরা ছিলেন। শিল্পী মনে করেন, উপযুক্ত দিনে পরা হয়েছে তাঁর তৈরি পোশাক। শুধু তা-ই নয়, যে ভাবে এই লেহঙ্গার কাজ শুরু হয়, তা-ও মন ছুঁয়েছে জয়শ্রীর।
বিয়ের মাসখানেক আগে রাধিকার স্টাইলিস্ট রিয়া কপূর প্রথমে যোগাযোগ করেন জয়শ্রীর সঙ্গে। তার পরে ঠিক হয় একটি ভিডিয়ো বৈঠকের দিন। জয়শ্রী ছবি আঁকার পরে লেহঙ্গা তৈরির বাকি কাজ করেছেন পোশাকশিল্পী আবু জানি ও সন্দীপ খোসলা। রিয়া, আবু-সন্দীপ ছাড়াও সে দিনের ভিডিয়ো বৈঠকে যোগ দেন রাধিকা। ‘‘আমাকে জয়শ্রী আন্টি বলে ডাকেন রাধিকা। নিজেই বলেন, আপনার কাজ আমাদের জামনগরের বাড়িতে আছে। দেখেছি।’’ অর্থাৎ, রাধিকা প্রথম থেকেই উৎসাহ প্রকাশ করেন বলে বুঝতে পারেন জয়শ্রী। তাতে কাজটির প্রতি টানও বাড়ে।
কিন্তু, এই লেহঙ্গা নাকি রাধিকা আর অনন্তের প্রেমের গল্প বলে? সে সব কী করে জানলেন শিল্পী?
রাধিকা কী চাইছেন, তা নিয়ে বৈঠকেই বিশদ আলোচনা হয়। ‘‘তবে শুধু তা নয়, আমি অম্বানীদের সঙ্গে অনেক দিন ধরেই কিছুটা পরিচিত। কোকিলাবেন ও নীতা আগে আমার কাজ কিনেছেন। যা রাধিকা দেখেছেন জামনগরের বাড়িতে। ফলে ভিতরের গল্পও কিছুটা জানা ছিল। তাই কাজ করতে খানিকটা সুবিধা হয়েছে,’’ বললেন জয়শ্রী।
এক বার নাকি নীতাকে উপহার দেওয়ার জন্য তিন ছেলেমেয়ে মিলে জয়শ্রীকে ফোন করে একটি ছবি আঁকতে বলেছিলেন। জয়শ্রী বলেন, ‘‘তখন ওঁরা সকলেই অনেক ছোট। অনন্ত একেবারেই শিশু সে সময়ে।’’ ওই সময় থেকেই অম্বানী-বাড়ির পুত্রের বন্যপ্রাণীদের প্রতি টানের কথা জানা জয়শ্রীর। ফলে তাঁর হবু স্ত্রীর জন্য লেহঙ্গা বানাতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি শিল্পীর। জয়শ্রী জানান, এই লেহঙ্গার নাম দিয়েছেন ‘পরিণয়’। মানে, ‘বিবাহ’। আঁকাও হয়েছে শুভ পরিণয়ের গল্প।
জয়শ্রী এমনিতেই পৌরাণিক চরিত্র-কাহিনি নিজের ছবিতে ফুটিয়ে তোলায় বিশ্বাসী। শান্তিনিকেতনের কলাভবন থেকে লেখাপড়া শেষ করে দিল্লিতেই বসবাস তাঁর। দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তে হয়েছে তাঁর কাজের প্রদর্শনী। পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কারও। রাধিকাও সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তাই শুধু যে লেহঙ্গার জন্য ভরসা করেছেন, এমন নয়। নিজেই বলেছিলেন, শিল্পী যে ভাবে বলবেন, সে ভাবেই সাজবেন তিনি। জয়শ্রী বলেন, ‘‘আমিই ওকে বলেছিলাম, মাথায় পদ্মফুল ব্যবহার করতে। সে কথাও রেখেছেন। খুব সুন্দর ভাবে পদ্মফুল দিয়ে সেজেছিলেন রাধিকা, যে দিন ওই লেহঙ্গা পরেন।’’ জয়শ্রীর তো তা ভাল লেগেছে বটেই, তবে সেই সাজ নজর কেড়েছে গোটা বিশ্বের। জয়শ্রীর হাতের মিনিয়েচার চিত্র আঁকা লেহঙ্গায় রাধিকার ছবি নিয়ে এখনও চর্চা চলছে দিকে দিকে।