বিবাহবিচ্ছেদে দিতে হতে পারে পোষ্যের খোরপোশ।
বিবাহবিচ্ছেদের দিকে এগোচ্ছেন সৌমিতা সরকার এবং গৌরব রায়। ৪ বছরের বিয়ে ভেঙে ফেলে নতুন জীবনের দিকে এগোনোর কথা ভাবছেন দু’জনেই। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে ২ বছরের গাবলুকে নিয়ে। গাবলু গোল্ডেন রিট্রিভার জাতের সারমেয়। কুকুর হলেও সে দু’জনেরই সন্তানের মতো। এই বিবাহবিচ্ছেদে সে কার হাতে পড়বে, এবং তার খরচখরচার ভার দু’জনের কে, কী ভাবে বহন করবেন, তা নিয়ে বিরাট জটিলতা দু’পক্ষেই। নাস্তানাবুদ দু’পক্ষের আইনজীবীও।
এটা একেবারেই ব্যতিক্রমী কোনও ঘটনা নয়। বরং হালে নাগরিক জীবনে এমন উদাহরণ ভুরি ভুরি। বিবাহবিচ্ছেদের সময়ে পোষ্যকে নিয়ে চলছে টানাটানি। শুধু তা-ই নয়, পোষ্যের খোরপোশের প্রশ্নও উঠে আসছে বহু মামলার ক্ষেত্রে। যদিও আইনে বিবাহবিচ্ছেদের সময়ে পোষ্যের খোরপোশের বিষয়টি নিয়ে এখনও স্পষ্ট করে কোনও উল্লেখ নেই বলেই জানাচ্ছেন আইনজীবীরা। কিন্তু সহমত-নির্ভর বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে এক তরফ অন্যের থেকে পোষ্যর খোরপোশের বিষয়টা নিশ্চিত হতে চাইছে— এমন উদাহরণ এখন অসংখ্য।
কেন এমন ঘটনা বাড়ছে? হালে বিয়ে ভেঙেছে বেসরকারি অফিসে চাকুরিরতা অরুণিমা গুহের। অরুণিমার কথায়, তাঁদের ৪ বছরের একটি ল্যাব্রাডর কুকুর রয়েছে। ‘‘বিষয়টা যদি শুধু খাওয়া বা থাকার হত, তা হলে আমাদের দু’জনের যে কেউ-ই সেটা চালিয়ে নিয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু আমাদের পোষ্য গত ৪ বছর ধরে যে জীবন কাটিয়েছে, সেটা ওর থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার অধিকার আমাদের নেই। আমাদের সমস্যার দায় ও কেন নেবে? তাই ওর আগামী দিনের খরচটা আমরা ভাগাভাগি করে নিয়েছি’’, বলছেন তিনি।
ঠিক এই খরচ ভাগাভাগির হিসাবটাই অনেকে আদালতে সেরে নিতে চাইছেন। এতে আর ভবিষ্যতে জটিলতা থাকে না। কী কী ভাবে খরচের হিসাব হয়? হালে এমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন এক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী অপরাজিত বসুও। তাঁর কথায়, ‘‘মোটামুটি ভাল মানের খাবার, চিকিৎসকের খরচ, বাৎসরিক টিকার খরচ, বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার খরচ, আর দেখভালের জন্য যাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, তাঁর বেতন— আগামী ১০ বছরের জন্য এগুলোর মোট খরচ হিসাব করে, তাকে দু’ভাগ করে নিয়েছি আমরা।’’
হালে এই ভাবেই ভাগাভাগি হয়ে যাচ্ছে পোষ্যের দায়িত্ব। তবে অেকেরই মত, ভবিষ্যতে এই নিয়ে আইনকেও যদি স্পষ্ট করা যায়, তা হলে পোষ্যদের জীবনটা হয়তো কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে।