গ্রীষ্ম থেকে বর্ষা কিংবা শরৎ, তারপর হেমন্ত পেরিয়ে শহরে শীতের প্রবেশ। ঋতু যাই হোক না কেন, আম আদমির রোগ-ভোগ তো লেগেই আছে। আর সেই রোগের সিংহভাগ দখল করে আছে ভাইরাল ফিভার। বিগত দুই বছর ধরে সেই জ্বরই এক অজানা আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে ঘরে ঘরে। বলা ভাল গ্রাস করছে ডেঙ্গি আতঙ্ক। সঙ্গে চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়ার মতো রোগ তো রয়েছেই। যার বেশিরভাগটাই মশাবাহিত।
ডেঙ্গি সম্পর্কে বেশ দু’টি ভুল ধারণা এখনও পর্যন্ত বর্তমান রয়েছে।এতদিন ভাবা হতো দেশে বর্ষা পা রাখলেই ডেঙ্গির আক্রমণ প্রকট হয়ে ওঠে। কিন্তু গত কয়েক বছরে সেই ধারণা একেবারে বদলে গিয়েছে। শুধুমাত্র বর্ষা নয়, শীত, গ্রীষ্ম কিংবা শরৎকালেও ডেঙ্গির প্রকোপ বেড়েছে। তবে বর্ষার পর থেকে শীত আসার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে।
অনেকেরই আবার ধারণা, ডেঙ্গির মশা নাকি শুধুমাত্র দিনের বেলাতেই কামড়ায়। কিন্তু চিকিৎসকেরা সে কথা মানতে নারাজ। ২০১৮-এর এক রিপোর্টে বলা হচ্ছে, ডেঙ্গির মূল কারণ যে মশা - ইডিস ইজিপ্টাই, এদের ৮৪ শতাংশই কামড়ায় দিনের আলোয়। ১৬ শতাংশ কামড়ায় রাতের বেলা। রাত মানে একদম অন্ধকার — সন্ধে ৬টা থেকে রাত ১০টা কিংবা ভোর ৪টে থেকে সকাল ৬টা — আলো ফোটার আগে। আবার সকাল ৬টার পর এদের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। দিনের বেলায় কামড়ানোর সময় মূলত সকাল ৭টা থেকে ১০টা। আবার বিকেল ৩টে থেকে সন্ধে ৬টা। এডিস অ্যালবোপিকটাস ১০ শতাংশ ক্ষেত্রেই রাতে কামড়ায়। আবার রাতের বেলা যদি দিনের মতো আলো জ্বলে, তা হলে এডিস ইজিপ্টাইয়ের আচরণ কিন্তু দিনের মতোই হয়।
এডিস মশা এতটাই ভয়ঙ্কর যে এরা যে কোনও আবহাওয়ায় বেঁচে থাকতে পারে। পাশাপাশি এই প্রজাতির মশা খুব দ্রুত একটি মশা থেকে আরেকটি মশার মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়।
তবে এবার প্রশ্ন হচ্ছে বাঁচার পথ কী? ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বেশ কিছু নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। যেমন জমা জল পরিষ্কার, রাতে মশারির ব্যবহার, ঘরের পাশের জঙ্গল-আগাছা সাফাই ইত্যাদি। কিন্তু এর পরেও দায়িত্ব বর্তায় আমাদের উপরেই। বাড়িতে মশার উপদ্রব কমাতে ব্যবহার করা যেতে পারে কালো হিট-এর মতো মশা মারার স্প্রে। সেই সঙ্গে জ্বর হলেই আগে ভাগে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া। আরও একটু বেশি সাবধান থাকা। তবেই কমতে পারে ডেঙ্গির প্রকোপ। হয়তো সমূলে বিনাশ করা যাবে না এডিস মশাকে, কিন্তু আরও একটু বেশি সচেতন হলে বেঁচে যেতে পারে অনেকগুলি প্রাণ।