তিনি শরীরে পুরুষ, কিন্তু মনে নারী। ছবি: সংগৃহীত।
ছোট থেকেই নারীর বেশ তাঁর প্রিয়। মা, দিদির মতোই সাজগোজ করার বায়না করতেন। সেই বায়না মেটাতে দিদি মাঝেমাঝে সাজিয়েও দিতেন। তবে এ সব বায়না একটা বয়স পর্যন্তই মেনে নেওয়া হত। শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পা দিতেই এমন বায়না করলেই জুটত চোখরাঙানি। তত দিনে নিজে বুঝে গিয়েছেন, তিনি শরীরে পুরুষ, কিন্তু মনে নারী। মন জুড়ে নারীসত্তা বিরাজ করছে। লিঙ্গপরিচয় থেকে বেরিয়ে তিনি মনের ডাকে সাড়া দিতে চাইছেন। মনের কথাই শুনেছেন শেষ পর্যন্ত। সে দিনের সুমন মণ্ডল থেকে অন্বেষা হয়ে উঠেছে। এই রপান্তরের পথে ওঠার পথে সইতে হয়েছে বহু অপমান, তিরস্কার। পরিবারকেও পাশে পাননি। এসেছে বহু ঘাত-প্রতিঘাত। তবু মাটি কামড়ে পড়ে থেকেছেন।
অন্বেষার বাড়ি পুরুলিয়ার আদ্রা শহরে। তিনি পেশায় একজন গায়িকা। বাউল এবং লোকসঙ্গীত গান অন্বেষা। মূলত স্টেজ শো করেন তিনি। তবে সম্প্রতি স্টার জলসার একটি সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগী হিসাবে দেখা গিয়েছে তাঁকে। তার পর থেকেই দর্শকমহলে বেশ পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। তবে এই সাফল্য সহজে আসেনি। পরিশ্রম করতে হয়েছে। অস্ত্রোপচারের পর অন্বেষার হাতে কোনও টাকাপয়সা ছিল না। অনুষ্ঠানে গান গেয়েই নিজের খরচ চালাতেন তিনি। গত বছর ডিসেম্বর মাসে হঠাৎই সুযোগ আসে বড় প্ল্যাটফর্মে গান গাওয়ার। চ্যানেল থেকে ডাক পান তিনি। তার পর কিছুটা হলেও বদলে যায় জীবন।
মহানগরও যে খুব সহজ ভাবে অন্বেষাকে মেনে নিয়েছে, এমন নয়। ছবি: সংগৃহীত।
মহানগরও যে খুব সহজ ভাবে অন্বেষাকে মেনে নিয়েছে, এমন নয়। কলকাতায় এসেও শুনতে হয়েছে কটাক্ষ। আবার অনেকেই সাহায্যের হাতও বাড়িয়ে দিয়েছেন অন্বেষার দিকে। অন্বেষার কথায়, ‘‘মন থেকে চাইলে তাঁকে আটকানো যায় না। জীবনে বহু ঝড়ঝাপটা আসবে। তবে গানের উপর ভরসা রেখেই এগিয়ে যাব।’’