ভূতে ভয় পাই, লোককে কী করে বলব? ফাইল চিত্র।
হিমের রাত। একটু একটু কুয়াশা। রাতের দিকে শিরশিরানি। শীত শীত গন্ধ। এমনই একটা সময় ভূত চতুর্দশী আসে। সদ্য গিয়েছে সেই দিন।
‘ভূত’ শব্দটার মধ্যেই পরস্পরবিরোধী অর্থ রয়ে গিয়েছে। ভূত বিশেষণ অর্থে যা অতীত, অর্থাৎ ছিল। আবার ভূত মানে পঞ্চভূত, অর্থাৎ ততটাই বর্তমান। বিশেষ্য অর্থে ভূত আবার এক অবমানব অস্তিত্ব। যার একটা অতীত থাকলেও থাকতে পারে। দেশ, বিদেশ, সমাজ, সাহিত্য, চলচ্চিত্র— সব ক্ষেত্রেই আমরা ভূতের প্রসঙ্গ পাই। যার সঙ্গে কোথাও প্রত্যক্ষ ভাবে রূপকার্থে যোগ রয়েছে মৃত্যুর।
ভূত দেখেছেন কখনও? অনেকেই বলবেন না! ভূতে বিশ্বাস করেন? অনেকেই বলবেন একেবারেই না! কিন্তু ভূতে ভয় পাই কি? এই প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই কিন্তু চট করে না বলতে পারবেন না। বলতে হয়েতো আমাদের অস্বস্তি হয়, অনেকে কিন্তু সংকোচ বোধ করেন কিন্তু ভূত দিয়ে ভয় অনেককেই কাবু করে।
ভূতের ভয় বিষয়টা কি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সমস্যা তৈরি করতে পারে? ধরা যাক, কোথাও আমাদের একা যেতে হবে। আমাদের কি মনে হয়, যদি সেখানে কোনও অঘটন ঘটে? অনেক সময় ভূতের কোনও গল্প পড়লে বা ভূতের ছবি দেখার পরমূহুর্তে নিজের ঘরেই একা থাকতে গা ছমছম করে আমাদের। যুক্তিতে না মিললেও, ভয়টা কাটে না কিছুতেই। এই সব নিয়েই সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এই সপ্তাহের বিষয় ছিল ‘ভূতে ভয় পাই!’
প্রতি পর্বের আগেই অনুত্তমার কাছে পাঠানো যায় প্রশ্ন। এই পর্বেও ই-মেলে তেমনই কিছু প্রশ্ন পেয়েছিলেন মনোবিদ। কানাডানিবাসী অভিষেক শ্যামরায় লিখেছেন, ‘‘ছোটবেলায় মা, দিদির মুখে শোনা ভূতের গল্প আজও ভুলতে পারি না। ভয় করে। লাইট জ্বললেও রাতে বাথরুমে যেতে ভয় পাই। বউকে ডেকে তুলতে হয়। বন্ধুদের কাছে এই ভয়ের জন্য বারংবার হাসির পাত্র হয়েছি। সারা ক্ষণ মনে হয় দূর থেকে আমার উপর কেউ নজর রাখছে। সব সময় লোকজনের মধ্যে থাকি, পাছে সেই অজানা কেউ সামনে যদি চলে আসে সেই ভয়।’’
দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র সূ্র্য লিখেছেন, ‘‘পড়াশোনার চাপ বেড়েছে, তাই ইদানীং রাত জেগে পড়তে হয়। যেই ঘরে বসে পড়ি সেখানে কিছু ক্ষণ পরেই আমার মন আর পড়ায় বসে না। ভীষণ ভয় করতে থাকে। তখন নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠতেও ভয় লাগে। কেন এমনটা হয় বুঝতে পারি না!’’
এই সব প্রশ্নের উত্তরে মনোবিদ বললেন, ‘‘এই সব ক্ষেত্রেই আমাদের যুক্তি অন্য কথা বলে। কিন্তু আমাদের আবেগ সেই শঙ্কামুক্ত মন আমাদের ফেরত দিচ্ছে না। ভূতের ভয় কিন্তু আমাদের দৈনন্দিন যাপনকে ভীষণ ভাবে ব্যহত করতে পারে। আমাদের ঘুম চলে যায়, একাকিত্ব আমরা ঠিক উপভোগ করতে পারি না, পড়াশোনায় মন বসতে চায় না। প্রতিনিয়ত অস্বস্তির সঙ্গে যাপনের একটা অসহায়তা আছে, বিপন্নতা আছে। কী দেখব জানি না, এই না-জানার মধ্যে যেন আমার নিয়ন্ত্রণে কিছুই আর নেই এই বোধ সর্ব ক্ষণ তাড়া করে বেড়ায় আমাদের। ভূত আছে কি নেই, সেই বিষয়টা বিতর্ক সাপেক্ষ। আমাদের কাছে অনেক শোনা কথা রয়েছে, অনেক দেখা দৃশ্যের বিবরণ রয়েছে। কোনও ঘটনা ঘটলেই আমাদের মন তার পিছনের ব্যাখ্যা খুঁজে বার করার চেষ্টা করে। আর যার উত্তর আমরা পাই না। সে ঘটনাই আমাদের মনে অস্বস্তি তৈরি করে। মনের মধ্যে কোনও ভয় থাকলে বা কোনও অস্বাভাবিক অভি়জ্ঞতা স্মৃতিতে থাকলে, আমরা সেগুলি দিয়েই সেই উত্তর খুঁজে বার করার চেষ্ট করি। যুক্তি দিয়ে বিচার করলেও মনকে বোঝানো কঠিন হয়ে যায়। অস্বস্তির সঙ্গে সহাবস্থান কিন্তু ভীষণ বেদনাদায়ক। অমন অনেকেই আছেন যাঁরা ভূতে ভয় পান, অথচ ভূতের ছবি দেখেন, ভূতের গল্প বেশি করে পড়েন। কেন পড়েন, কেন দেখেন বলুন তো? আসলে আমরা ওই ব্যাপারে আদতে অনেক বেশি কৌতূহলী। এই কৌতূহল ভুল নয়। কিন্তু এমন কৌতূহল মনে এলে বুঝতে হবে এ ক্ষেত্রে কিন্তু আকর্ষণ এবং বিকর্ষণ দুই-ই সম্ভব।’’