শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি ছিল বিশ্ব ক্যানসার দিবস। প্রতীকী চিত্র।
হাসপাতালের শয্যায় শোয়া সত্তরোর্ধ্বা বৃদ্ধার জীবনীশক্তি লজ্জা দেবে তরুণ প্রজন্মকেও। না-হলে ক’জন ক্যানসার আক্রান্ত পারবেন বাইপ্যাপ নেওয়ার ফাঁকেও হোয়াটসঅ্যাপে জরুরি বার্তা দিতে! শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব ক্যানসার দিবসের অনুষ্ঠানে উঠে এল তাঁর সেই সব পরামর্শের কথা। স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত, সত্তরোর্ধ্বা ‘তরুণী’ সীমারেখা রায়চৌধুরীর কর্কট যখন ফুসফুসে থাবা মারে, তখনও তিনি দমে যান না। কোভিডে যখন দূরত্ব বজায় রাখাই ছিল বেঁচে থাকার উপায়, তখনও তিনি কেমো নেওয়ার ফাঁকে ক্যানসার আক্রান্তদের মনোবল বাড়িয়ে গিয়েছেন।
সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দা রহিমা বিবি। যিনি তথাকথিত অক্ষরের শিক্ষা না পেয়েও রেডিয়োয় স্বাস্থ্যের অনুষ্ঠান শুনে চাপা আতঙ্ক নিয়ে পৌঁছে যান এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানেই ক্যানসারের চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ রহিমা এ দিন উপস্থিত ছিলেন স্তন ক্যানসার রোগীদের সংগঠন ‘দিশা ফর ক্যানসার’-এর অনুষ্ঠানে। সংগঠনের তরফে চিকিৎসক অগ্নিমিতা গিরি সরকার জানান, বিশ্ব ক্যানসার দিবস মানে শুধু সচেতনতার প্রচারই নয়, এই রোগ নিয়ে যে এগিয়ে যাওয়া যায়, তারই বার্তা দেওয়া অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্যেরই দৃষ্টান্ত সৌমীপর্ণা মিত্র। ২০১৯ সালে রক্তের ক্যানসার ধরা পড়ে তাঁর। রোগের কাছে না-হেরে এ দিনের অনুষ্ঠান-মঞ্চ নেচে মাতালেন তিনি।
বিশেষ এই দিনে ক্যানসারজয়ী, চিকিৎসক এবং এই রোগ নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে মেডিকা হাসপাতাল এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। যেখানে ক্যানসারজয়ীরা লড়াইয়ের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিদের বক্তব্যে উঠে এল, চিকিৎসকদের আরও সহমর্মী হওয়ার আর্জি। অনুষ্ঠানে ছিলেন হাসপাতালের ক্যানসার বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সৌরভ দত্ত এবং ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়। হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর উদয়ন লাহিড়ী বলেন, ‘‘রাজ্যে সরকারি ও বেসরকারি পরিকাঠামোয় ক্যানসারের যে উন্নত চিকিৎসা মিলছে, তার কারণ স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের রূপায়ণ। এর জন্য ধন্যবাদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।’’
জেলায় কিংবা গ্রামাঞ্চলে ম্যামোগ্রাফি পরীক্ষার সুবিধা পৌঁছে দিতে এ দিনই ভ্রাম্যমাণ ম্যামোগ্রাফি ইউনিট চালু করল চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট (সিএনসিআই)। শনিবার সিএনসিআই-এর রাজারহাট ক্যাম্পাসে সেটির উদ্বোধন করেন এনকেডিএ-র চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন। ছিলেন হাসপাতালের অধিকর্তা, চিকিৎসক জয়ন্ত চক্রবর্তী। সুপার শঙ্কর সেনগুপ্ত জানান, দিনে অন্তত ২০টি স্তন ক্যানসার নির্ণয় করা যাবে। জরায়ুমুখের ক্যানসার, মুখের ক্যানসারের স্ক্রিনিংও হবে শিবিরে।
ক্যানসারের চিকিৎসায় খরচ বড় বাধা। আশার কথা শোনা গেল এ দিন সুরক্ষা ডায়াগনস্টিক আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে। সংস্থার অধিকর্তা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘কী ভাবে অত্যন্ত কম খরচে ক্যানসারের সামগ্রিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব, সেটিই তুলে ধরতে চাইছি।’’ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা ওই সংস্থার ৫৬টি কেন্দ্রে শুরু হচ্ছে ক্যানসারের চিকিৎসা।