—প্রতীকী ছবি।
বাসের ভিতর হঠাৎই ছুরি নিয়ে কন্ডাক্টরকে কোপাতে শুরু করে এক ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র। তার পরে নেমে গিয়ে ছুটে ঢুকে পড়ে একটি কলেজে। সেখান থেকে একটি ভিডিয়ো বানায়। তাতে দাবি করে, ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দেওয়ার প্রতিশোধ নিয়েছে। ভিডিয়োয় তাকে অস্ত্র আস্ফালন করে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘এইটা দিয়ে মেরেছি। বাঁচবে না। ঠিক মরবে।’’
উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে শুক্রবারের ওই ঘটনায় অভিযুক্ত লরেব হাসমি নামে বছর কুড়ির যুবক গ্রেফতার হয়েছে। অস্ত্র উদ্ধারের সময়ে পুলিশের উপরে হামলা করতে গিয়ে তার পায়ে গুলি লেগেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে, ধৃতের কোনও জঙ্গি-যোগ রয়েছে কি না।
লরেব হাজিগঞ্জ জেলার বাসিন্দা। প্রয়াগরাজের একটি ইঞ্জনিয়ারিং কলেজে বিটেক প্রথম বর্ষের ছাত্র। তার বাবা একটি পোলট্রি ফার্ম চালান। আজ কলেজ কর্তৃপক্ষ লরেবকে সাসপেন্ড করার কথা জানিয়েছেন। ওই কলেজের অধ্যক্ষ এইচ পি শুক্ল জানিয়েছেন, তাঁরা কেউ এমন ঘটনা ঘটতে পারে বলে কখনও ভাবেননি। শিক্ষকেরা ওই ছাত্রকে শান্ত বলেই জানতেন। সে কারও সঙ্গেই কথা বলত না, একা চুপচাপ বসে থাকত। প্রশ্নের উত্তরও দিতে চাইত না।
পুলিশ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সকালে প্রয়াগরাজ সিভিল লাইন থেকে করছনা যাচ্ছিল বিদ্যুৎচালিত বাসটি। কন্ডাক্টর হরিকেশ বিশ্বকর্মার সঙ্গে লরেবের ভাড়া নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন কেউ কেউ। তবে বাসে তার পাশের সিটেই বসা নন্দন যাদব নামে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক যাত্রী তা অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, আচমকাই হরিকেশের উপরে ছুরি নিয়ে চড়াও হয়ে কোপাতে শুরু করে লরেব।
বাসের চালক মঙ্গল যাদব জানান, গোলমালের আওয়াজ পেয়ে তিনি বাস থামিয়ে দিয়েছিলেন। তার পরে দেখেন, কন্ডাক্টরকে কোপাচ্ছে এক যাত্রী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, লরেবের কলেজেরই দুই ছাত্র ওই বাসে ছিলেন। তাঁরা এবং অন্য কয়েক জন তাকে ধরে ফেলেন। কিন্তু লরেবের হাতে ছুরি থাকায় সবাই কিছুটা ঘাবড়ে ছিলেন। সেই সুযোগে বাস থেকে নেমে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত। নন্দন বলেন, ‘‘অধিকাংশ যাত্রীই বাস থেকে নেমে চলে যাচ্ছিলেন। কন্ডাক্টরের ঘাড়ে আর হাতে ক্ষত ছিল। প্রচুর রক্ত ঝরছিল।’’ হরিশ এবং মঙ্গল জানান, একটি ট্যাক্সি করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় বছর চব্বিশের হরিশকে।
পুলিশ কলেজ চত্বরে ঢুকে সেখান থেকে গ্রেফতার করে লরেবকে। পরে অস্ত্র উদ্ধারের সময় লুকিয়ে রাখা পিস্তল থেকে সে গুলি চালিয়ে পালানোর চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। সেই গুলি এক পুলিশ আধিকারিকের গা ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়। পুলিশের পাল্টা গুলি বিদ্ধ হয় অভিযুক্তের পায়ে। তাকেও নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে।
এ দিকে, লরেবের ভিডিয়োয় তাকে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ করে আপত্তিকর কথাবার্তা বলতে শোনা গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নামও নিতে শোনা গিয়েছে। বাসের ভিতর থেকে কারও তোলা অন্য একটি ভিডিয়োয় ধরা পড়েছে লরেবের পালানোর দৃশ্য। প্রয়াগরাজের ডিসিপি অভিনব ত্যাগী বলেছেন, ‘‘অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। আরও তদন্ত হচ্ছে।’’
এ দিকে, শনিবার লরেবের কলেজের পড়ুয়াদের একাংশ কলেজ চত্বরে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের দাবি, অভিভাবকদের অনেকেই এই ঘটনার পরে নিরাপত্তার কথা ভেবে ছেলে-মেয়েদের কলেজে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। হিন্দুত্ববাদী বেশ কিছু সংগঠনও এ দিন ওই কলেজে গিয়ে বিক্ষোভ দেখায়।