উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরে ‘সমাজবাদী বিজয় যাত্রা’য় অখিলেশ যাদব। ছবি পিটিআই।
উদ্বোধনের পরে পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়েকে মঙ্গলবার তাঁর বক্তৃতায় ‘বিকাশের এক্সপ্রেসওয়ে’ বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু স্থানীয়রা বলছেন, এটি এখন নিছক ‘ভোট-রাজনীতির’ এক্সপ্রেসওয়ে।
সুলতানপুর সংলগ্ন এই মহাসড়কের আশপাশের গ্রামবাসীদেরও তো বিশ্রাম নেই! গত কাল দলে দলে এসেছিলেন। ‘জাহাজের’ কারিকুরি দেখার বাড়তি টান ছিল। ফেরার সময় পড়তায় পোষাতে বিরাট বিরাট পোস্টার, হোর্ডিং ছিঁড়ে নিয়ে ফিরেছেন যে যার ঘরে। জানতে চাইলে বলেছেন, শস্য রাখার জন্য চমৎকার ব্যবস্থা! চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে বুধবার একই জায়গায় অখিলেশ যাদবের জনসভাতেও সমান ভিড়। সকালে যাত্রায় বেরিয়ে গাজিপুর থেকে বিজয় রথ এক্সপ্রেসওয়ের বিভিন্ন বিন্দুতে দাঁড়িয়েছে। পথসভায় অখিলেশ বলছেন, সমাজবাদী পার্টির উদ্যোগ চুরি করে প্রচারের কাজে ব্যবহার করছে যোগী আদিত্যনাথ সরকার। এই এক্সপ্রেসওয়ের জন্য বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট পাশ হওয়া, টাকা ধার্য হওয়া সবই হয়েছে অখিলেশের মুখ্যমন্ত্রিত্বের সময়। তাঁর কথায়, “একটা বিরাট পরিবর্তনের ঢেউ আসছে উত্তরপ্রদেশে। বাইশে রাজ্য থেকে ধুয়ে মুছে যাবে বিজেপি।”
এক্সপ্রেসওয়েতে সামরিক বিমানের খেলা দেখানোর বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন কংগ্রেসের অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। তাঁর কথায়, “জেট বিমান এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম রাজ্যের ভোটের ঠিক আগেই ব্যবহার করা দেখে মনে হতে বাধ্য, প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের অপব্যবহার হচ্ছে। এটা ভুললে চলবে না বিজেপি তার ডুবন্ত নৌকাকে ফের ভাসাতে চেষ্টা করছে পূর্বাঞ্চলকে দিয়ে।”
তবে বিরোধীরা দাবি করলেও, যোগীর নৌকা ডুবন্ত, এমনটা মনে করছেন না পথঘাটের মানুষ। “সবাই জানে যোগী সরকার এসপি-বিএসপি-র সময় তৈরি হওয়া পরিকাঠামোগুলিতে নিজেদের নাম বসিয়ে চালাচ্ছে। কিন্তু তা-ও এ বারের কাঁটায় কাঁটায় লড়াইয়ে যোগীজিই কিন্তু এগিয়ে। কেন জানেন? যে ভাবে ভোটারদের দু’ভাগে ভাগ করে দিয়েছেন, হিন্দুরা শেষ পর্যন্ত বিজেপি-র দিকেই থাকবে,” এক্সপ্রেসওয়ের পাশ দিয়ে প্রবল ভিড় কাটাতে কাটাতে বলছেন আজমগড়ের ড্রাইভার সুলেমন অহমেদ। তাঁর বক্তব্য, অখিলেশ যোগীর ফাঁদে পা দিয়ে এখন জিন্নাকে মাঠে নামিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তাতে চিঁড়ে খুব ভিজবে না বলে মনে করেন সুলেমন। তবে এটাও বললেন, “মুসলমানদের মসিহা হয়ে উঠতে চেষ্টা করা আসাদুদ্দিন ওয়েইসি বিশেষ ভোট কাটতে পারবেন না। এখানকার মুসলমানরা এখন অনেক বুদ্ধিমান এবং সচেতন। বিজেপিকে যার হারানোর ক্ষমতা রয়েছে, একজোট হয়ে তাকেই জেলায় জেলায় ভোট দেবেন তাঁরা।”
রাজ্যের মোট ৪০৩টি আসনের মধ্যে ১১৭টির সংগঠন সমীক্ষা করা হয়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন এসপি-র রাষ্ট্রীয় উপাধ্যক্ষ কিরণময় নন্দ। অখিলেশের নির্দেশে গত দু’সপ্তাহ জেলায় জেলায় ঘুরেছেন একদা বাংলার এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ। তাঁর বক্তব্য, “শুধু মুসলমান নয়, সমাজের বিভিন্ন জাতপাত এবং বর্গের কাছ থেকে সাড়া মিলছে। যোগীর অপশাসনে যারা তিতিবিরক্ত, তাঁরা ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না। হয়তো এক্সপ্রেসওয়ের এয়ার শো-তে গিয়ে মানুষ ভিড় করেছেন। কিন্তু প্রতিদিন ছোট ছোট জাতভিত্তিক সংগঠন আমাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। বিএসপি থেকে অনেক নেতা এসপি-তে যোগ দিচ্ছেন।”
তিন দিন লখনউ এবং সুলতানপুর ঘুরে কংগ্রেসের জবরদস্ত কোনও ছবি চোখে পড়ছে না। যদিও দলের অস্তমিত গৌরবকে ধরে রাখার জন্য নতুন কৌশল নিয়েছেন রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। তাঁর চোখ মহিলা ভোটের দিকে। আজ চিত্রকূটে মহিলা কর্মীদের সঙ্গে আলোচনার সময়ে তিনি বলেছেন, “আজকালকার রাজনীতিতে অস্বাভাবিক নিষ্ঠুরতা এবং হিংসা। মন্ত্রীর ছেলে লখিমপুরে খেড়িতে কৃষকদের চাপা দিয়ে দিলেন। সরকার অত্যাচারীদের পাশে। এই হিংসা কমাতে নারীশক্তির আরও বেশি করে রাজনীতিতে আসা প্রয়োজন।” চিত্রকূটের রামঘাটেই বধবার তিনি মহিলা ভোটারদের কাছে পৌঁছনোর জন্য ১০০ দিনের ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ ঘোষণা করলেন। তাঁর প্রচারের নাম, ‘লড়কি হু, লড় সকতি হুঁ।’ সূত্রের খবর, শ’দেড়েক পেশাদার এই প্রচারের জন্য কাজ করছেন। গোলাপি সিলিকন ব্যান্ড এবং আকর্ষণীয় স্টিকার তৈরি হয়েছে। উত্তরপ্রদেশে মহিলাদের উপর হিংসা এবং বাজার আগুনের মতো বিষয়গুলি রাখা হচ্ছে প্রচারে। এই মুহূর্তে রাজ্যে রয়েছেন ৭ কোটি মহিলা ভোটার। গত বিধানসভায় ভোট দিয়েছেন ৪ কোটি মহিলা। এই প্রচারকে জনপ্রিয় করতে মহিলাদের ম্যারাথন করার কথা ভাবা হয়েছে। বিজয়ীদের দেওয়া হবে স্কুটি। মহিলা কলেজ, শপিং মলেও এই প্রচার চালানো হবে।