Skin Diseases

ছুলি কিন্তু ছোঁয়াচে

বাচ্চা থেকে বড় সকলেরই হতে পারে এই রোগ। উপসর্গ দেখা দেওয়া মাত্র চিকিৎসা শুরু করুন। তা হলে রোগ সারবে তাড়াতাড়ি।

Advertisement

 ঈপ্সিতা বসু

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২২ ০৯:১২
Share:

এটি এক ধরনের ফাঙ্গাসজনিত চর্মরোগ।

ছুলি বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে গায়ের লালচে, বাদামি, সাদা দাগ। এটি এক ধরনের ফাঙ্গাসজনিত চর্মরোগ, যা নানা কারণে হতে পারে। অনেকের কিছু দিনেই ঠিক হয়ে যায়, আবার কারও ক্ষেত্রে রোগটি দীর্ঘস্থায়ী হয়। গরম ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় ছত্রাকজনিত চর্মরোগ বেশি হতে দেখা যায়। ঘাম ও ভেজা শরীর ছত্রাক জন্মানোর জন্য উপযোগী। যাঁরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে সচেতন, তাঁদের ছুলি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

Advertisement

কী কী কারণে এই রোগটি হতে পারে?

উত্তপ্ত, আর্দ্র আবহাওয়া, তৈলাক্ত ত্বক, হরমোনের পরিবর্তনকেই ছুলির কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়। এ ছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে, ডায়াবিটিস বা ক্যানসার জাতীয় কঠিন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরও রোগটি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া রোগটি কারও মধ্যে দেখা দিলে সেই ব্যক্তির সংস্পর্শে এলেও সংক্রমণ হতে পারে। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সন্দীপন ধর বলছেন,‘‘ছুলি কিন্তু ছোঁয়াচে। একজনের ব্যবহার করা জিনিস থেকে আর-একজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়ার মারাত্মক সম্ভাবনা রয়েছে। বাচ্চার মুখে, গালে ছুলি হলে তার গাল-মুখ ধরে আদর করলে সেখান থেকেও ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ট্রিটমেন্ট শুরু হওয়ার সাত দিনের মধ্যেই চর্মরোগটি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তখন আর তা সংক্রামক হয় না। একবার হলে ছুলি প্রতিবছর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, ঠিক যেমনটি অন্যান্য ছত্রাক জাতীয় অসুখে দেখা দেয়।’’

Advertisement

ছুলির ধরন কিন্তু বাচ্চা ও বড়দের ক্ষেত্রে আলাদা-আলাদা হয়। শিশু বা কমবয়সিদের মুখের চারপাশে রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। আর বয়স্কদের ক্ষেত্রে পিঠে, বুকে, ঘাড়ে এবং হাতের চারপাশে দেখা দেয়। অনেক সময়েই এগুলো চুলকায়, ব্যক্তিবিশেষে তার প্রবণতা বেড়ে যায় ও খসখসে হয়ে দাগটি ধীরে ধীরে আশপাশের অংশেও ছড়িয়ে পড়ে। সঙ্গে ত্বকের রঙের বদল ঘটতে পারে। এই দাগের ধরন রোগীর স্বাভাবিক ত্বকের রঙের চেয়ে হালকা বা ডার্ক কালারের হয়। সে সঙ্গে ত্বকের রোমগুলিও একই বর্ণ ধারণ করে।

সাধারণত আক্রান্ত অংশটি দেখেই রোগটি নির্ণয় করা যায়। তবে প্রয়োজনে ত্বকের ফাঙ্গাস পরীক্ষার মাধ্যমে ছুলি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় আরও সহজেই। ছুলিকে অবহেলা করবেন না। চিকিৎসার জন্য চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। আবহাওয়ার বদল, স্যাঁতসেঁতে জায়গায় থাকার জন্য কিংবা ত্বকের অতিরিক্ত তেলতেলে ভাবের জন্য এটি দেখা দিলে সামান্য চিকিৎসাতেই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন রোগী। চিকিৎসার জন্য সেলেনিয়াম সালফাইড সাবান, শ্যাম্পু বা ক্রিম ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। আক্রান্ত অংশে সেলেনিয়াম সালফাইড সপ্তাহে একবার করে তিন থেকে চার সপ্তাহ ধরে লাগালেই ছুলির উপশম সম্ভব। তবে সমস্যাটি আরও জটিল হলে পাঁচ থেকে সাতদিন ছত্রাকনাশক ওষুধ খেতে হবে। তবে এর পরও চর্মরোগটি দীর্ঘস্থায়ী হলে সত্বর চিকিৎসককে জানাতে হবে।

ডা. ধরের মতে, ‘‘ছুলি থেকে মুক্তি মিললেও, তিন থেকে ছ’মাস দাগগুলো রয়ে যেতে পারে। তাই দাগ দূর না হলে বিভ্রান্ত হবেন না। আর ওই দাগকে শ্বেতী বলে ভুল করবেন না বা ভয় পাবেন না। জেনে রাখুন, ছুলির সঙ্গে শ্বেতীর কোনও সম্পর্ক নেই।’’

সমস্যা থেকে দূরে থাকার উপায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন নিজেকে। সাধারণত সকলেরই নিজের যত্ন নেওয়া উচিত যাতে শুধু ছুলিই নয়, অন্যান্য ছত্রাকজনিত রোগও যেন না হয়। দিনে দু’বার স্নান জরুরি। শরীরে ঘাম বসতে দেবেন না। বাচ্চাকেও তাই রোজ স্নান করাবেন। গরমে সুতির পোশাক পরুন। ঘর্মাক্ত পোশাক না কেচে দ্বিতীয়বার পরবেন না। তাই নিয়মিত জামাকাপড়, রুমাল, তোয়ালে, বিছানার চাদর কাচবেন। আর এই রোগটি কারও মধ্যে দেখা দিলে তার ব্যবহৃত কোনও জিনিস কোনও ভাবেই ব্যবহার করবেন না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement