মুখলেস উদ্দিন।
চা বানাতে তিনি সিদ্ধহস্ত। তবে সাধারণ চা পাতা দিয়ে নয়, নানা ধরনের ভেষজ চা বানাতে পারদর্শী মুখলেস উদ্দিন। বাড়ি বাংলাদেশের নেত্রকোনা শহরের মুক্তারপাড়ায়। তাঁর দোকানে গেলেই মিলবে পুদিনাপাতা, হরিতকি, তেঁতুল, বহেরা, থানকুনিপাতা, এমনকি, বাসকপাতা-সহ ২১০ রকমের ভেষজ চায়ের হদিশ। শুধু তা-ই নয়, চিরতা চা-ও পাওয়া যায় মুখলেসের চায়ের দোকানে।
বাংলাদেশের এক জাতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বছর ছয়েক আগেও মুখলেস ফুটপাতে বসে ৫৯ পদের চা বিক্রি করতেন। এখন তিনি দোকান বানিয়েছেন। মুক্তারপাড়ায় তাঁর দোকানের নাম ‘কবি মামার চা’। এক সময়ে লেখালেখি করতেন মুখলেস, তাই গ্রাহকেরাই ভালবেসে তাঁর দোকানের এই নাম দিয়েছেন। দিনে কয়েক শো মানুষ এসে চা খান তাঁর দোকানে।
নিজের দোকানে কোনও কর্মচারী রাখতে নারাজ মুখলেস। শত শত মশলা ও ঔষধিগাছের মিশ্রণে চা বানান তিনি। কোন চায়ে কতটা পরিমাণ মশলা দিতে হবে সেটা কিন্তু ভীষণ জরুরি। একটু হেরফের হলেই সুস্বাদু পানীয়টি বিষে পরিণত হতে পারে। সেই ভয়ে একা হাতেই দোকানের সব কাজ সামলান ৬১ বছর বয়সি মুখলেস।
গত ছয় বছরে জীবনের ভোল বদলে গিয়েছে মুখলেসের। শুধু দোকান কিনেছেন এমনটা নয়, টিনের ঘর ছেড়ে এখন তিনি থাকেন দু’ তলা বাড়িতে।
কেবল চা নয়, ইদানীং নানা রকমের কফি, লস্সি, শরবতও বানান মুখলেস। তাঁর দোকানের ‘মামা স্পেশাল টি’ বেশ জনপ্রিয়। এটা তাঁর দোকানের বিশেষ রেসিপি, যা রোজ বদলায়। প্রতি দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সেই দিনের আবহাওয়ার উপর ভিত্তি করে সে দিনের চায়ের রেসিপি বানান তিনি। সারা দিন সেই চা-ই হয় মামা স্পেশাল। বিশেষ এই চায়ের দাম রাখেন মাত্র ১০ টাকা।
বিভিন্ন ধরনের ঔষধিগাছ নিয়ে রীতিমতো পড়াশোনা করেন তিনি। নিজে খুব বেশি পড়াশোনা না করলেও দেশ-বিদেশের নানা লতা-পাতা-গাছ নিয়ে পড়ার আগ্রহ আছে তাঁর। সেখান থেকে পাওয়া জ্ঞানই চা বানানোর কাজে লাগান। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যে চা তিনি বানান সেটা নিজে আগে পরখ করেন মুখলেস, তার পর গ্রাহককে দেন।
তেঁতুল আর লঙ্কার চা সবচেয়ে বেশি চলে মুখলেসের দোকানে। ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা দামের চা–ও বিক্রি করেন মুখলেস। ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে ৫০০ টাকা দামের এই বিশেষ চা খাওয়া যায় না। যাঁদের বয়স ৪৫ বছরের বেশি, তাঁরাই মাসে এক বার এই চা খেতে পারেন।
সব চায়ের রেসিপি লিখে রাখছেন মুখলেস। কোন চা খেলে কী সুফল মিলবে লিখে রাখছেন সেই কথাও। ছেলের হাতে দিয়ে যাবেন সব লেখা। তাঁর মৃত্যুর পরেও মানুষ সেই সব রেসিপির হদিশ পেতে পারেন, সেই জন্যেই তাঁর এই উদ্যোগ। ২১০ রকমেই থামতে চান না মুখলেস। সামনে আরও নতুন নতুন ধরনের চা দিয়ে জয় করতে চান মানুষের মন।