(বাঁ দিকে) ‘এক দেশ এক ভোট’ আইন প্রণয়নের জন্য বিল পেশ হয়েছে লোকসভায়। —ফাইল চিত্র। বুধবার যৌথ সংসদীয় কমিটির বৈঠক শেষে ট্রলি হাতে আপ নেতা সঞ্জয় সিংহ (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
‘এক দেশ এক ভোট’ নিয়ে সংসদের যৌথ কমিটির বৈঠকে উঠে এল শাসক এবং বিরোধীদের যুক্তি-পাল্টা যুক্তি। বৈঠক শেষে সকল সাংসদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে বিরাট একটি ট্রলিব্যাগ। এই আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে যে কমিটি গঠন করেছিল, তার রিপোর্ট রয়েছে ওই ট্রলিব্যাগে। সূত্রের খবর, ১৮ হাজার পাতার ওই রিপোর্ট পড়তে দেওয়া হয়েছে সাংসদদের। রিপোর্টটি তৈরির পর গত মার্চ মাসে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল।
‘এক দেশ এক ভোট’ আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে যে দু’টি বিল লোকসভায় পেশ করা হয়েছে, সেগুলির খসড়া নিয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে সংসদের যৌথ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। বুধবার ছিল সেই কমিটির প্রথম বৈঠক। কংগ্রেসের প্রিয়ঙ্কা গান্ধী থেকে শুরু করে আপের সঞ্জয় সিংহ, তৃণমূলের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়রা ওই বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। সংসদের উভয়কক্ষ থেকে মোট ৩৯ জন (লোকসভার ২৭ জন এবং রাজ্যসভার ১২ জন) সদস্য বৈঠকে ছিলেন। রাজস্থানের পালি লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রেমপ্রকাশ চৌধরি (পিপি নামে যিনি পরিচিত) ওই কমিটির চেয়ারম্যান। ‘এক দেশ এক ভোট’ আইন প্রণয়ন করা হলে কী কী সুবিধা হতে পারে, কী কী অসুবিধা রয়েছে, সে সব নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
‘এক দেশ এক ভোট’ আইন প্রণয়নের পক্ষে কেন্দ্রের শাসকদলের প্রধান যুক্তি হল সাশ্রয়। একসঙ্গে সারা দেশে ভোট হলে নির্বাচনের খরচ অনেকটাই বাঁচবে বলে দাবি করছেন বিজেপি সাংসদেরা। বুধবারের বৈঠকে এর বিপক্ষে একাধিক যুক্তি দিয়েছেন বিরোধী নেতারা। তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ জানান, এই আইন প্রয়োগ করা হলে দেশের মানুষের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব হবে। কারণ প্রতি রাজ্যে মানুষ ভোট দিয়ে পাঁচ বছরের জন্য সরকার নির্বাচন করেন। একসঙ্গে সারা দেশে ভোট করাতে হলে একাধিক রাজ্যে সময়ের আগেই সরকার ভেঙে দিতে হবে। কল্যাণের প্রশ্ন, ‘‘এক দেশ এক ভোটের মাধ্যমে কেন্দ্র নির্বাচনের খরচ কমাতে চাইছে? না কি নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার কাটছাঁট করতে চাইছে?’’
এ ছাড়াও, ‘এক দেশ এক ভোট’ সময়সাপেক্ষ হবে বলে দাবি করেছেন কল্যাণ। বৈঠকে তিনি জানান, এই প্রক্রিয়ায় ভোটদান পর্ব অনেক বেশি সময়সাপেক্ষ হবে। দিনরাত মানুষকে লাইনে দাঁড়াতে হতে পারে। যদিও কল্যাণের এই বক্তব্যের পাল্টা যুক্তি হিসাবে বিজেপি সাংসদেরা উপনির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। ভোটকক্ষে একসঙ্গে একাধিক টেবিল রেখে নির্বাচনের বন্দোবস্ত করা যেতে পারে বলে তাঁদের মত। সে ক্ষেত্রে সময় কিছুটা বাঁচবে।
ইভিএম সমস্যার দিকে আলোকপাত করেন কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়ঙ্কা। ‘এক দেশ এক ভোট’ আইন হিসাবে চালু হলে নির্বাচনে প্রচুর সংখ্যক ইভিএম প্রয়োজন হবে। যা গোটা প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলবে বলে মত বিরোধীদের। বুধবারের বৈঠকে আপ, ডিএমকে, কংগ্রেস, তৃণমূল, জেএমএমের মতো বিরোধী দলগুলি এক সুরে জানিয়েছে, ‘এক দেশ এক ভোট’ আসলে সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করার একটি প্রয়াসমাত্র।